বাংলাদেশে আসছে ২শ কিলোমিটার গতির ইলেকট্রিক ট্রেন
ইলেকট্রিক ট্রেনবারবার ভাড়া বাড়িয়েও লোকসানের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না রেলওয়ে। উপরন্তু বছর বছর সরকারকে এ খাতে প্রায় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এ থেকে নিস্তার পেতে এবার উন্নত দেশের মতো এ দেশেও চালু হতে যাচ্ছে ২শ কিলোমিটার গতিবেগের ইলেকট্রিক ট্রেন। রেলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নেয়া এ উদ্যোগের প্রাথমিক কাজ (প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই) শুরু হবে আগামী মাসেই। সূত্রমতে, দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যের কথা চিন্তা করে বন্দর জেলা নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকা হয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম রুটে ইলেকট্রিক ট্রেনের প্রথম রুট হিসেবে ধরা হচ্ছে। এ রুটে ইলেকট্রিক ট্রেন ও এর ট্র্যাক নির্মাণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে একটি প্রকল্পও অনুমোদনের শেষ ধাপে রয়েছে। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সম্ভাব্য যাচাইয়ের কাজ আমাগী মাসে শুরু হয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। সম্ভাব্য প্রতিবেদন হাতে পেলে আগামী বছরের মধ্যেই প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হবে বলে আশা করছেন রেলসংশ্লিষ্টরা। রেল কর্তৃপক্ষ বলছেন, ইলেকট্রিক ট্রেন রেল খাতে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ট্রেন জ্বালানি সাশ্রয়ী, পাশাপাশি উচ্চ গতির। এতে ট্রেনের পরিচালন খরচ কমবে, কম সময় ভ্রমণ করা যাবে, আবার যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। বছর বছর ভাড়াও বাড়ানোর ঝামেলা থাকবে না। সরকারকেও ভর্তুকির অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হবে না। জানা গেছে, ইতোমধ্যে সম্ভাব্য যাচাইয়ের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যা সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ দেয়া হবে। প্রকল্পটি চলতি বছরের বার্ষিক উন্নয়ন তহবিলে (এডিপি) অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পে আওতায় আগামী এক বছর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইলেকট্রিক ট্রেন নিয়ে কাজ করা ৭ জন বিশেষজ্ঞসহ দেশ-বিদেশি প্রায় ৭০ পরামর্শক এ নিয়ে কাজ করবেন। রুট নির্বাচন বিষয়ে বলা হয়েছে, সাধারণত দেশের সবগুলো ট্রেন ডিজেলচালিত। এতে প্রতি কিলোমিটারে এক-একটি টেনকে কমপক্ষে হাজার টাকা জ্বালানি খরচ গুনতে হয়। কিন্তু ইলেক্ট্রিক ট্রেনে সে খরচ কিলোমিটারে ১০০ টাকার কম। আবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। এ পথ পাড়ি দিতে সাধারণ ট্রেনের সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা। ইলেকট্রিক ট্রেন হলে ঘণ্টায় গতি হবে ২০০ কিলোমিটার। প্রধান কয়েকটি স্টেশনে যাত্রী ওঠানামাসহ সর্বোচ্চ সময় লাগবে ২ ঘণ্টা। আবার দেশের ট্রেনের প্রধান রুট হিসেবে কাজ করছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুট। মূলত বন্দরনগরী দিয়ে দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রায় পুরোটা নিয়ন্ত্রিত হয়। অপরদিকে রাজধানী ঢাকাসহ এ বিভাগের বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ। বাণিজ্যিক দিক দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুট সবচেয়ে বেশি উপযোগী। এ তিন অঞ্চলে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ বাস করেন। আবার চট্টগ্রাম বন্দরের মালামাল পরিবহনে এ পথে কম সময় লাগবে। তাই এ রুট সম্ভাব্য প্রথম রুট হিসেবে ধরা হচ্ছে। রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, এতদিন ইলেকট্রিক ট্রেন নির্মাণের কথা বলা হলেও তা ছিল শুধুই চিন্তার পর্যায়ে। প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরির মাধ্যমে তা বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে। এ বছরের মধ্যে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে। সম্ভাব্য প্রকল্পের মাধ্যমে। এ রুটে ইলেক্ট্রিক ট্রেন নির্মাণে কি পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন, বিদ্যমন লাইনে তা সম্ভব কিনা, কোনো কোনো স্থানে পাওয়ার স্টেশন তৈরি হবে, ইলেকট্রিক সাব স্টেশন নির্মাণে উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন, লাইনে নীরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) সঙ্গে বৈঠক, ট্রেনে বিদ্যুৎ সংযোগের (ওভারহেড ক্যাটেরিং সিস্টেম) জন্য আধুনিক প্রযুক্তি নির্ধারণ এবং প্রকল্পটির আর্থিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উপযোগিতা যাচাই করা হবে। প্রয়োজনে এ ট্রেনের জন্য আলাদা বিদ্যুৎকেন্দ্রও নির্মাণ করা হতে পারে। জানা গেছে, ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি আনা এবং লোকসান কাটিয়ে রেলওয়েকে আর্থিকভাবে লাভজনক করতে ইলেকট্রিক ট্রেন চালুর বিষয়ে পরিকল্পনা অনেকখানিই এগিয়ে নিয়েছে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। রেলের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, মূলত দুই ধরনের বিকল্প মাথায় রেখে ইলেকট্রিক ট্রেনের কথা ভাবা হচ্ছে। একটি সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক। অপরটি বিদ্যুৎ ও ডিজেল কম্বিনেশনে। যদি ডিজেল-ইলেকট্রিক ট্রাকশনের রেল হয় তাহলে এর গতি হবে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। আর পুরোপুরি বৈদ্যুতিক হলে গতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার ছাড়াবে। মাত্র ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ হলে এ রুটে ১০টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। চীনসহ কয়েকটি দেশ এ বিষয়ে কাজের আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে সবই নির্ভর করবে সম্ভাব্য যাচাই প্রতিবেদন হাতে আসার পর। রেলপথ বিভাগ বলছে, ডিজেলচালিত ট্রেনের চাইতে ইলেকট্রিক ট্রেনের গতি অনেক বেশি এবং একই সঙ্গে জ্বালানি খরচ অনেক বেশি সাশ্রয়ী। এমন অবস্থায় ইলেকট্রিক ট্রেন চালু করলে রেলওয়েকে সাশ্রয়ী ও লাভজনক করা সম্ভব। ইলেকট্রিক ট্রেনে প্রতি কিলোমিটারে জ্বালানি খরচ হবে ৫০ টাকার নিচে। ডিজেল থেকে বিদ্যুতে পরিবর্তন করা গেলে শুধু জ্বালানি খরচই কমবে ৯০ শতাংশ। আর বর্তমানে রেলের অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যয়ই লোকসানের প্রধান কারণ। সৌজন্যে আমার বাংলাদেশ।