ফিরে দেখা ভারত-পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি ম্যাচগুলো
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শনিবার মাঠে নামছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। দুই দলের লড়াই মানে টানটান উত্তেজনা। দুই দলের খেলা হলেই ক্রিকেট বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত। শনিবারের ম্যাচকে সামনে রেখে চলছে একই উত্তেজনা। টিকেট নিয়ে কাড়াকাড়ি, চায়ের চুমুকে চুমুকে তর্ক-বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র।
ভারত প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়ায় শনিবারের ম্যাচটি আরও হাইভোল্টেজ ম্যাচে পরিণত হয়েছে। উত্তেজনার মাত্রা দ্বিগুন হয়েছে পাকিস্তান প্রথম ম্যাচ জিতে যাওয়ায়। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পাকিস্তান জিতে গেলে সেমিফাইনালের পথে অনেকটা এগিয়ে যাবে। অন্যদিকে ঘরের মাঠে শিরোপা হারানোর পথে এক পা এগিয়ে যাবে ভারত।
দুই দল এখন পর্যন্ত ১২৭টি ওয়ানডে ম্যাচ খেললেও ২০০৭ থেকে এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে মাত্র ৭টি। ওয়ানডেতে পাকিস্তান (৭২ জয়) দাপট দেখালেও টি-টোয়েন্টিতে ভারতের জয়ের পাল্লা ভারী। ৭ ম্যাচে ভারতের জয় ৫টিতে। পাকিস্তানের মাত্র ১টিতে। ১টি ম্যাচ ফল নির্ধারণ হয়েছে বল আউটে। সে ম্যাচেও জয় পেয়েছিল ভারত। সে হিসেবে ৭টির ৬টিতেই জয় ভারতের।
ভারত-পাকিস্তানের মহারণকে সামনে রেখে রাইজিংবিডি’র ক্রীড়া বিভাগ ভারত-পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি ম্যাচগুলোকে তুলে ধরছে :
২০০৭ সাল, ১৪ সেপ্টেম্বর:
২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে প্রথমবারের মত মুখোমুখি হয় ভারত-পাকিস্তান। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ভারত-পাকিস্তানের লড়াই আলাদা রোমাঞ্চ তৈরী করে। দুই দলও রোমাঞ্চের সবটুকু ম্যাচে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ম্যাচের ফলাফল সবারই জানা। টাই হওয়া ম্যাচ বল আউটে জিতে নেয় ভারত। আগে ব্যাটিং করে ভারত ৯ উইকেটে ১৪১ রান করে। জবাবে পাকিস্তান নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে তুলে নেয় ১৪১ রান। দুই দলের প্রথম অর্ধের লড়াই অমীমাংসিত থাকে। অনফিল্ড আম্পায়াররা বল আউটে ম্যাচ ফল নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়। ভারত জিতে গেলেও ৪ ওভারে ১৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ আসিফ।
২০০৭ সাল, ২৪ সেপ্টেম্বর:
একই বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় ভারত ও পাকিস্তান। ম্যাচে ৫ রানে জয় পায় ভারত। তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ভারত শেষ হাসি হাসলেও ম্যাচের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত বোঝা যাচ্চিল না কার ভাগ্যে জুটছে টি-টোয়েন্টির প্রথম শিরোপা। গৌতম গম্ভীরের ৭৫ রানে ১৫৭ রানের পুঁজি পায় ভারত। ব্যাটিংয়ে ইমরান নাজিরের ঝড়ো ৩৩ রানে লক্ষ্যের পথে ভালোই এগিয়ে যায় পাকিস্তান। কিন্তু ইনিংসের মাঝপথে ভারতীয় বোলারদের দাপটে ম্যাচ হারের শঙ্কা জাগে পাকিস্তানের। কিন্তু শেষ দিকে মিসবাহ-উল-হকের দানবীয় ব্যাটিংয়ে আবারো পাল্লা বদলে যায়। শেষ ওভারে ৬ বলে ১৩ রানের প্রয়োজনে ব্যাটিং করে মিসবাহ প্রথম দুই বলে ব্যবধান ৬য়ে নামিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু তৃতীয় বলে নিজের ভুলে ক্যাচ উঠিয়ে পাকিস্তানের স্বপ্নভঙ্গ করেন মিসবাহ।
২০১২ সাল, ৩০ সেপ্টেম্বর:
৫ বছর পর ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে আবারো মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান। প্রথম দুই ম্যাচের সাফল্য ধরে রেখে তৃতীয় ম্যাচেও জয় পায় ভারত। ৮ উইকেটে জয় তুলে নেন ধোনির দল। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিং করে পাকিস্তান মাত্র ১২৮ রান জমা করে। জবাবে বিরাট কোহলির একক অধিপত্যে ১৭ ওভারেই জয় তুলে নেয় ভারত। ৭৮ রান করে অপরাজিত থাকেন কোহলি।
২০১২ সাল, ২৫ ডিসেম্বর:
২০১২ সালের শেষ দিকে প্রথমবারের মত দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে ভারত-পাকিস্তান। অবশ্য বিশ্বমঞ্চের বাইরে প্রথম ম্যাচে সফল পাকিস্তান। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারতকে ৫ উইকেটে হারায় তারা। আগে ব্যাটিং করে ভারত স্কোরবোর্ডে ১৩৩ রান করে ৯ উইকেট হারিয়ে। জবাবে মোহাম্মদ হাফিজের ৬১ ও শোয়েব মালিকের ৫৭ রানের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে জয় পায় পাকিস্তান।
২০১২ সাল, ২৮ ডিসেম্বর:
পাকিস্তানের জয়ের তিনদিনের ব্যবধানে ঘরের মাঠে প্রতিশোধ নেয় ভারত। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে সিরিজ ড্র করে ভারত। ১১ রানে জয় পায় ভারত। আগে ব্যাটিং করে ভারত ২০ ওভারে ১৯২ রানের বড় পুঁজি পায়। ভারতকে বড় সংগ্রহ এনে দেন যুবরাজ সিং। ৩৬ বলে ৪ চার ও ৭ ছক্কায় ৭২ রান করেন যুবরাজ। জবাবে হাফিজের ৫৫ রানে লক্ষ্যের পথে এগিয়ে গেলেও শেষ হাসিটা হাসে ভারত। অশোক দিন্দার বোলিংয়ে জয় পায় ভারত। ৩৬ রানে ৩ উইকেট নেন ডানহাতি এ পেসার।
২০১৪ সাল, ২১ মার্চ:
ভারত-পাকিস্তানের সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি যুদ্ধ হয়েছিল ঢাকার মিরপুরেই। অনুমিতভাবেই জয় পায় ভারত। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে পাকিস্তানকে নিজেদের সামনে দাঁড়াতে দেয়নি ভারত। আগে ব্যাটিং করে পাকিস্তান মাত্র ৭ উইকেটে ১৩০ রান জমা করে। ৩৩ রান করেন সর্বোচ্চ উমর আকমল। জবাবে বিরাট কোহলির ৩৬, সুরেশ রায়নার ৩৫ ও শেখর ধাওয়ানের ৩০ রানে ৭ উইকেট হাতে রেখে জয় পায় ভারত।
২০১৬ সাল, ২৭ ফেব্রুয়ারি:
মোহাম্মদ আমিরের বোলিং না বিরাট কোহলির ব্যাটিং। কে জয়ী? পাকিস্তান-ভারত ম্যাচ ছাপিয়ে মিরপুরে সেদিন শুধু ছিল এদুজনের লড়াই। ভারত ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতলেও আমিরকেও জয়ী ঘোষণা করতে হত! মাত্র ৮৪ রানের টার্গেট দিয়ে আমির যেভাবে বোলিং করেন তা মন ভরিয়ে দেয় যেকোন ভারতীয়দের। ৮৪ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে আমিরের প্রথম দুই ওভারের বোলিং স্পেল ছিল এরকম, ২-০-৩-৩। তার দূর্দান্ত বোলিংয়ে রোহিত শর্মা (০), অজিঙ্কা রাহানে (০) ও সুরেশ রায়না (১) সাজঘরে। ধারণা করা হচ্ছিল যে আমিরের বোলিংয়ে অন্তত পাকিস্তান জিতে যাবে। কিন্তু তাদের ধারণা ভুল করার জন্যে ক্রিজে তখনও টিকে ছিলেন বিরাট কোহলি। বিশ্বের অন্যতম সেরা এ ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও যেভাবে টেমপাররেমন্ট ও ক্লাসের পরিচয় দিয়েছেন তা শুধু মন জয় করেনি, চোখও জুড়িয়ে দিয়েছে। তৃতীয় উইকেট হারানোর পর কোহলি-যুবরাজ স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৬৮ রান। যেখানেই জয় পায় ভারত।