পিলখানা ট্র্যাজেডি: আজো থামেনি সে কান্না
আজ সেই ভয়াবহ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ইতিহাসের পাতায় বিরল নির্মম হত্যাযজ্ঞের একটি দিন। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। কেবল হত্যাই নয়, অনেকের লাশ ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছিল। গণকবর, লাশ ম্যানহোল ও নর্দমায়ও ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি এই নির্মম ঘটনা ঘটেছিল।
একাত্তরের পর দেশের ইতিহাসে এরচেয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ আর কখনো ঘটেনি। ওইদিন সকালে বিডিআরের বাৎসরিক দরবার শুরুর কিছুক্ষণ পর থেকে শুরু হয় বিদ্রোহী জওয়ানদের তাণ্ডব। আর সেই তান্ডব পরে ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায় ছয় বছর আগে ২০০৯ সালের এই দিনে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদর দফতর পিলখানায় কিছু বিপথগামী জওয়ান বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তাদের বুলেট কেড়ে নেয় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনের প্রাণ। একই স্থানে এত সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুতে কেঁদে ওঠে গোটা জাতি। নারকীয় এ ঘটনার পর বিডিআর পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি)। পাল্টেছে পোশাক-লোগো-পতাকা। পুনর্গঠন করা হয়েছে এই সীমান্তরক্ষী বাহিনী। পরিবর্তন হয়েছে বাহিনীর আইনও। এদিকে বিদ্রোহের সবকটি মামলার বিচার কাজ শেষ হলেও এখনো পিলখানায় সেই মামলার রায় কার্যকর হয়নি।
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সরকারিভাবে এ দিনটিকে ‘পিলখানা হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। এ জন্য দুই দিনব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি পালন করবে বিজিবি। ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতর পিলখানায় বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে শহীদ ব্যক্তিবর্গের স্মরণে ২৫ ফেব্রুয়ারি রবিবার শাহাদাতবার্ষিকী পালিত হবে। কর্মসূচি অনুযায়ী শহীদ ব্যক্তিবর্গের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে পিলখানাসহ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র সকল রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কোরআন, বিজিবির সকল মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানগণ (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক (একত্রে) শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে দলের সিনিয়র পর্যায়ের নেতারা সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এতথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং শায়রুল কবির খান। পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি রবিবার বাদ আসর পিলখানার বীর উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে শহীদ ব্যক্তিবর্গের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এছাড়া স্বরাষ্ট্র সচিব, বিজিবি মহাপরিচালক, শহীদ ব্যক্তিবর্গের নিকটাত্মীয়, পিলখানায় কর্মরত সকল অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্য পদবির সৈনিক ও বেসামরিক কর্মচারীরা অংশ নেবেন।
দেশের অকুতোভয় বীর সেনানীদের এমন বেঘোরে আত্মদানের নৃশংসতম ঘটনার অপূরণীয় ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে তাদের পরিবার। সারা জীবন তাদের বইতে হবে এ শোক।আজো থামেনি সে কান্না।
নির্মম এ হত্যাকা-ে জড়িত অভিযুক্ত ১৫২ জনকে ফাঁসির রায় দেয়া হলেও সেটি এখনো কার্যকর হয়নি। ডেথ রেফারেন্সের শুনানি এখনো চলছে হাইকোর্টে। এছাড়া অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলাগুলো এখনো চলছে বিশেষ আদালতে। এ অবস্থায় নিহতদের স্বজনরা দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন।