প্রকৃতির ছোঁয়ায় উৎসব প্রস্তুতি

প্রকৃতির ছোঁয়ায় উৎসব প্রস্তুতি

সানজিদা রীপা

উৎসবের দিনটিতে নিজেকে ফুরফুরে আর প্রাণোচ্ছল তো দেখাতেই হবে। তাই চটজলদি সমাধান হিসেবে বাহারি প্রসাধনীর প্রতি না ঝুঁকে আশ্রয় নিন প্রকৃতিতে প্রাপ্ত উপাদানের। রূপচর্চায় এমন উপায় খুঁজে বের করা উচিত, যেগুলো ত্বক ও চুলের যত্ন নেবে পরিবেশের ক্ষতি না করেই। একই সঙ্গে ত্বকের ধরন বুঝে উপকরণ বাছাই করা উচিত বলে মনে করেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক রাহিমা সুলতানা রিতা

 

উৎসব ঘিরে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। নগরজীবনের ব্যস্ত কোলাহল পেরিয়ে ঘরমুখো মানুষ। তার ওপর বাড়তি পাওনা হিসেবে এই রোদ, এই বৃষ্টি। একদিকে ঈদ আনন্দ, অন্যদিকে প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা— সব মিলিয়ে ত্বক হারিয়েছে তার উজ্জ্বলতা, ছাপ পড়েছে ক্লান্তির। কিন্তু উৎসবের দিনটিতে নিজেকে ফুরফুরে আর প্রাণোচ্ছল তো দেখাতেই হবে। তাই চটজলদি সমাধান হিসেবে বাহারি প্রসাধনীর দিকেই ঝুঁকছেন অনেকে। অথচ এসব প্রসাধনীর অধিকাংশই নানা রাসায়নিকে ভরপুর। পেট্রোকেমিক্যাল, সিনথেটিক কেমিক্যাল, অ্যামোনিয়ার মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে এসবে। বেশির ভাগ প্রসাধনী সংরক্ষণ করা হয় প্লাস্টিকের কৌটায়, মাটিতে যা কখনই মেশে না। ফলে ত্বক থেকে শুরু করে আমাদের চারপাশের পরিবেশ, সবকিছুই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই রূপচর্চায় এমন উপায় খুঁজে বের করা উচিত, যেগুলো ত্বক ও চুলের যত্ন নেবে পরিবেশের ক্ষতি না করেই। একই সঙ্গে ত্বকের ধরন বুঝে উপকরণ বাছাই করা উচিত বলে মনে করেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক রাহিমা সুলতানা রিতা।

সাধারণ, শুষ্ক, সেনসেটিভ, তৈলাক্ত কিংবা মিশ্র— বিভিন্ন ত্বকের যত্নটাও ভিন্ন রকম। বাজার থেকে আনা বিভিন্ন রাসায়নিকযুক্ত প্রসাধনী না কিনে, হাতের কাছে থাকা ঘরোয়া উপাদান দিয়েই রূপচর্চা করা সম্ভব। সাধারণ ত্বকের জন্য কাঠবাদাম, দুধ, যব কিংবা আটার গুঁড়ো বেশ ভালো। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য যব আর মিশ্র ত্বকের জন্য মটর ডালের বেসন

বেশ ভালো।

আজকাল বাজারে নানা ধরনের ফলের মধ্যে অ্যাভাকাডো বেশ জনপ্রিয়। ত্বক ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য নিতে পারেন অ্যাভাকাডোর। ফলটি বিদেশী হলেও খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি রূপচর্চায় এর কদরও বেশ। ময়েশ্চারাইজিং আর অ্যান্টি-এজিং হিসেবে এর জুড়ি নেই। সব ধরনের ত্বকে মানিয়ে যায় অনায়াসে। অ্যাভাকাডোর কার্যকারিতা বাড়িয়ে দিতে এর সঙ্গে মিশিয়ে নিন মধু ও নারকেল তেল। শুষ্ক ত্বকের জন্য মাস্কটি এতটাই ভালো যে, ভিক্টোরিয়া বেকহাম কিংবা জেসিকা বিলের মতো তারকারাও এর ভক্ত বনে গেছেন। মাস্কটি বেশিক্ষণ মুখে রাখতে হবে এমনও নয়, মাত্র ১০-১৫ মিনিট। এর মধ্যেই ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল আর প্রাণবন্ত। মাস্কটি মুখে লাগানোর পর অবশিষ্ট যা থাকবে, চাইলে সেটি খেয়ে নিতে পারেন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ক্ষতিকর প্রসাধনীর দ্বারস্থ হতে হবে না আপনাকে।

যাদের মুখে অনেক বেশি ব্রণ আছে এবং ত্বকও শুষ্ক, তাদের জন্য যব মাস্ক অনেক বেশি উপকারী। এর সঙ্গে যদি মধু আর দই মিশিয়ে সপ্তাহে অন্তত তিনদিন ব্যবহার করেন, তাহলে ব্রণ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে সহজে। ১০ মিনিটের জন্য মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কুসুম জলে ধুয়ে ফেলতে হবে। মিশ্রণটি চটজলদি পরিষ্কার করে আপনার ত্বককে করবে কোমল ও মোহনীয়। তবে যাদের বয়স ৩০ ছুঁই ছুঁই কিংবা তার চেয়ে বেশি, তারা ত্বকের যত্নে পাকা পেঁপে ব্যবহার করতে পারেন। এর সঙ্গে মিশিয়ে নিন আধা চামচ মধু, ১/৪ চা চামচ লেবুর রস। চোখ বাদে পুরো মুখে মিশ্রণটি ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিন। অ্যান্টি-এজিং হিসেবে এ মাস্ক বেশ উপকারী।

অন্যদিকে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মোকা মাস্ক বেশ উপকারী। এটি তৈরিতে প্রয়োজন দুই টেবিল চামচ কফি, দুই টেবিল চামচ কোকো পাউডার, মধু ও দই। মুখ ও ঘাড়ে ১০ মিনিটের জন্য রাখলেই হলো। মুখের মলিনতা এবং ক্লান্তিভাব দূর করে আপনাকে করবে প্রাণবন্ত। সব ধরনের ত্বকের জন্য মাস্কটি উপযোগী। বাসায় সহজে রূপচর্চায় এটি হতে পারে আপনার সঙ্গী। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য স্ট্রবেরিও কম যায় না। সৌন্দর্য চর্চায় বাড়তি মাত্রা দিতে এর সঙ্গে যোগ করুন লেবুর রস, দই ও মধু। ব্রণ সমস্যা দূর ও মৃত কোষ পরিষ্কারে মাস্কটি বেশ জনপ্রিয়। এটি ব্যবহার করতে পারেন বাজার থেকে কেনা স্ক্রাবের পরিপূরক হিসেবেও। বাজারে যেসব স্ক্রাব পাওয়া যায়, তার বেশির ভাগেই ব্যবহার করা হয় অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা। মুখ পরিষ্কারে স্ক্রাব ব্যবহার করার পর আখেরে এগুলোর ঠাঁই হয় নদী, নালা, বিভিন্ন জলাশয়ে। এসব প্লাস্টিক কণা মাটির সঙ্গে মেশে না, ফলে পরিবেশ দূষণে একটা বড় ভূমিকা আছে এগুলোর।

রূপচর্চার জগতে বেশ পাকাপোক্ত অবস্থানে আছে গ্রিন টি। এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত পান করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। তেমনি ত্বকের ভেতরে বিভিন্ন সমস্যায় উপকারী বন্ধু হিসেবে কাজ করে গ্রিন টি। গ্রিন টি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের প্যাক তো আছেই, পাশাপাশি টোনার হিসেবেও এটি ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য ফুটন্ত পানির সঙ্গে দুই টেবিল চামচ গ্রিন টি ১০ মিনিটের জন্য জ্বাল দিন। এবার পানীয়টি ঠাণ্ডা করে ফ্রিজে রেখে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ক্লিনজারের পরিবর্তেও এ মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে মিশ্রণটির সঙ্গে চালের গুঁড়ো মিশিয়ে নিলেই হলো।

ফেস ওয়াশ, ক্লিনজার কিংবা স্ক্রাবের বদলে ঘরোয়া এসব উপাদান রূপচর্চায় ব্যবহার করলে ত্বক ও পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। চুলের যত্নেও শ্যাম্পুর বদলে আমলকী, হরীতকী, রিঠা ব্যবহার করা যায়। চুলের কন্ডিশনিংয়ের জন্য ব্যবহার করতে পারেন টক দই, ডিম, কলা। এগুলো মাথার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করার পাশাপাশি চুলকে করে নরম, রেশমি ও উজ্জ্বল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.