প্রযুক্তি দিয়ে প্রযুক্তি মোকাবেলা করা হবে
ইন্টারনেটে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর কনটেন্ট ঠেকাতে আইএসএস (ইন্টারনেট সেফটি সল্যুশন) প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপত্তিকর কনটেন্ট ফিল্টার হয়ে দেশে প্রবেশ করবে। এছাড়া ইন্টারনেটে বিশেষ করে বাড়বে দেশের জনগণ এবং ও নারীদের নিরাপত্তা।
টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানায়, আইএসএস এলে দেশের বাইরে থেকে যে কনটেন্টগুলো আসবে তা ফিল্টার করে দেখাবে ফেসবুক। নারীর প্রতি মানহানিকর বা জঙ্গিবাদে উস্কানি- ইত্যাদি কনটেন্টগুলোর সমাধান হবে সহজেই। আইজিডব্লিউ ল্যান্ডিং স্টেশনগুলোতে এ প্রযুক্তি বসবে। এর ফলে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় চলে আসবে ইন্টারনেট। এতোদিন এমন কোনো কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছিল না।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সাময়িক বন্ধ করেছিল সরকার। এখন সেগুলোর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবা হচ্ছে। আইএসএস বসানোর পর আইআইজিতে (আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে) ডিপিআই বসানো হবে। এটিও ফিল্টার করবে আপত্তিকর কনটেন্টগুলো। আইআইজিগুলোতে বিটিআরসি অভিযান চালিয়ে দেখবে, সঠিকভাবে ডিপিআই বসানো হয়েছে কি-না।
এছাড়া ব্যবসা পরিচালনায় লাইসেন্সের শর্ত অনুসারে আইআইজি’র ডিপিআই ক্যাপাসিটি যাচাই করার সাতদিনের মধ্যে উপযুক্ত ক্যাপাসিটির ডিপিআই বসাবার নির্দেশ দেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। আইএসপিগুলোর (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) ডাটাবেজ তৈরি, লাইসেন্সপ্রাপ্তদের ডাটাবেজ তৈরিসহ যারা যত্রতত্র ইন্টারনেট সার্ভিস দিচ্ছেন তাদের বৈধভাবে শর্তপূরণ সাপেক্ষে লাইসেন্স নিয়ে সম্পূর্ণ ডাটাবেজ তৈরি এবং আইএসপিগুলো কাদের সংযোগ দিচ্ছেন তারও তালিকা তৈরি করার জন্য বিটিআরসিকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এজন্য বিটিআরসি’র আইএসপি লাইসেন্স নিয়ে যারা ব্যবসা করছেন, তাদের আবেদন করতে হবে। এতে ডাটাবেইজ মেইনটেন্ট হবে বলে মনে করে টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এতে আপত্তিকর কনটেন্টগুলো আইডেন্টিফাই করতে পারবে বিটিআরসি।
তারানা হালিম জানিয়েছেন, আইএসএস আনা হলে খুব দ্রুত অর্থাৎ তিন সপ্তাহের মধ্যে এ ধাপগুলো পূরণ হবে। এতে বাংলাদেশ নিজেরাই সাইবার নিরাপত্তায় সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে।
সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আইএসএস সংক্রান্ত এক সভায় জানানো হয়েছে, বিএনপি আমলে আপত্তিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে ফেসবুক একটি প্রস্তাব নিয়ে এলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। এতে বর্তমানে ফেসবুকের আপত্তিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে আসছিলো না।
গত ১৮ নভেম্বর শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধীর রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পর অনাকাক্সিখত পরিস্থিতি এড়াতে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমগুলো সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২৩ দিনের মাথায় ১০ ডিসেম্বর ফের খুলে দেওয়া হয় সেগুলো।
আইএসএস সংক্রান্ত সভায় আরও জানানো হয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সাইবার ক্রাইম এবং ইন্টারনেটের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। এ সকল অপরাধ একদিকে যেমন ব্যক্তি পর্যায়ে ঝুঁকির সৃষ্টি করছে, তেমনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রতিও হুমকি সৃষ্টি করছে।
এক সময় দ্রুত ও সস্তা টেলিযোগাযোগ সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ধারণা থাকলেও তা পরিবর্তিত হয়ে এখন সেবা পৌঁছানোর আগে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হচ্ছে। এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে প্রয়োজন সুচিন্তিত এবং টেকসই আইনি, প্রতিষ্ঠানিক, কারিগরি ব্যবস্থা।
সাইবার ক্রাইমকে প্রধানত তিনটি স্তরে ভাগ করা যায়। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, ব্যক্তি পর্যায়ে নাগরিকের বিরুদ্ধে এবং বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে অপরাধ। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানে টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং আইসিটি বিভাগের কারিগরি সহায়তায় মোকাবেলা প্রয়োজন। ব্যক্তি নাগরিকের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে মূলত আইন-শৃক্সখলা রক্ষাকারী বিভাগের আওতায় কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
সংস্থার বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে সংস্থাগুলোকে তাদের সাইবার ক্রাইম নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সংস্থাগুলোর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের পরও অপরাধ সংঘটিত হলে আইন-শৃক্সখলা রক্ষাকারী বিভাগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যেমন: বিমা, ব্যাংক।
সকল ক্ষেত্রেই টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিটিআরসি এবং আইসিটি বিভাগ যথাযথ কারিগরি এবং স্ট্যান্ডার্ড নিরূপণ সহযোগিতা প্রদান করবে বলে আইএসএস’র বৈঠকে জানানো হয়।
টেলিযোগাযোগ বিভাগ আরও জানায়, আইসিটি আইনের অধীনে মূলত সাইবার নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এছাড়া আইসিটি বিভাগ সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করছে।
সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে এ আইনের পাশাপাশি টেলিযোগাযোগ বিভাগের আইএসএস এবং অন্যান্য উদ্যোগ সাড়া দেবে বলে জানায় টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসি জানায়, একটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম হলো আইএসএস। এ ধরনের কার্যক্রম আইন অনুসারে সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন। এ কার্যক্রমের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত থাকবেন, তাদের বাছাই পদ্ধতি এবং নিয়োগ প্রক্রিয়াও অত্যন্ত ত্রুটিমুক্ত হওয়া প্রয়োজন। এ কার্যক্রম পরামর্শকের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে নাকি, প্রকল্প আকারে সম্পাদন করা হবে তা নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের বিষয়। এক্ষেত্রে নামটি সাইবার সিক্যুরিটি কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (এস৩সি) হতে পারে।
আইএসএস’র অধীনে ডাটা মনিটর ও মাসিক প্রতিবেদন তৈরি, আইন-শৃক্সখলা বাহিনীকে সম্পৃক্তকরণ, স্পর্শকাতর ডাটা কোথায় সংরক্ষিত থাকবে তা আলোচনার পাশাপাশি মনিটরিং কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। সেহেতু এটি সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার বলেও মনে করছে টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
বাংলানিউজ অবলম্বনে