‘ফাইনালে ওঠার আনন্দটাই বেশি’

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এক ম্যাচ বাকি থাকতেই শেষ চার নিশ্চিত করেছিল। শীর্ষে থাকা দল হিসেবে গতকাল প্রথম কোয়ালিফায়ারে সুযোগ ছিল হারলেও ফাইনালে যাওয়ার। কিন্তু তার জন্য আরও একটি ম্যাচ খেলেই জিততে হতো তাদের। কিন্তু কোনো সুযোগই নিতে চাননি অধিনায়ক মাশরাফি। সাকিব আল হাসানের রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে সবার আগে নিশ্চিত করেছে ফাইনালে খেলা। তাই সাদামাটা দল নিয়ে ফাইনালে ওঠার আনন্দটাই অধিনায়কের কাছে একটু বেশি। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক বলেন, ‘ফাইনালে ওঠার আনন্দ অবশ্যই অনেক বেশি। যে পর্যায়ের ক্রিকেটই হোক না কেন, পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে সব সময়ই লক্ষ্য থাকে শীর্ষে যাওয়ার। সে হিসেবে খুব ভালো লাগছে। একই সঙ্গে একটা ম্যাচ খেলা মানে শরীরের ওপর চাপ এবং টেনশনও থাকে। মনে হয় এটাই শেষ সুযোগ। যে কারণে আনন্দটা বেশি লাগছে।’ অন্যদিকে দলের জন্য মাশরাফির মন্ত্র ক্রিকেট উপভোগ করা মাঠে বল ও ব্যাট হাতে চনমনে থাকা, তাহলেই দিন শেষ ক্রিকেট জয়ের আনন্দটাই ধরা দেবে।
গতকাল টসে হেরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ব্যাট করতে নেমেছিল। মাশরাফিরা আগেই জানতেন এই উইকেটে ব্যাট করা কঠিন হবে। ধারণা ছিল ১৩০-এর বেশি রান করতে পারলেই প্রতিপক্ষের জন্য জয় পাওয়া কঠিন হবে। কিন্তু ইমরুল কায়েসের অসাধারণ ইনিংসটাই যেন পালটে দিয়েছে সব। সেই সঙ্গে রান পেতে যুদ্ধ করতে থাকা লিটনের রানে ফেরাটাও যেন শাপে বর হয়েছে কুমিল্লার  জন্য। ইমরুল কায়েসকে ধারণা করা হতো শুধুই টেস্ট ব্যাটসম্যান। কিন্তু কায়েস ব্যাট হাতে ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টিতে প্রমাণ করেছেন- যে পারে সে সবই পারে। ৭০ রানের ওপেনিং জুটিতে ইমরুলের অবদান ৪৮ বলে ৬৭ রান। অন্যদিকে লিটন করেছেন ২৮টি রান। এই দুজনের ব্যাটিং নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়  প্রতিটি খেলোয়াড়েরই আলাদা আলাদা স্কিল থাকে। লিটন খুবই সম্ভাবনাময়। যদিও সে এখনও তার স্কিল দেখাতে পারেনি সেভাবে। আর ইমরুল পরীক্ষিত। ওর স্কিল নেই, এটি ভুল কথা। কারণ, আমার মতে ইমরুল এ বছর টেস্টে বাংলাদেশের সেরা রান স্কোরার। অর্থাৎ ও অন্যদের চেয়ে স্কিলফুল। ইমরুলের কাছে এ ধরনের ম্যাচে প্রেসার নেয়া ডাল-ভাতের মতো। কিন্তু লিটন যেহেতু ওর সেরাটা এখনও দেখাতে পারেনি, ওর কাছে হয়তো কঠিন মনে হবে। লিটন বা ইমরুল; সবাইকে বলেছি, আমরা মাঠে নেমে ক্রিকেটটা যদি এনজয় না করি তবে পারফর্ম করা কঠিন। ছোটবেলার পাড়ার ক্রিকেটে কোনো চাপ নিতাম না। সাকিব যেমন, সে কখনো চিন্তা করে না। সামনে যা আসে তা ফেস করে। লিটনের মাথার ভিতর হয়তো অনেক কিছু ঘুরছে। আমার বিশ্বাস একটা দুইটা বড় রান করলেই সে দারুণ কিছু করবে।’
অন্যদিকে নিজেও যেন ক্রিকেটকে ছেলেখেলা হিসেবেই নিয়েছেন মাশরাফি। নানা রকম ইনজুরি নিয়েও মাঠের লড়াইয়ে অপ্রতিরোধ্য তিনি। বল করতে সমস্যা থাকা সত্ত্বে দলের প্রয়োজনে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন। দলের প্রয়োজনে আরেকবার মাঠে  অন্যরূপে দেখা গেল মাশরাফিকে। বড় রানআপ নিয়ে নয়, ছোট ছোট রানআপে বল করলেন। ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রানের বিনিময়ে তুলে নিলেন একটি উইকেটও। নিজের এমন বোলিং নিয়ে বলেন, ‘শর্ট রানআপে বোলিং করাটা কঠিন। শরীরের অন্য জায়গায় চাপ পড়ে। সারা জীবন যেটা করেছি, লং রানআপে বোলিং করলে আমার ছন্দটা ঠিক থাকে।’ ২০১০ সালে ব্যাকপেইন নিয়ে আবাহনীকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন মাশরাফি। আবারও কি ইনজুরি নিয়ে এবারও সে রকম কিছু করতে যাচ্ছেন? কি রহস্য তার এই অগ্রযাত্রার? মাশরাফি এবার সৃষ্টি কর্তাকেই ধন্যবাদ দিলেন। বলেন, ‘জানি না কিভাবে হচ্ছে! আল্লাহর রহমত! আমরা ফাইনাল খেলতে পারছি এটা অনেক বড় স্বস্তি। এ ধরনের টুর্নামেন্টে অনেক  প্রেসার থাকে। বাইরের প্রেসার বেশি থাকে। এখনও তো একটা ম্যাচ বাকি। চ্যাম্পিয়ন তো পরে। তবে ফাইনালে যাওয়ায় এ মুহূর্তে ভালো লাগছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.