সময় নিয়ে অনেক দার্শনিক বক্তব্য আছে, কিন্তু সময়ের বড় দায় হচ্ছে তাকে অর্থময় কাজে লাগানো। আধুনিক জীবনে মানুষ অর্থ দিয়ে সময়কে কাজে জন্য কিনে নিচ্ছে, আরো অর্থময় করে তোলার জন্য। তার জন্য ব্যবহার করছে অনেক ডিভাইস। কম্পিউটার, লেপটপ, প্যাড, ট্যাব, মোবাইল সহ নানা মাধ্যম। কিন্তু তারও সীমাবদ্ধতা আছে। প্রয়োজন মতো চার্জ থাকে না, তার জন্য বিকল্প পাওয়ার ব্যাংক ম্যানটেইন প্রয়োজন হয়। অনেক সময় মনে থাকে না, তার জন্য বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। বিশেষ করে আধুনিক নাগরিক জীবনে যানজট একটি চরম বিড়ম্বনা ও অনিবার্য প্রসঙ্গ, যাকে এড়িয়ে চলা অসম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যতই উড়াল সেতু হোক নাগরিক জীবন থেকে যানজটকে এড়ি চলা সম্ভব হচ্ছে না। অপচয় হচ্ছে লক্ষ লক্ষ কর্মময় সময়। রাজধানী ঢাকাতে সচিবালয়, আদালত, সংসদ, থেকে শুরু করে দেশে গুরুত্বপূর্ণ সব অবস্থান হওয়াতে এর একটি একটি মুহুর্ত কতো মূল্যবান, তা মফস্বল থেকে কর্মে আটকে না থাকলে কেউ বুঝবে না। তার জন্য এরশাদ আমলে উপজেলা কনসেপ্ট টা এসেছি, সব কিছু বিকেন্দ্রীকরণ করার লক্ষে। শেষ পর্যন্ত তা উপজ্বালাতে পরিণত হয়। না আমি তা নিয়ে ভাবছি না।
আমি বলছি বই নিয়ে। এখন সময় আধুনিক মানুষের এ বিড়ম্বনা কে কাজে লাগানো নিয়ে। আধুনিক ডিভাইজের আসক্তির কারণে তরুণ প্রজন্মের বইপড়ার ঝোক নেই বললে চলে। এর সাথে সোস্যাল মিডিয়ার নামে আত্মমুগ্ধতায় বুদ। সামাজিক বোধ তৈরী কাঙ্খিত হাড়ে হচ্ছে না। বই পড়বে, তাও না। কারণ রঙের পৃথিবীতে রাঙা হওয়াই স্বাভাবিক। এছাড়া বই কিনতেও কড়ি লাগে। সব কিছুর মতো বইও দুর্মূল্য। হ্যা, এখানেই আমার প্রস্তবনা সৃজনশীল পুস্তক ব্যবসায়ীদের কাছে। যারা শহরে গাড়ি ওয়ালা, আপনারা তাদের টার্গেট করুন। বই কিনতে টাকা তাদের আছে। এছাড়া পুরো বাংলাদেশে প্রাইভেট কার ওয়ালাও নেহায়েত কম নয়।২০১৩ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় বিআরটিসির শুধু রাজধানীতে নিবন্ধিত প্রাইভেট কারের সংখ্যা ১৮২২৪৭টি, আর সারা দেশের পরিসংখ্যানটি নাইবা নিলাম। এদের প্রতিদিন যানজটে পড়ে প্রতিদিন কর্মময় ঘন্টা অপচয় হচ্ছে দুই হতে চার ঘন্টা। এর কী কোনো মূল্য নেই? যানজটের সময়টা যেন তারা সময়টাকে কাজে লাগাতে পাড়েন, এ জন্য ভাবুন। মোবাইল ট্যাব দিয়ে কতক্ষণ চলে। ব্যাটারীর ব্যাকআপও থাকে না।
জীবনটা যন্ত্রনির্ভর না করে, যানজটের সময়টা বই নির্ভর করার প্রচার প্রোপাগান্ডা চালান। প্রকাশ করুন পরিবহন বান্ধব বই। পকেটে রাখা যায় এমন বই পৃথিবীব্যাপী আছে। যা পেঙ্গুইন সাইজ হিসেবে পরিচিত। যা পকেটে কিংবা গাড়ীতে রেখে পড়া যাবে। তেমন বই প্রকাশের উদ্যোগ নিন। দামও কম হবে, বিক্রয়ও বৃদ্ধি পাবে। আর বাংলাদেশে খুব কম বই ৫০০ কিংবা ১০০০কপি উপরে ছাপা হয়। তাও আবার চলে না।আমাদের পুস্তক ব্যাবসা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। সম্মিলিত ভাবে ব্যাবসায়ি সমিতি উদ্যোগ না নিলে পুরো প্রোপাগান্ডা টা জমবে না। এখন থেকে সমস্ত পুস্তক ব্যাবসায়িরা যদি সৃজনশীল সমস্ত বই পেঙ্গুইন সাইজে প্রকাশ করার উদ্যোগ নেন, তা জাতীয় বই আন্দোলনে পরিণত হবে। আমাদের প্রকাশনা শিল্প প্রান পাবে। এ অবক্ষয়ি সমাজে বিবেক সম্পন্ন লোক তৈরী হবে। যেভাবে শহর মফসলে বইয়ের দোকানগুলো গুটিয়ে কাপড় ও ফুচকার দোকান হচ্ছে, শাহবাগে যেভাবে বুটিকসের দোকানের সংখ্যা বাড়ছে, একটি বাতিঘর ও আজিজসুপারের ক’য়েকটি বইয়ের দোকান দিয়ে কী জাতীয় মননের চর্চা হবে? নিজের পথ নিজেদের রচনা করতে হয়। কেউ কাউকে পথ করে দেয় না। সময় থাকতে ভাবুন।