বাঘের থাবায় উড়ে গেলো শ্রীলঙ্কা

বাঘের থাবায় উড়ে গেলো শ্রীলঙ্কা – এমই শিরোনামে পেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন বাংলাদেশের কৃতি খেলোয়াড় মুশফিকুর রহিম। তার এ শিরোনাম আবেগ নয় বাস্তবতারই এক সংক্ষিপ্ত বিবরন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অভিনন্দন বাংলাদেশ দলকে।

এশিয়া কাপে শ্রীলংকার বিপক্ষে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের জয়টা ছিল আবশ্যক। তবে উদ্বোধনী জুটির অসহায় আত্মসমর্পণ, অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকের দ্রুত ফেরা সব মিলে শুরুর দিকেই চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ওই অবস্থা থেকে সাব্বির রহমানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে করে ১৪৭ রান। সেই রান পুঁজি করে সাকিব, মাশরাফি, মুস্তাফিজ, তাসকিনদের দাপুটে বোলিংয়ে অবশেষে জয় তুলে নেয় টাইগাররা। লংকান সিংহদের ২৩ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপে গর্জনের আশা জাগিয়ে রাখল রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ক্যাচ মিস কী তবে ম্যাচ মিস নয়! নিশ্চিত-অনিশ্চিত মিলিয়ে কম করে হলেও ৫টি ক্যাচ মিস। তবুও দলীয় পারফরম্যান্সের চূড়ান্ত এক নিদর্শণ স্থাপন করলো টিম বাংলাদেশ।
ওয়ানডে ক্রিকেটের পর টি-টোয়েন্টিতেও যে বাংলাদেশ দুর্দান্ত হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে তার স্বাক্ষরও রচিত হয়ে যাচ্ছে। শ্রীলংকার মত শক্তিশালি একটি দলকে ২৩ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালের পথে অনেকদূর এগিয়ে থাকলো বাংলাদেশ। ৭র হয়ে বোলিং শুরু করেন তাসকিন আহমেদ। লঙ্কানদের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন দিলশান ও চান্দিমাল। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বোলিং আক্রমণে এসেই ১২ রান করা দিলশানকে ফেরান সাকিব। সৌম্য সরকারের অসাধারণ এক ক্যাচে ফেরেন দিলশান। প্রথম ওভারেই জীবন ফিরে পান চান্দিমাল। সৌম্য সরকার তার ক্যাচটি তালুবন্দি করতে পারেননি। দ্বিতীয় ওভারে আল আমিনের বলে স্লিপে দাঁড়ানো মাহামুদুল্লাহ জীবন পাইয়ে দেন দিলশানকে। এর আগে শুরুতে টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারালেও সাব্বির রুম্মনের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৪৭ রান।
নির্ধারিত ২০ ওভারে বাংলাদেশ হারায় ৭টি উইকেট। ফাইনালের দৌড়ে এগিয়ে থাকতে টস জিতে এ ম্যাচে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগারদের দলপতি মাশরাফি। দুই দলের মহাগুরুত্বপূর্ণ এ ম্যাচটি শুরু হয় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। টস জিতে টাইগারদের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ মিঠুন। ইনিংসের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ম্যাথুজ এলবির ফাঁদে ফেলে ফিরিয়ে দেন মিঠুনকে। প্রথম দুই ওভারে দুই ওপেনারকে হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে মিঠুন ফিরে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ওভারে কুলাসেকারার বলে ম্যাথুজের হাতে মিডঅফে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন সৌম্য সরকার। দুই ওপেনার ফেরেন শূন্য রানে। শুরুতে দুই ওপেনারকে হারালেও দারুণ ব্যাট করতে থাকেন সাব্বির রহমান এবং মুশফিকুর রহিম। তবে, ইনিংসের পঞ্চম ওভারে দুই ব্যাটসম্যানের ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটের ফাঁদে পড়েন ৪ রান করা মুশফিক। দলীয় ২৬ রানের মাথায় টপঅর্ডারের তিন উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। এরপর ব্যাটে ঝড় তোলেন সাব্বির রহমান। ৫৪ বলে দশটি চার আর তিনটি ছক্কায় তিনি করেন ৮০ রান। ইনিংসের ১৬তম ওভারে চামিরার বলে জয়সুরিয়ার তালুবন্দি হন তিনি। এর আগে নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তৃতীয় অর্ধশতক তুলে নেন সাব্বির। ৩৮ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাব্বির। সাব্বির-সাকিব স্কোরবোর্ডে আরও ৮২ রান যোগ করেন (৬৭ বলে)। ইনিংসের ১৮তম ওভারে সাব্বিরের পর ৩৪ বলে ৩২ রান করে ফেরেন সাকিব। তার ব্যাট থেকে আসে তিনটি বাউন্ডারি। চামিরার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দেন সাকিব। মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত থাকেন ১২ বলে ২৩ রান করে। আর মাশরাফি ২ রান করেন। ইনিংসের শেষ ওভারে নুরুল হাসান সোহান ২ রান করে বিদায় নেন। আরব আমিরাতের বিপক্ষে খেলা দলটিকেই রেখে দিয়েছে বাংলাদেশ। উইনিং কম্বিনেশনে বদল আনেনি বাংলাদেশ। চার পেসার নিয়েই মাঠে নামবে তারা। ইনজুরির কারণে শ্রীলঙ্কা দলে খেলছেন না টি-টোয়েন্টির বিধ্বংসী বোলার লাসিথ মালিঙ্গা। তার পরিবর্তে দলে আসেন থিসারা পেরেরা। আর এ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করছেন ২০১৩ সালে সবশেষ টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়কত্ব করা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। শ্রীলঙ্কা দলে মালিঙ্গার অনুপস্থিতিতেও স্বস্তিতে থাকার কথা নয় বাংলাদেশের। মালিঙ্গার পরিবর্তে আসা থিসারা পেরেরাও কম ভয়ঙ্কর নন।
২০১৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ব্যাট-বলে অসাধারণ পারফরম্যান্স দিয়ে ভুগিয়েছিলেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের কঠিনতম প্রতিপক্ষের একটি শ্রীলঙ্কা। যাদের বিপক্ষে চার ম্যাচের সবকটিতেই হার বাংলাদেশের। মানে, টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এখনো জয়ের স্বাদ পায়নি টাইগাররা। টাইগারভক্তদের মাঝে অতীতের হতাশা আজ ভুলিয়ে দিতে পারেন মাশরাফি-সাকিবরা, একটি জয় তুলে নিয়ে। দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে লঙ্কানরা এগিয়ে থাকলেও সাম্প্রতিক পারফর্মে কোনো দলই এগিয়ে নেই। কেউ কারো চেয়ে কম যায়নি। সবশেষ খেলা পাঁচ ম্যাচের দুটিতে জিতেছে বাংলাদেশ, হেরেছে তিনটি ম্যাচে। অপরদিকে, শ্রীলঙ্কাও তাদের সবশেষ পাঁচ ম্যাচের দুটিতে জিতলেও হেরেছে তিনটিতে। সবশেষ তারা ভারতের মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজ হারে ২-১ ব্যবধানে। আর বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা সবশেষ চার ম্যাচ সিরিজে ২-২ এ সমতা রাখে। এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৪৫ রানে হারে লাল-সবুজরা। তবে, ঘুরে দাঁড়িয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৫১ রানের বড় জয় তুলে নেয় সাকিব-সৌম্য-মুশফিক-মুস্তাফিজরা।
এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশ জয় ভিন্ন কিছুই ভাবছে না। ভক্তদের প্রত্যাশা ব্যাটে-বলে জ্বলে উঠে নিশ্চয়ই মেটাতে চাইবে মাশরাফির দল। অপরদিকে, নিজেদের প্রথম ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ১৪ রানে হারায় লঙ্কানরা। তবে, ব্যাটিং ইনিংসে ১২৯ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল লাসিথ মালিঙ্গার দলটি। বাংলাদেশ একাদশ: সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ মিঠুন, সাব্বির রহমান, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ, নুরুল হাসান (উইকেটরক্ষক), মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), আল-আমিন হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ। শ্রীলঙ্কা একাদশ: দিনেশ চান্দিমাল, তিলকারত্নে দিলশান, মিলিন্ডা শ্রীবর্ধানে, দাসুন শানাকা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ, চামারা কাপুগেদারা, সিহান জয়সুরিয়া, নুয়ান কুলাসেকারা, রঙ্গনা হেরাথ, দুসমন্ত চামিরা ও থিসারা পেরেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.