পৃথিবীর কেন্দ্রে বৃহদায়তন ধাতব বস্তু

পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ কয়েকটি স্তরে গঠিত। সবচেয়ে গভীরে যে স্তরটি আছে তাকে বলে কেন্দ্রমণ্ডল। কেন্দ্রমণ্ডলের বাইরের পৃষ্ঠের এলাকায় র্পিলাকৃতির বিস্তৃত লোহার কাঠামোর সন্ধান পাওয়া গেছে। বলা যায় এতদিন লুকায়িত ছিল এটি। প্রতি বছর প্রায় ৫১ কিলোমিটার ভ্রমণ করে এই লোহার স্তর। বর্তমানে এটি উত্তর গোলার্ধে অবস্থান করছে এবং ধীরে ধীরে পশ্চিমমুখী হয়ে আলাস্কা ও সাইবেরিয়ার দিকে এগুচ্ছে।
সান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত ‘আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়ন (AGU)-এর বার্ষিক এক সমাবেশে এই ঘোষণা করা হয়। এখানে বলা হয়, লোহার এই স্তর সম্ভবত পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। চৌম্বকক্ষেত্রের এর মধ্যে কিছুটা পরিবর্তনও ঘটছে।

অভ্যন্তরে অবস্থিত এই স্তুটি প্রথম শনাক্ত করা হয় ‘ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সী’র একটি প্রোগ্রামে ব্যবহৃত স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের মানচিত্র তৈরি করার উদ্দেশ্যে এই প্রোগ্রামের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

বর্তমানে লোহার এই স্তর প্রায় ৪২০ কিলোমিটার চওড়া, যা এই গ্রহের প্রায় অর্ধেক পরিধি জুড়ে অবস্থান করছে। ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে এর প্রশস্ততা রহস্যজনকভাবে বেড়েই চলেছে। প্রতি বছরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার করে এটি দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি এতটাই শক্তিশালী চুম্বকে পরিণত হচ্ছে যে পৃথিবীর অন্তঃভাগের কঠিন কেন্দ্রমণ্ডলের আবর্তনকেও প্রভাবিত করছে।

এমনকি এই সর্পিলাকার লোহার স্তর আবিষ্কারের আগেও অর্ধতরল কেন্দ্রভাগে বাইরের স্তর ছিল অবিশ্বাস্যভাবে গতিশীল। বিশাল কেন্দ্রমণ্ডলে অবস্থিত আংশিক গলিত অবস্থায় থাকা এই স্তরটি মোটামুটিভাবে ২ হাজার ৩০০ কিলোমিটার পুরু।
চিত্রঃ তরলিত লোহা। চৌম্বকীয় বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে ঐ স্তর তরলিত লোহা দিয়ে গঠিত।

প্রায় ৭ হাজার ৩০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস উত্তপ্ত এই বহিঃস্থ কেন্দ্র এক ধরনের তাপ ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করে। এর নিজস্ব পরিচলন স্রোত টেকটোনিক প্লেটের গতিকে আরো বাড়িয়ে দেয়। উল্লেখ্য টেকটোনিক প্লেটের চলনের ফলেই মহাদেশীয় সঞ্চরণ সম্পন্ন হয় এবং বিস্তৃত পর্বতমালার সৃষ্টি হয়।

এই গুরুত্বপূর্ণ স্তরটি সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য জানার বাকি আছে। অনেক কিছু বিজ্ঞানীরা এখনো বুঝতে পারছে না। তাই এ সম্পর্কে আরো বেশি গবেষণা ভবিষ্যতে বিজ্ঞানের জানার জগতে নতুন নতুন তথ্য সংযোজন করবে আর সেইসাথে পুরনো অনেক প্রশ্নের জবাব দেবে বলে আশা করা যায়।
by Hasnat Bin Jubayer
জিরো টু ইনফিনিটি
তথ্যসূত্রঃ iflscience.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.