ফিরতে ব্যাকুল আশরাফুল, পারবেন তো?

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বিতীয় আসরে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের দায়ে ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন ‘বিস্ময় বালক’ মোহাম্মদ আশরাফুল। ২০১৪ সালের ১৮ জুন থেকে তাঁর উপর আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে এর আগের বছর, ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট থেকে ক্রিকেটে সাময়িক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন আশরাফুল। এরপর গত বছর ট্রাইব্যুনাল তাকে ৮ বছরের জন্য ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা দেন। ফলে প্রায় ৩ বছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বাইরে আছেন সবচেয়ে কম বয়সে টেস্ট সেঞ্চুির করা ‘আশার ফুল’ বলে খ্যাত মোহাম্মদ আশরাফুল। তবে ক্রিকেটে ফিরতে ব্যাকুল আশরাফুল। ক্রিকেটেই তার দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে। সম্প্রতি সিলেটের হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় একটি খাদ্য সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ব্র্যাঞ্চ উদ্বোধন করে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল। এসময় তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেই আগামী আগস্ট মাস হতে আবারো মাঠে ফিরতে পারবো। আমি বাংলাদেশ ক্রিকেটে আরো ১০ থেকে ১৫ বছর খেলতে চাই, যদি আমি সুস্থ থাকি। আমার বড় আশা আগামীতে ক্রিকেটে ফিরে সুস্থভাবে আমার খেলোয়াড়ি জীবনেরে ইতি টানার।’ আশরাফুল কৃতজ্ঞচিত্তে সিলেটের মানুষকেও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘সিলেটে আমার সবচেয়ে বেশী ভক্ত রয়েছেন। সিলেটবাসীর ভালবাসা ও অনুপ্রেরণা আমাকে প্রতিনিয়তই উৎসাহ যুগিয়েছে। তাই আমি সিলেটকে আমার বাড়ি মনে করি।’ ওই অনুষ্ঠানে আশরাফুল ক্রিকেটকেই তার ধ্যানজ্ঞান বলে উল্লেখ করেছেন। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার কথাও বলেছেন। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটকে আমি প্রচ-রকম ভালোবাসি। আমি নিষেধাজ্ঞা মুক্ত হয়ে আগামী আগস্ট মাস থেকে আবারো আপনাদের সামনে ক্রিকেট খেলতে হাজির হব, ইনশাআল্লাহ।’ বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন আশরাফুল। ওই আসরে ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগ ওঠে। আশরাফুলের সঙ্গে অভিযুক্ত হন জাতীয় দলের সাবেক বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক, বাঁহাতি স্পিনার মোশাররফ হোসেন ও পেসার মাহবুবুল আলম, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের চেয়ারম্যান সেলিম চৌধুরী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গৌরব রাওয়াদ এবং ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার ড্যারেন স্টিভেন্সও। ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি থেকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের শুনানি শুরু হয়। পরে ২৬ ফেব্রুয়ারি এক সংক্ষিপ্ত রায়ে আশরাফুল ছাড়া বাকি সবাইকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। ওই বছরের ১৮ জুন আশরাফুলকে নিষিদ্ধ করা হয়। এ ছাড়া একটি অভিযোগে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের ব্যবস্থপনা পরিচালক শিহাব চৌধুরীকে ১০ বছরের জন্য ক্রিকেটে নিষিদ্ধ এবং ২০ লাখ টাকা জরিমানা, ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পরও না জানানোর অভিযোগ শ্রীলঙ্কার কৌশল লুকুয়ারাচ্চিকে ১৮ মাসের জন্য নিষিদ্ধ এবং নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার লু ভিনসেন্টকে ৩৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। আশরাফুল ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হলেও আইসিসি, বিসিবি বা এমসিসি’র শিক্ষা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে অংশ নেয়ার শর্তে ২ বছর শাস্তি রদ হয়। এ ছাড়া আপিল করে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর আরো ৩ বছর শাস্তি কমে আশরাফুলের। ফলে মোট ৩ বছরের শাস্তির মুখে পড়তে হয় তাকে। এই শাস্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ১৩ আগস্ট। এরপরই যেকোনো ধরনের ক্রিকেটে ফেরার পথ উন্মুক্ত হয়ে যাবে আশরাফুলের জন্য। এবং আশরাফুল ফিরতে চান। পারবেন কিনা, তা বলে দেবে সময়ই। তবে আশায় বুক বাঁধতেই পারেন তিনি। চোখের সামনে মোহাম্মদ আমিরের প্রত্যাবর্তন দেখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার প্রত্যয় জাগতেই পারে তার। পাকিস্তানের সেনসেশন পেস বোলার মোহাম্মদ আমির ফিক্সিংয়ের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। তার শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায়, নিজেকে শুধরে নেয়ায় এবং পারফরম্যান্স ভালো থাকায় পাকিস্তানের নির্বাচকরা ফের আমেরকে জাতীয় দলে ডাক দিয়েছেন। আমের ফিরতে পারলে আশরাফুল কেন নয়? তিনিও তো নিজেকে শুধরে নিয়েছেন, বয়সও তার পক্ষে। যদি পারফরম্যান্স ভালো দেখাতে পারেন, তবে ফেরা সম্ভব। প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের এপ্রিল মাসে ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে অভিষেক ঘটে আশরাফুলের। প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকেই ইতিহাস গড়েন তিনি। টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মুরালিধরন, চামিন্দা ভাসদের পিটিয়ে মাত্র ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করে বসেন আশরাফুল। পেছনে ফেলে দেন ১৭ বছর ৭৮ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করা পাকিস্তানের মোশতাক মোহাম্মদকে। লেখক: সাংবাদিক ও ক্রীড়ালেখক। ৈসূত্র: আমার বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.