বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভিডিও গেম এখন প্লে স্টোরে

ঘটনাস্থল বাংলাদেশের বরিশাল। প্রেক্ষাপট উনিশশো একাত্তর সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ। ঘটনার নায়ক পূর্ববাংলার একদল গেরিলা যোদ্ধা। আর শত্রুপক্ষে রয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।

‘শামসু বাহিনী’ বলে পরিচিত গেরিলা যোদ্ধাদের দলটি বন্দুক, মর্টার ও গ্রেনেড ব্যাবহার করে একের পর এক নিধন করছে পাকিস্তানি সৈন্যদের। মাঝে মাঝে সোল্লাসে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিচ্ছেন তারা।

এই হল সংক্ষেপে ‘হিরোজ অব সেভেন্টি ওয়ান’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে উপজীব্য করে প্রথম অ্যান্ড্রয়েড চালিত ভিডিও গেম।

গেমটি তৈরি করেছেন ঢাকার পোর্টব্লিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একদল তরুণ গেম নির্মাতা।

তাদের সাথে কথা বলতে পোর্টব্লিসের কার্যালয়ে গিয়েছিলাম আমি। গুগল প্লে স্টোরে মুক্তি পাবার আগেই সেখানে বসে গেমটি খেলবার সুযোগ পেয়ে যাই।

হিরোজ অব সেভেন্টি ওয়ান একটি ‘থার্ড পার্সন শুটিং গেম’। অর্থাৎ খেলার মূল চরিত্রের ভূমিকায় থাকবেন খেলোয়াড়। মোবাইল ফোনের টাচ প্যাডে আঙুল চালিয়ে সেই চরিত্রটিকে নিয়ন্ত্রণ করবেন তিনি।

Image 
এন্ড্রয়েড চালিত মোবাইল ফোনে আপাতত গেমটি খেলা যাবে। আইওএস চালিত অ্যাপল ফোন এবং উইন্ডোজ ফোনে গেমটি খেলতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছুদিন।

মূল চরিত্রটি একজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ‘শামসু বাহিনী’র সদস্য। তার গুলিতে একের পর এক নিহত হবে পাকিস্তানি সদস্য।

এভাবে পাকিস্তানী সৈন্যদের প্রতিটি হামলা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে একেকটি লেভেল বা ধাপ। প্রাথমিক পর্যায়ে মোট ষোলটি ধাপ রয়েছে।

নির্মাতা দলের নেতা মাশা মুস্তাকিম বলছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ষোলটি ধাপ তৈরি করা হলেও গেমটি যদি গ্রহণযোগ্যতা পায় এবং জনপ্রিয় হয় তাহলে ভবিষ্যতে নতুন নতুন ধাপ তৈরির ইচ্ছে রয়েছে তাদের।

গেমটির চিত্রনাট্যকার ওমর রশিদ চৌধুরী বলছেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধের নয় নম্বর সেক্টর বরিশালকে ঘটনাস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছেন। শনিরচর নামে যে জায়গাটিতে যুদ্ধটি হচ্ছে সেটি একটি কাল্পনিক জায়গা।

ঘটনা এবং চরিত্রগুলোও কাল্পনিক। যদিও মি. চৌধুরী বলছেন, শামসু বাহিনীর ধারণাটি তিনি নিয়েছেন ১৯৭১ সালের কাদেরিয়া বাহিনী ও ক্র্যাক প্লাটুন থেকে।

‘প্রথমে বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদকে নায়ক করে গল্প সাজানোর ইচ্ছে ছিল আমাদের। ইতিহাসের বর্ণনা করতে গিয়ে ভুল হতে পারে এবং তাতে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ভুলভাবে উপস্থাপিত হতে পারে এই আশঙ্কা থেকে আমরা কাল্পনিক চরিত্র এবং ঘটনাস্থল তৈরি করেছি’।

গেমের কাহিনীতে দেখা যাচ্ছে, শনিরচরের একটি গুরুত্বপূর্ণ পাকিস্তানি ক্যাম্প দখল করে নিয়েছে শামসু বাহিনী।

পরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ক্যাম্পটি পুনর্দখল করতে গেলে তুমুল যুদ্ধ বেধে গিয়েছে।

বাংলাদেশে গেম তৈরির খাতটি ততটা বড় নয়। ছোটখাটো গেম অনেক সময় তৈরি হলেও এখন পর্যন্ত কোনটিকে সফল বলা যাচ্ছে না।

এরকম প্রেক্ষাপটে ‘হিরোজ অব সেভেন্টি ওয়ান’ গেমটি আসার খবর দেশটির তরুণ গেমাররা কিভাবে দেখছেন?

তরুণ প্রকৌশলী তাসিন অনন নিজেকে একজন ‘গেম ফ্রিক’ বলে বর্ণনা করছিলেন।

বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব যুদ্ধের গেম খেলি, সেগুলোর কাহিনী ও প্রেক্ষাপট সবই বিদেশী। এখন যদি দেশীয় প্রেক্ষাপটে একটি গেম আসে তাহলে বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমার খুবই ভাল লাগবে’।

গ্রাফিক্স, সাউন্ড ইফেক্ট এবং কন্ট্রোলের বিবেচনায় হিরোজ অব সেভেন্টি ওয়ানকে বিশ্বমানের গেমের কাতারে ফেলা যায়।

যদিও সবগুলো লেভেলের দৃশ্যপটই একই ঘটনাস্থলের।

এখন ‘হিরোজ অব সেভেন্টি ওয়ান’ গেমটি কতটা সফলতা পাবে সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে, গেমাররা এই গেমটিকে কতটা গ্রহণ করছেন তার উপর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.