
সদ্য প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর ছোট মেয়ে সৈয়দা সাবরিনা শারমিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসে বাবার স্বপ্ন-আকাক্সক্ষার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। এতে তিনি বলেন, ‘আমি যে সত্যিই বাবার ছেলে তা বাবাকে দেখাতে পারলাম না… তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট আমি। কিন্তু বাবা বলতেন আমি নাকি উনার ছেলে। সবার সাথে আমাকে মেয়ে না বলে ছেলে হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতেন। অনেক দায়িত্ব আমাকে পালন করতে বলতেন। যেমন, পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান, দেশব্যাপী সাড়া জাগানো বোনের বিয়ে, দেশ-বিদেশে বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, বাবার সামাজিক ও রাজনৈতিক কাজ, পারিবারিক ব্যবসাসহ অনেক কিছুই আমাকে করতে হতো। সর্বশেষ বাবা অসুস্থ হলে আমি বাবাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই এবং সার্বক্ষণিক বাবার পাশে থেকে চিকিৎসাসহ সব বিষয় দেখাশোনা করি। বাবা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে আইসিইউ থেকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিলেন। নিজের খাবার নিজেই খেতে পারছিলেন। ডাক্তারদের অনেক আশাবাদী করে তুলেছিলেন। আসল ঠিকানায় যাওয়ার আগেরদিন আমাকে বলেন, ‘তুমি আমাকে ভালবাসনা?’ আমি বলি, ‘বাবা, অনেক ভালবাসি তোমাকে। অনেক, অনেক, অনেক।’ বলল, ‘তাহলে আমাকে দেশে নিয়ে যাও। সেখানে প্রিয় মানুষদের কাছে গেলেই আমি সুস্থ হয়ে যাব। দেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের শেষ না করে আমি পৃথিবী ছেড়ে যাবনা।’ একজন রণাঙ্গনের সম্মুখ সৈনিক হিসেবে বাবার স্বপ্ন ছিল এদেশ একদিন স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারমুক্ত হবে। উড়বে না আর তাদের গাড়িতে লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত জাতীয় পতাকা। চেয়েছিলেন দেশে ফিরেই পবিত্র হজ্বে যাবেন। প্রিয় মক্কা আর প্রিয় নবীর রওজা থেকে ফিরেই বাস্তবায়ন করবেন সমাজকল্যাণের নতুন পরিকল্পনা। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মে বাবাকে মহান আল্লাহ্তালা নিয়ে গেলেন। আমি পারলাম না পূর্বের মতো বাবাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে। না বাবা, আমি কিন্তু হারিনি। তুমিতো আল্লাহ কাছেই গিয়েছো। আমি ফিরে এসেছি তোমার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে, তোমার প্রিয় ভালবাসার মানুষগুলোর কাছে। তোমার মতোই নিজেকে উৎসর্গ করবো তাদের কল্যাণে। তোমার প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, ‘তুমিতো বাবা হারিয়েছ। আর আমি হারিয়েছি আমার এক সৎ সাহসী মুজিবসেনাকে, যিনি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষক ও আমার পাহারাদার।’ আমিও কথা দিলাম তোমাকে বাবা, তোমার শেখানো মানবপ্রেম ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, একজন মুজিবসেনা হয়ে তোমার প্রিয় নেত্রীর পাহারাদার হব। জনকল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করে সত্যিই আমি প্রমাণ করব, আমি তোমার ছেলে। আমি জানি, তাতেই তোমার আত্মা শান্তি পাবে। আর আমাকে শক্তি জোগাবে তোমার সারা জীবনের অর্জন সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান আর কোটি মানুষের চোখের জল। ভালো থেকো বাবা। অনেক ভাল। কারণ তোমার অনেক প্রিয় আদর্শের জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু আর শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা তো এখন তোমার কাছেই আছে। যাদের জন্য তুমি নিয়মিতই চোখের জল ফেলতে। আমি জানি বাবা, তুমি বেহেশতে তাদেরই খুঁজে ফিরবে। সেখানেও তুমি নিজেকে বিলিয়ে দিবে বাবা… বাবাগো…।’