প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে যা করা প্রয়োজন – মোহাম্মদ জমির
পঁয়ত্রিশ বছর হতে যাচ্ছে— ওভেন ও নিট দুটি ক্ষেত্রেই তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের জন্য গৌরবের উপলক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এ খাত আমাদের যেমন আশাবাদী করেছে, তেমনি এর ফলেই সৃষ্টি হয়েছে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এ খাতে যুক্ত অর্ধমিলিয়ন কর্মীর অধিকাংশই নারী। এ খাতে কর্মসংস্থান নারীর ক্ষমতায়নকে নানা দিক থেকে প্রণোদিত করেছে। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে নারীর সামাজিক মর্যাদাই শুধু সমুন্নত হয়নি, পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও তাদের গুরুত্ব বেড়েছে বহু গুণে। এভাবে কর্মসংস্থান কন্যাশিশুদের ঘরে বসে না থেকে লেখাপড়ায় উৎসাহিত করছে। এর মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টিও অনেক সহজ হয়েছে।
গত বছর আমরা তৈরি পোশাক খাতেই দেশের সবচেয়ে বেশি রফতানি আয় হতে দেখেছি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসের পর এমন অর্জন নিঃসন্দেহে আশাবাদী হওয়ার মতো। আমরা দেখিয়েছি, কীভাবে বড় ধরনের সংকট থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি উৎপাদন পদ্ধতির উন্নয়নের মাধ্যমে মালিকরা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার ক্ষেত্রে কতটা সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারেন, তাও লক্ষ করার মতো বিষয়।
একের পর এক প্রতিবন্ধকতা আসছে এবং আমরা সেগুলো ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছি। ২০১৫ সালে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত থেকে আমাদের পারফরম্যান্স সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ, যার আর্থিক পরিমাণ ২৬ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। ওই বছরের শেষ কোয়ার্টারে এ শিল্পের রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যা উৎসাহজনক। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০১৫ সালের শেষ মাসে তৈরি পোশাকপণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে ২ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ওই বছরে একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ। ২০১৫ সালে নিটওয়্যার পণ্য রফতানি থেকে এসেছে ১২ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার, যার প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২২ শতাংশ এবং ওভেন গার্মেন্ট রফতানি থেকে এসেছে ১৩ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে তৈরি পোশাক খাত ২৪ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় করেছে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর থেকে সংশ্লিষ্ট পণ্যের রফতানি আয় বাড়ছে এবং মাসভিত্তিক প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১৮ দশমিক ৪ ও ১৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এটিই আমাদের আশার কথা।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বড় বাজার হিসেবে চারটি অঞ্চলকে সম্ভাবনাময় হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যেখানে ডিউটি ও কোটা ফ্রি প্রবেশাধিকার রয়েছে আমাদের পোশাক পণ্যের। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও জাপানের কথাও বলা যায়, যেখানে ক্ষেত্রবিশেষে পণ্যের উপযুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, গত অর্থবছরে আমাদের বৈদেশিক আয় ছিল ৩১ দশমিক ১৯৮ বিলিয়ন ডলার, যার ৮১ দশমিক ৭১ শতাংশ এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকেই। ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (ডব্লিউটিও) সম্প্রতি বিশ্বের তৈরি পোশাক শিল্প খাতের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি পোশাক রফতানিকারক দেশের সার্বিক পরিস্থিতি প্রতিফলিত হয়েছে। সেখানে বৈশ্বিক পরিসরে পোশাক খাতে কিছু উন্নয়ন পরিদৃষ্ট হয়েছে, যার কম্পাউন্ড অ্যানুয়াল গ্রোথ রেট তথা সিএজিআর বের করা হয়েছে ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশের মতো। এক্ষেত্রে ভাবা হচ্ছে, এ খাতের বাজার বেড়ে গিয়ে ৬৫০ বিলিয়ন ডলারে উঠতে পারে। এখন এ বাজারমূল্য ৪৮৩ বিলিয়ন ডলারে রয়েছে। আর এ অনুমান যদি সত্যি হয়, তবে বাংলাদেশকেও এ খাতে তার উৎপাদন ও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে কয়েক গুণ।
৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ রফতানির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ হিসেবে তার অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক হিসেবে ইইউ দাবি করলেও এক্ষেত্রে মূলত ২৮টি দেশ একত্রে এ প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে। বিশ্বের মোট রফতানিতে ২৬ দশমিক ১৯ শতাংশ অধিকার করে রয়েছে ইইউ। অন্যদিকে ২০১৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের তৈরি পোশাক রফতানিতে চীন অধিকার করে রয়েছে ৩৮ দশমিক ৬১ শতাংশ, যার আর্থিক পরিমাণ ১৮৬ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। বৈশ্বিক পূর্বাভাস বলছে, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের কারণে চীনের পোশাক শিল্প বর্তমান প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হবে না। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বিশ্বে পোশাক রফতানিতে তাদের হিস্যা অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়বে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে পোশাক খাতে বাংলাদেশের রফতানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এ দুই বছরের ব্যবধানে ১৯ দশমিক ৭৮ থেকে বেড়ে ২৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ তথ্যের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, ভিয়েতনামের পোশাক রফতানির পরিমাণ ১৪ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন থেকে বেড়ে হয়েছে ১৯ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। একইভাবে ভারত এ খাত থেকে রফতানি আয় ১৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে নিয়ে গেছে ১৭ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারে। তবে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে খুব বেশি না বাড়লেও সেটি ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। এক্ষেত্রে ভিয়েতনাম তাদের বর্তমান প্রবৃদ্ধি ধরে রাখলে ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ তা বাংলাদেশের জন্য মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। পাশাপাশি ২০১৫ সালের পর ১২টি দেশের সঙ্গে নিজেদের ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্টে যুক্ত করে ভিয়েতনাম এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলেছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রফতানিকারক ও উদ্যোক্তারা ২০১৬ সাল নিয়ে বেশ আশাবাদী। তাদের আত্মবিশ্বাসের কারণ বোধ হয় সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ, পরিসংখ্যান ও পর্যালোচনা; যার পেছনে কয়েকটি মূল কারণ কাজ করছে। চীন ক্রমেই অধিক লাভজনক উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন খাতের বিকাশে দৃষ্টি দিচ্ছে। পাশাপাশি দেশটির শ্রমমজুরিও দ্রুততার সঙ্গে বাড়ছে। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে, উচ্চব্যয়ের কারণে চীনের পোশাক রফতানি বাণিজ্য বাংলাদেশে চলে আসবে। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি সুযোগও বটে। কারণ ২০১৫-১৬ সময়ে ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে তুলার দাম। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে ৫ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানি করেছে, গেল বছরের তুলনায় এ প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশের পোশাক কারখানার পরিবেশের পরিবর্তনসহ কিছু পদক্ষেপ ও জরিপ বাংলাদেশের পোশাক খাতের অবকাঠামো-সক্ষমতা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান স্বচ্ছ ধারণা লাভ করেছে।
আন্তর্জাতিক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আস্থা অর্জনে দুটি আন্তর্জাতিক ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার মাত্র ২ শতাংশ বা তারও কম প্রতিষ্ঠান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ যৌথভাবে বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন ও জরিপ চালিয়েছে। এর ফলে কারখানার মালিকরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন। একাধিক কারখানার শ্রম ও কর্মপরিবেশ নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে কাজ করতে সহায়তা জুগিয়েছে গণমাধ্যম। ঝুঁকির সম্মুখীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চিহ্নিতপূর্বক কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে পরামর্শও দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রেতাজোট। এক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর করতে মিলিয়ন ডলার খরচ করে নিরাপত্তাসামগ্রী সরবরাহ করে তাদের বিপদাপন্নতা দূরীকরণে আন্তর্জাতিক ক্রেতাজোট সহায়তা জুগিয়েছে। বাংলাদেশের পোশাক খাতের উন্নয়নে তাদের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
এসব নানা উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশের পোশাক রফতানিকারকরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, নতুন বছর থেকে বহির্বিশ্বে সংশ্লিষ্ট পণ্যের চাহিদা আরো বেড়ে উঠবে। তারা অতিরিক্ত ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি বাড়ানোর প্রত্যাশা করছেন। এক্ষেত্রে আরো ভালো ফলপ্রাপ্তির জন্য সম্ভাবনাময় রফতানি এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কোরিয়া, রাশিয়া, ব্রাজিল, চিলি, চীন, ভারত, তুরস্ক, মেক্সিকো ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
এত উৎসাহের মধ্যেও আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, তৈরি পোশাক খাতে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, যা থেকে উত্তরণ ভিন্ন কোনো বিকল্প নেই। বিশ্লেষকরা যে সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করেছেন, সেগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণে উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমানে তৈরি পোশাকপণ্য রফতানি আয়ের ৭৮ শতাংশ আসে মাত্র ৩০টি পণ্য রফতানি থেকে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রধান পোশাক রফতানি পণ্য হলো— শার্ট, ট্রাউজার, জ্যাকেট, টি-শার্ট ও সোয়েটার।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের এখনই সময়। এক্ষেত্রে পণ্যের অধিক মূল্য সংযোজনমূলক কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি মধ্য ও উচ্চমূল্যের বৈচিত্র্যময় পোশাক (স্যুট, স্পোর্টস ওয়্যার ও অন্তর্বাস) তৈরির দিকে নজর দিতে হবে। আশার বিষয় হলো, বাংলাদেশের সোয়েটার কারখানার মালিকরা সম্প্রতি তাদের কারখানায় জ্যাকুয়ার্ড মেশিন যুক্ত করেছেন, যা থেকে আরো উন্নত ধরনের পোশাক নির্মাণ করা সম্ভব হবে।
নতুন বাজার ধরা ও প্রডাক্ট ডাইভার্সিফিকেশনের জন্য আরো কার্যকর প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের বিশেষায়িত দক্ষ কর্মীবাহিনী স্বল্পতার বাধা অপসারণের দিকে নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অধিক ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সুবিধা নিশ্চিত এবং উদ্যোক্তাদের আরো ঝুঁকি গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে। আমরা শুধু রফতানির বৈচিত্র্যকরণই চাই না, পাশাপাশি অন্তত আরো পাঁচটি রফতানি খাতের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়ে তুলতে চাই। যাতে একটি পণ্য রফতানি আয় কমে গেলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব না পড়ে। আল্লাহ না করুক, এক্ষেত্রে কোনো ধরনের আঘাত দেশের জন্য দুর্যোগ বয়ে আনে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতকে ৫০ বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত করতে হলে এসব সমস্যার সমাধান যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে আমাদেরই করতে হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বৈঠক এক্ষেত্রে আমাদের জন্য কিছুটা আশার সঞ্চার করে। সেখানে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য রুলস অব অরিজিন আরো কিছু সময়ের জন্য উদার করা হয়েছে, যা আমাদের পোশাক শিল্প খাত বিকশিত হতে সহায়তা জোগাবে।
পোশাক খাতের উত্থানের মধ্যে এটা জেনে আরো উৎসাহ জেগেছে যে, বিজিএমইএ সম্প্রতি বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কালুরঘাটে আলাদাভাবে ‘চিটাগং অ্যাপারেল জোন’ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, পোশাক কারখানাগুলোকে আধুনিক সুবিধায় সজ্জিত করা হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাহায্য নিয়ে বিজিএমইএ এ লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করবে। উপরন্তু চট্টগ্রামের অদূরে মীরসরাইয়ে ১৫ হাজার একর জমির ওপর বিজিএমইএ নিজ সদস্যদের জন্য আরেকটি পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরিরও চেষ্টা করছে। নিঃসন্দেহে এগুলো বড় উদ্যোগ। আশা করা হচ্ছে, নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ ইস্যুতে কিছু কারখানা, যারা অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের মূল্যায়ন মান মেটাতে পারিনি বিধায় বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে, তাদের নতুন গঠিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থানান্তর করা যাবে। সুতরাং আমাদের সরকারেরও উচিত আলোচ্য অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনে সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা জোগানো।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ থেকে জানা গেছে, বিদেশিরাও আমাদের পোশাক খাতে কাজ করছেন। মনে হয়, প্রডাকশন ম্যানেজার, মার্চেন্ডাইজার, সিনিয়র সুইং অপারেটর, কাটিং মাস্টার, ডিজাইনার এবং ওয়াশিং এক্সপার্টের মতো জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পদে এসব বিদেশি নাগরিককে নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের বেশির ভাগই আসেন ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও ফিলিপাইন থেকে। আপাতভাবে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনস অথরিটি ও ডিপার্টমেন্ট অব পাসপোর্ট অ্যান্ড ইমিগ্রেশন এখানে তাদের কাজের অনুমতি দেয়ার জন্য দায়ী। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এসব বিদেশি কর্মকর্তা নিজেদের কারিগরি সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের পোশাক খাত ও অন্য কিছু সহযোগী খাত থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার প্রত্যাবসান করেছে।
আমাদের কাছে সঠিক তথ্য নেই যে, কতজন বিদেশি কর্মচারী-কর্মকর্তা বাংলাদেশের পোশাক খাতে কর্মরত। বিষয়টি সামনে আনা খুব জরুরি। এটি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যও সহায়ক হবে। এটাও কারো জানা নেই, আসলে তারা যথাযথভাবে কর পরিশোধ করছেন কিনা। এটাও যাচাই করা দরকার। অধিকন্তু আমাদের তরুণ প্রজন্ম যাতে সেসব বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে হাতের কাজের অভিজ্ঞতা নিতে পারে, সেটা নিশ্চিতেও পোশাক মালিকদের জরুরি পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আমাদের দক্ষ কারিগরি জনশক্তি তৈরি করতে হবে। আর এসব বিদেশি বিশেষজ্ঞের উপস্থিতি এক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করতে পারে। অন্যদিকে তারা আলোচ্য খাত ও অন্যান্য সহযোগী খাতে অধিক বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আনয়নে অনুঘটকের ভূমিকাও পালন করতে পারে। তারা আমাদের মূল্যবান সম্পদ এবং তাদের সেভাবেই বিবেচনা করতে হবে। তবেই তাদের উপস্থিতি থেকে আমরা সর্বোচ্চ রিটার্ন নিশ্চিত করতে পারব। সূত্র: বণিক বার্তা।
লেখক: সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও সাবেক রাষ্ট্রদূত