বাংলাদেশ কি আফগানিস্তানকে হালকাভাবে নিয়েছিলো?

বিবিসি বাংলা।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খুব অল্প দিন হল ক্রিকেট খেলছে।
সেই আফগানিস্তানের সাথে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৪৫ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের কাছেও কেন হারলো বাংলাদেশ?
এমন হারের কারণ কি তা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেরাদুনে ম্যাচ কাভার করতে যাওয়া বাংলাদেশি ক্রীড়া সাংবাদিক তারেক মাহমুদ বলছেন, “সিরিজের শুরুতেই সাকিব আল হাসান বলেছিলেন আফগানিস্তানে স্পেশালিষ্ট কয়েকজন খেলোয়াড় রয়েছেন যারা টি-টোয়েন্টিতে ভাল করার মতো দক্ষ খেলোয়াড়। খেলা শুরুর আগেই সাকিব বলেছেন এবার আফগানিস্তান ফেভারিট থাকবে। মাঠে আফগানিস্তান ফেভারিটের মতোই খেলেছে”
কিন্তু বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টির ক্ষমতা নিশ্চয়ই এতটাই খারাপ নয় যে আফগানিস্তানের কাছেও হারতে হবে।
তাছাড়া সর্বশেষ এই দুদলের যে ম্যাচটি হয়েছিলো তাতে বাংলাদেশই জিতেছিল। তাহলে হলোটা কি?
তারেক মাহমুদ বলছেন, “সেই বাংলাদেশকে মাঠে দেখা যায়নি। ব্যাটিং বলুন বা বোলিং সব ক্ষেত্রেই তারা পুরোপুরি ব্যর্থ। মাঠে এলোমেলো একটা দল মনে হয়েছে বাংলাদেশকে। সবমিলিয়ে বেশ বাজে একটা দিন কাটিয়েছে বাংলাদেশ”
আফগানিস্তানের সংগ্রহ ছিল ১৬৭। টি-টোয়েন্টির ম্যাচের জন্যে সেটিকে খুব একটা বড় সংগ্রহ কি বলা যাবে?
তারেক মাহমুদ বলছেন, “তা বলা যাবে না কিন্তু দেরাদুনে রাজিব গান্ধী স্টেডিয়াম নতুন একটি স্টেডিয়াম। এখানে উইেকট পরীক্ষিত না। টসের পরে সাকিব আল হাসান এমনটাই বলেছিলেন যে উইকেট সম্পর্কে যেহেতু ধারনা নেই তাদের। তাই কঠিন হবে। আমরা সেটাই দেখেছি ব্যাটসম্যানদের বেলায়। বল একটু স্লো আসছিলো ব্যাটে এবং সেখানে রান করা খুব কঠিন মনে হচ্ছিলো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য। একই সংগে আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের দিকেও যদি খেয়ার করেন একটা তারাও কিন্তু রান করতে যথেষ্ট সংগ্রাম করছিলো”
তবে শেষ তিন ওভারে আফগানিস্তান যে ৫২ রান তুলেছে সেটাই এই ম্যাচে বাংলাদেশের সঙ্গে পার্থক্যটা গড়ে দিয়েছে।
তারেক মাহমুদ বলছেন, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কিছুটা তাড়াহুড়োর ভাবও দেখা গেছে এই ম্যাচে।
“প্রথম বলেই তামিম ইকবালের আউট হওয়াটা দলকে খানিকটা নাড়িয়ে দিয়েছে। তারপর মুশফিকুর রহিম যেটা করলেন, রশীদ খান এসেছেন প্রথম বলেই তাকে ওভাবে রিভার সুইপ খেলতে দিয়ে উনি ক্যাচ দিলেন। এটা অপ্রত্যাশিত মনে হয়েছে আমার কাছে”
এই রশীদ খানকে নিয়ে সিরিজের আগে বাংলাদেশের যত আলোচনা। তাকে কিভাবে খেলতে হবে সেনিয়ে বাংলাদেশ টিম অনেক বেশি গবেষণা করেছে বলে শোনা যাচ্ছিলো।
“কিন্তু সেখানে প্রথম বলেই রশিদ খানের এত ঝুঁকিপূর্ণ শট তিন কেন খেলতে গেলেন?”, সেই প্রশ্ন রাখছেন তারেক মাহমুদ।
সাকিব আল হাসানেরও ঐ পরিস্থিতিতে কি দায়িত্ব নেয়া খেলা উচিত ছিল? তার খেলাও ম্যাচের ঐ পরিস্থিতির সাথে যাচ্ছিলো না।
কিন্তু আফগানিস্তানের মতো দলকে বাংলাদেশ হালকাভাবে নিয়েছিলো?
সেটাও একটা প্রশ্ন। তারকে মাহমুদ মনে করছেন বাংলাদেশ আফগানিস্তানকে গুরুত্ব সহকারেই নিয়েছে বলেই সাকিব তাকে ফেভারিট বলেছে।
তাছাড়া আফগানিস্তানের তিনজন খেলোয়াড় সম্প্রতি আইপিএলে খেলে এসেছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের মাত্র একজন। আফগানিস্তানের টি-টোয়েন্টি অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের চেয়ে কাছাকাছি সময়ে বেশি।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খুব অল্প দিন হল ক্রিকেট খেলছে।
তারা এসেছে বাংলাদেশের অনেক পরে। কি করে সম্ভব হচ্ছে এমন খেলা? আফগানিস্তান দলটির বৈশিষ্ট্যই বা কি?
তারেক মাহমুদ বলছেন, “ওদের খেলার মধ্যে রয়েছে আক্রমণাত্মক খেলা। একা রশীদ খানই কিন্তু চেঞ্জ করে দেয় পুরো দলকে তার আত্মবিশ্বাস দিয়ে। আইপিএলে তার বড় বড় প্লেয়ারদের সাথে খেলার অভিজ্ঞতা তিনি ড্রেসিং রুমে শেয়ার করেন”
তবে এই একটি খেলা দিয়েই এই দুই দলের সামর্থ্য যাচাইয়ের উপসংহারে পৌঁছানো ঠিক হবে না।
এই খেলাই শেষ খেলা নয়। সামনে আরো দুটো ম্যাচ আছে। সেখানে হয়ত বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.