বাংলা বর্ষপঞ্জিতে অধিবর্ষ

অধিবর্ষ (ইংরেজি: Leap year) হচ্ছে একটি বিশেষ বছর, যাতে সাধারণ বছরের তুলনায় একটি দিন (বা চান্দ্রবছরের ক্ষেত্রে একটি মাস) জোতির্বৈজ্ঞানিক বছরের সাথে সামাঞ্জস্য রাখার জন্য বেশি থাকে।

জোতির্বৈজ্ঞানিক বছর বা পৃথিবী যে সময়ে সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরে আসে তার উপরই ঋতুর পরিবর্তন ও অন্যান্য মহাজাগতিক ঘটনাবলীর পুনরাবৃত্তি নির্ভর করে। এর সময়কাল হচ্ছে প্রায় ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড, অথচ প্রচলিত গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জিমতে বছর হিসাব করা হয় ৩৬৫ দিনে। এভাবে প্রতিবছর প্রায় ছয় ঘণ্টা সময় গোনার বাইরে থেকে যায় ও চার বছরে সেটা প্রায় এক দিনের সমান হয়। এই ঘাটতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য প্রতি চার বছর পরপর ৩৬৬ দিনে বছর হিসাব করা হয়। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জিমতে, প্রতি চার বছরে একবার ফেব্রুয়ারি মাসে ও বাংলা সনমতে ফাল্গুন মাসে এই অতিরিক্ত ১ দিন যোগ হয়। তাই অধিবর্ষে ফেব্রুয়ারি ও ফাল্গুন মাস হয় যথাক্রমে ২৯ ও ৩১ দিনে। যেমন: ২০১২ একটি অধিবর্ষ ও এর ফেব্রুয়ারি মাস হয়েছে ২৯ দিনে।

বাংলা বর্ষপঞ্জি, যা সম্রাট আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত হয়, তাতে অধিবর্ষের ধারণা দেখা যায় না। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রস্তুত নতুন বর্ষপঞ্জি মতে, বাংলা বর্ষপঞ্জিতেও গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসরণে ফেব্রুয়ারি মাসের সমসাময়িক বাংলা মাসে, সাধারণত ফাল্গুন মাসে, প্রতি চার বছর পরপর একবার অতিরিক্ত একটি দিন গণনা করা হয়। তবে ভারত ও বাংলাদেশের হিন্দুরা ধর্মীয় কারণে এ রীতি অনুসরণ করেন না। সনাতনী বাংলা বর্ষপঞ্জিতে অধিবর্ষ একটু জটিল নিয়মে আসে। এ ক্ষেত্রে সাল থেকে ৭ বিয়োগ করে ৩৯ দিয়ে ভাগ করতে হয়। যদি ভাগশেষ শূন্য বা ৪ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য হয় তবে ওই সালকে অধিবর্ষ ধরা হয়। আর অধিবর্ষের অতিরিক্ত ১ দিন চৈত্র মাসে যোগ হয়। এই হিসাব অনুযায়ী প্রতি ৩৯ বছরে ১০টি অধিবর্ষ আসে, যেটা জোতির্বৈজ্ঞানিক বর্ষপঞ্জির সঙ্গে যথেষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.