বাংলা সাহিত্যে ছড়া-ছন্দের আদল

অনন্য আমিনুল:

কালের ধারা বিবর্তনের সাথে সময়ের দাবীতে মানুষের প্রয়োজনে প্রচীন কাল থেকে মৌখিক শব্দ সৃষ্টি হয়েছে। আর একাধিক অঞ্চলের মানুষের মুখে একাধিক শব্দ ও ভাষার সৃষ্টি হয়। এরপর এই মৌখিক শব্দুগুলো ধীরে ধীরে লিখিত রূপ লাভ করে। এরই ক্রমধারায় যে বাংলা ভাষার সৃষ্টি হয়েছে, সে সম্পর্কে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও অন্যান্য ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে, কালের ধারাবাহিকতায় ভাষা চারটি রূপে বিবর্তন ঘটেছে। এক. আদিস্তর, দুই. প্রাক-মধ্যস্তর, তিন. মধ্যস্তর,  এবং চার. অন্ত্যস্তর-এর মধ্য দিয়ে বর্তমান শুদ্ধ বাংলাভাষার সৃষ্টি হয়েছে।
আর মানুষের মৌখিক ভাষার শব্দগুলিকে লিখিত রূপ দিতে পাল রাজাদের আমলে নানার কাছ থেকে শেখা ইংল্যান্ডের অধিবাসী ইংরেজ কর্মচারী চার্লস উইলকিন্স বাংলালিপির নকশা প্রস্তুত করেন। তারপর সেন রাজাদের আমলে পঞ্চাশ বছর ধরে খোদাই করে পঞ্চানন কর্মকার তাঁর ছেলে ও নাতি বাংলালিপি তৈরি করেন। এরপর আবারও বাংলা বর্ণ প্রণয়ন করেন পন্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কার। ভাষা সংক্রান্ত এসব বর্ণনা শুধুমাত্র বাংলা ভাষার খাতিরে বলা হলো। এখন মূল কথা হলো বাংলা সাহিত্যে ছড়া-কবিতার ছন্দ।
ভাষাবিজ্ঞানীদের বর্ণনানুযায়ী বিদেশী ভাষা থেকে যে ভাবে বাংলা ভাষায় বিভিন্ন শব্দ সংযোজিত হয়ে গল্প, নাটক, ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ-নিবন্ধ এবং উপন্যাসের সৃষ্টি হয়েছে (তবে ছড়াই ছিলো ভাষার প্রাচীন সাহিত্য যার মধ্যে ইংরেজি ছড়া নার্সারী রাইমস-এর উদ্ভব আদি যুগে থিওডর এবং স্টুয়াট শাসকদের রাজত্বকালে)। ঠিক তেমনি বিদেশী সাহিত্য থেকে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ করে ছড়া ও কবিতা শাখায় নানা ধারার ছন্দ স্থান দখল করে নিয়েছে। যার মধ্যে ইতালির কবি পেত্রার্ক-এর ‘সনেট’, ইংল্যান্ডের কালজয়ী কবি এডওয়ার্ড লিয়রের ‘লিমেরিক’, জাপানের ম্যাসুও বাশোকের ‘হাইকু’ ইরানের ‘রেখতা’, সংস্কৃত ভাষার ‘মান্দাক্রান্ত’, পয়ার, ত্রিপদী, ছাড়াও অন্যান্য ‘লিমেরাইকু’, ‘ট্রায়োলেট’, ‘ক্লেরিহিউ’, ‘ব্যালার্ড’, ‘আইডেন্টিকাল রাইম’, ‘লিওনাইন ভার্স’ ও ‘রঁদো’ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।
ছড়া গবেষক উপাধ্যক্ষ রকিবুল হাসান বুলবুল তার ‘ছড়া ও ছড়া সাহিত্য’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ১৮ শতকের পূর্বে বিশ্বের অন্য কোন ভাষাতেই ছড়ার লিখিত রূপ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তখন মানুষ তার নিজ অভিজ্ঞতাকে প্রবাদ ও প্রবচনের মাধ্যমে প্রকাশ করতে ছন্দবদ্ধ শব্দাবলি ব্যবহার করত। এতে করে প্রজন্ম থেকে প্রজান্মান্তরে এসব প্রবাদ প্রবচন ও নীতিকথা এক জনের কাছ থেকে আরেক জনের কাছে ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষ তা মনে রাখে। আবার মায়েরা সন্তানদের ঘুমপাড়াতে পিঠে আলতো ভাবে ছন্দময় চাপড় দিয়ে কত কথাই নাই বলত। সেসব কথার হয়তো কোন অর্থ ছিল না। আর এসবের লিখিত কোন রূপও ছিল না। এ ভাবেই ছড়ার জন্ম হয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, হাজার বছরের পুরোনো বাংলা সাহিত্যের লিখিত রূপ ‘চর্যাপদ’এর প্রথম পদটি ছড়ার স্বরবৃত্তে লেখা। একেই আদি ছড়া বলা হয়। যদি ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে আরবি ভাষায় ক্বাসীদা নামে ছড়ার খোঁজ পাওয়া যায়। আর ১০ম শতাব্দীতে শিন জিং নামে এক সাহিত্যিক সে দেশের ‘ম্যান্ডারিন’ ভাষায় প্রচলিত ছাড়াগুলোকে সংকলন করার প্রচেষ্টা করেছেন। “টমি থাম্ব সং বুক” নামে প্রথম ছড়ার সংকলিত বই প্রকাশিত হয়। ইংল্যান্ডের রবার্ট চেম্বার ১৮২৬ সালে বের হয় ‘পপুলার রাইমারস’। আর সেই থেকেই শুরু করে এসব ছড়া জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে।
লোকের মুখে মুখে প্রচলিত ছড়াগুলো যখন গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়ে ছেলে বুড়ো সবার মুখে মুখে ফিরতে শুরু করে তখন ছড়া লিখতে শুরু করেন, স্কটল্যান্ডের স্যার ওয়াল্টার স্কট, আর ইংরেজিতে এডওয়ার্ড লীয়র, লুইস ক্যারল, গৌছি, কলীন ওয়েস্টে. ড. সিউস ও স্পাইক উইকিসগান। জার্মান ভাষায় ক্লেমেন্স ব্রেন্টানো, এ্যাচিম ভন আরমিন প্রমুখ ছড়াকারগণ।
১৮৩৩ সালে আমেরিকা থেকে ‘মাদার গোসেস’ ছড়া সংকলন প্রকাশিত হলে দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। যদিও পরে ১৭৬৫ সালে এ আমে আরও একটি সংকলনের খোঁজ পাওয়া গেছে।
ঊনিশ শতকের প্রথম দিকে ‘রাশান’ বাষায় ড্যানিল খামস, আলেক্সিস, কন্সটানভিচ টলস্টয়,  ‘ফ্রেঞ্চ’ ভাষায় চাওলস ক্রস ও রবাট ডেনসনাস ছড়া লিখে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। এতো গেলো বিদেশী ছড়া সাহিত্যের কথা।
আমাদের বাংলা ভাষায় হাজার হাজার প্রিয় ছড়া রয়েছে। সেগুলো অর্থহীন হলেও সেবই ছিল আদি ছড়া এবং আসল ছড়া। এসব শুধু সুরেলা শব্দের বিন্যাস। আর এসব ছড়াকেই বলা হয় ‘ননসেন্স রাইম’। তবে বাংলা ছড়া সাহিত্যের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপক ‘দাদখানি চাল মসুরের ডাল’ এবং ‘হারাধনের দশটি ছেলে’ ছড়ার ¯্রষ্টা যোগীন্দ্রনাথ রায় ১৮৯৯ সালে প্রথম বাংলা ভাষায় ‘খুকু মণির ছড়া’ নামে একটি সংকলন গ্রন্থ বের হয়। এটির ভূমিকা লেখেন রামেন্দ্র্র সুন্দর ত্রিবেদী। এরপর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থে সুকুমার রায়ের ছড়া সংকলিত করেন। তাই ছড়া সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘গাম্ভীর্য নহে, অর্থের মারপ্যাঁচ নহে, সুরময় ধ্বনিই ছড়ার প্রাণ’। অন্যতম ছড়াকার অন্নদাশঙ্কর রায় বলেছেন, ‘ছড়া চোখ দিয়ে পড়ার জন্য নয়, কান দিয়ে শোনার জন্য। কান যদি বলে, এ ছড়া নয়, তবে এ ছড়া নয়। এ পদ্য। ছড়াকার সুকুমার সেন বলেছেন, ‘গানের মধ্যে মধ্যে ছড়ানো আর পরপর গ্রথিত, এই ছিল ছড়ার বিশেষত্ব। তার অর্থ হল ছুটকো ছন্দময় রচনা’।
অপরদিকে ছড়ার যখন সুদিন শুরু হলো ঠিক তখনই বিশ্বজুড়ে ছড়াকারগণ ছড়ালেখায় নানা ধারার প্রবর্তন উদ্ভাবন করতে শুরু করেন। আর এসব ছন্দ ধারা কখনও কারও হাত ধরে আবার কখনও প্রাকৃতিক ভাবে বাংলা সাহিত্যে প্রবেশ করেছে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে দেখা গেছে, জাপানের ম্যাসুও বাশোকের আলোচিত ‘হাইকু’ ১৯১৬ সালে বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর, ইটালির কবি পেত্রার্ক-এর কবিতা লেখার ধারা ‘সনেট’ (চতুষ্পদী কবিতা) ইংরেজি সাহিত্যে নিয়ে আসেন শেক্সয়িপয়ার এবং ইংরেজি ‘সনেট’ থেকে বাংলা সাহিত্যে নিয়ে আসেন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। অপরদিকে জাপানের ‘ফুকুওয়া’ ছন্দের ধারা ‘পিয়ানোর ছন্দ’ নামে বাংলা সাহিত্যে রূপ লাভ করেছে ছন্দের যাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে। [তথ্য সূত্র: বাঙ্গালা ব্যাকরণ- ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ইউকিপিডিয়া, ছড়াপত্র ত্রৈমাসিক রংধনু, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস-মাহবুবুল আলম, ইন্টারনেট, বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত-অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, হাজার বছরের ছড়া-কবিতা- হাসান হাফিজ ও ভবেশ রায় সম্পাদিত, বাংলা সাহিত্যে সম্পুর্ণ ইতিবৃত্ত- ড. অসিত কুমার বন্দোপাধ্যায়, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা- ড. শৌমিত্র শেখর]
আমরা দীর্ঘ দিন ধরে ছন্দের এসব বিদেশী পদ্ধতি অনুসরণ করে ছড়া কবিতা লিখছি। বিশেষ করে ছড়ায় স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্তে দ্রুত লয় ও মধ্য লয়ের ছড়া লিখে চলছি। তবে বাংলা ছড়ায় এসব পুরাতন আদল পাল্টিয়ে অনেকে অনেক ভাবে ছড়া লিখেছেন। যাদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায় ‘ভারতীয় ননসেন্স’, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘অমিত্রাক্ষর’, বিদোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘মুক্তক’, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সমিল মুক্তক’ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘স্বরাক্ষরিক’, গিরিশচন্দ্র’র ‘গৈরিশ’ ছন্দের প্রতবর্তন করেন। তবে এসবও অনেক পুরোনো দিনের কথা।
সেজন্য শিশু সাহিত্যিক ফারুক নওয়াজ তাঁর লেখালেখির ব্যাকরণে আক্ষেপ করে বলেছেন, “সময় পাল্টে যাচ্ছে, জীবন পাল্টেছে, সংস্কৃতিতে নতুন আবহ তৈরি হয়েছে, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে পৃথিবীর বহুকিছু পাল্টালেও পাল্টায়নি শুধু আমাদের ছড়া কবিতার আদল। ফলে আমরা পড়ে আছি শতাব্দীর পেছনে। এখনই ভাবার সময়। আমাদের সাহিত্য বিশ্বের প্রধানতম সাহিত্যের সাথে অপরিচিত। এমন অবস্থা চলতে পারে না। কারণ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনান্দ, তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণ, মানিক, বনফুল আমাদের পূর্বসুরী। তাদের ঝাপসা হয়ে যাওয়া পথটা আমাদেরকে আলোয় ভরিয়ে তুলতে হবে।”
তিনি সাহস যুগিয়ে বলেন, “খুব বড় কোন আবিস্কার-উদ্ভাবনে এ মুহূর্তে নাইবা গেলাম। অন্তত আমারা যারা ছড়াপদ্য নিয়ে ভাবি, চর্চা করি-তারা একটু নিরীক্ষা করে আমাদের ছড়াপদ্যের কাঠামোগত আদলতায় একটু নতুনত্ব আনার চেষ্টা করতে পারি।”
তবে বর্তমানে গদ্য ও পদ্য লেখার ধারাতে কিছুটা পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। কেননা, বর্তমান সময়ে পশ্চিম বঙ্গের ছড়াকার ও ছড়া গবেষক সতীশ বিশ্বাস ১৯৯৫ সালে লিমেরিক লিখতে গিয়ে ছয় লাইনের এক ছত্র ছড়াতে নতুন রূপ এনেছেন এবং নাম দিয়েছেন ‘ছড়াক্কা’ (ছড়া+ছক্কা)। বর্তমানে দুই বাংলার ছড়াকারগণ এটির ব্যাপক চর্চা করছেন। ‘ছড়াক্কা’ ছাড়াও সতীশ বিশ্বাস ‘মধ্যমিল ছড়া’, ‘অন্ত্যমিল ছড়া’, ‘ত্রিভুজ ছড়া’ ও ‘মাকু ছড়া’ নামে বেশ কয়েকটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এটিও ভারতীয় বাঙালীর কথা।
আমি ভাষা যুদ্ধের দেশে জন্ম নেয়া একজন বাঙালি হিসেবে দীর্ঘ দিন ধরে ছড়া লেখার চর্চা করছি। আর সে নেশা থেকেই বাংলা সাহিত্যের ছড়া শাখায় পুরতান আদলে ছড়া লেখার পাশাপাশি একটি নতুন আদল সৃষ্টি ও প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছি। আমি গত গত ১৫/০৩/২০১৫ তারিখ ‘ইচ্ছে করে’ শিরোনামে একটি ছড়া লিখতে গিয়ে পাঁচ লাইনের একটি ছত্র লিখি। ছত্রটির ৮ মাত্রার প্রথম লাইনে পর্বানুপ্রাস দিয়ে দ্বিতীয় লাইনটি প্রথম লাইন অপেক্ষা ছোট করে তা সাথে একই মাত্রা বিশিষ্ট পঞ্চম লাইনে অন্ত্যমিল রাখি। আর তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন দুটি ৮ মাত্রায় লিখে পরস্পর অন্ত্যমিল রাখি। পরে ছড়াটিকে তিন ছত্রে রূপ দান করে প্রথম ছত্রের অনুরূপ অন্ত্যমিল রাখি।
কিন্তু পদ্ধতিটির নামকরণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে বাংলা একাডেমীর জীবন সদস্য প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার প্রাপ্ত বর্ণের জাদুকর দ্বিজেন্দ্র নাথ ব্যানার্জীর সাথে আলোচনা করি। তিনি নামকরণের বিষয়টি নিয়ে বিশদ ঘাটাঘাটি করতে বলেন। পরে নতুন উদ্ভাবিত ছড়ার আদলটির নাম রাখি ‘ত্রিমিল’।
ত্রিমিল ছন্দের সূচনা ছড়া ‘ইচ্ছে করে’- ইচ্ছে করে জনম ভরে/ কষ্ট রেখে দূরে/ মনের জ্বালা বদল করে/ একটু সুখের পরশ ধরে/ থাকতে জীবন জুড়ে ॥ তাই সারাক্ষণ সুর ভাসা মন/ নীল আকাশে উড়ে/ অনেক দূরের দেশ পেরিয়ে/ সাত সমুদ্দুর শেষ  পেরিয়ে/ চলছে ঘুরে ঘুরে ॥ ইচ্ছে করে হৃদয় ভরে/ এই পৃথিবীজুড়ে/ সবার সাথে চলতে গিয়ে/ মনের কথা বলতে গিয়ে/ সুখ আনি সব কুড়ে ॥
বর্তমানে পুরাতন আদলে ছড়া লেখার পাশাপাশি আমার উদ্ভাবিত ‘ত্রিমিল’ পদ্ধতিতে ছড়া লিখছি। আমি আশা রাখি নতুন এ আদলে ছড়া লিখলে অবশ্যই একদিন ছড়াগুলো বাংলা সাহিত্যের স্থান দখল করবে এবং ছড়া লেখার নতুন আদলটি বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার সাহিত্যে জায়গা করে নেবে।
ত্রিমিল লেখার নিয়ম: প্রতিটি ছড়া হবে তিন স্তবক বিশিষ্ট। প্রতিটি স্তবকে থাকবে পাঁচটি করে লাইন। ছড়ায় প্রথম স্তবকের প্রথম লাইন দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তবকের প্রথম লাইন  ৮ মাত্রার হবে এবং পর্বানুপ্রাস থাবকে। তারপর প্রথম স্তবকের দ্বিতীয় ও পঞ্চম লাইনের সাথে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তবকের দ্বিতীয় ও পঞ্চম লাইন প্রথম লাইন অপেক্ষা ছোট হবে এবং অন্ত্যমিল হবে। এরপর প্রতিটি স্তবকের তৃতীয় ও চতর্থ লাইন ৮ মাত্রার হবে ভিন্ন ভিন্ন অন্ত্যমিল হবে। অথবা, ১ম স্তবকের ন্যায় মাত্র ৫ লাইনেও লেখা যায়।
ছন্দের লয়: হবে দ্রুত। ছড়ার চরিত্র: হাস্যরস পূর্ণ কিংবা বিদ্রুপাত্মক কিংবা আন্দোলন মূলক কিংবা বেদনাত্মক।
১ম স্তবক: ১ম পঙক্তি ৮ মাত্রা-(পর্বানুপ্রাস-কক) / ২য় পঙক্তি ৫/৬/৭ মাত্রা-(অন্ত্যমিল-খ)/  ৩য় পঙক্তি ৮ মাত্রা-(অন্ত্যমিল-গ)/ ৪র্থ পঙক্তি ৮ মাত্রা-(অন্ত্যমিল-গ)/ ৫ম পঙক্তি ৫/৬/৭ মাত্রা-(অন্ত্যমিল-খ)॥
২য় স্তবক: ১ম পঙক্তি ৮ মাত্রা-(পর্বানুপ্রাস-কক)/ ২য় পঙক্তি ৫/৬/৭ মাত্রা-(অন্ত্যমিল-খ)/ ৩য় পঙক্তি ৮ মাত্রা- (অন্ত্যমিল-ঘ)/ ৪র্থ পঙক্তি ৮ মাত্রা-(অন্ত্যমিল-ঘ)/ ৫ম পঙক্তি ৫/৬/৭ মাত্রা-(অন্ত্যমিল-খ)॥
৩য় স্তবক: ১ম পঙক্তি ৮ মাত্রা-(পর্বানুপ্রাস-কক)/ ২য় পঙক্তি ৫/৬/৭ মাত্রা-(অন্ত্যমিল-খ)/ ৩য় পঙক্তি ৮ মাত্রা- (অন্ত্যমিল-ঙ)/ ৪র্থ পঙক্তি ৮ মাত্রা-(অন্ত্যমিল-ঙ)/ ৫ম পঙক্তি ৫/৬/৭ মাত্রা-(অন্ত্যমিল-খ)॥
অথবা, ১ম স্তবকের ন্যায় মাত্র ৫ লাইনেও লেখা যায়।

অনন্য আমিনুল
দিনাজপুর।
০১৭৬১৫২২৯৮৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.