বিজ্ঞানীরা এখন নিশ্চিত, ব্যায়ামে সুখানুভূতির হরমোন ‘আইরিসিন’ নিঃসৃত হয়

বিজ্ঞানীরা এখন নিশ্চিত, ব্যায়ামে সুখানুভূতির হরমোনআইরিসিননিঃসৃত হয়

যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন, মানবদেহে ‘আইরিসিন’ হরমোনের অস্তিত্ব আসলেই আছে। এর আগে নাকচ করা হয়েছিল যে এটা নাই, এটা আসলে একটা মিথ।

ডানা-ফার্বার ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে ব্রুস স্পেইগলম্যানের তত্ত্বাবধানে গবেষকরা এক্সারসাইজের পরে অংশগ্রহণকারীদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে দেখেছেন। তারা দেখেন, এক্সারসাইজের পরে শরীর হরমোন ছাড়ে এবং এই হরমোনের কারণে ফ্যাট সেল বা চর্বি কোষ থেকে শক্তি নিঃশেষ হওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়।

গবেষণাটি গত ১৯ আগস্ট সেল মেটাবলিজম জার্নালে ছাপা হয়েছে।

লেখাটিতে বলা হয়েছে, আলাদা আলাদাভাবে প্রতিজনের দেহে এই হরমোন আছে এবং ব্যায়াম করার পর এই হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। সেইসাথে আমরা নিশ্চিত করছি দীর্ঘক্ষণ ব্যায়াম করলে মানুষের দেহে ‘আইরিসিন’ হরমোন নিঃসৃত হয়।

ব্যায়াম করা, ভালো থাকা
আইরিসিনের অস্তিত্ব আসলে আছে কি নেই তা নিয়ে সায়েন্টিফিক কম্যুনিটি দুই দলে ভাগ হয়ে গেছে বেশ কিছুদিন ধরে। ২০১২ সালে প্রথম আইরিসিন আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলেন ব্যায়াম করলে আমাদের স্বাস্থ্য কেন ভালো থাকে তার অনেকগুলি কারণের একটি আইরিসিন।

ইঁদুরের শরীরে আইরিসিনের পরিমাণ বাড়ালে তাদের রক্ত ও বিপাক ক্রিয়ার উন্নতি হয়। কী ধরনের ব্যায়াম করলে আইরিসিন নিঃসৃত হয়? মানুষের ওপর গবেষণা থেকে দেখা গেছে একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম। তবে ডাটা থেকে দেখা যাচ্ছে ভারি ব্যায়াম বেশি কাজে দেয়।

গারভান ইনস্টিটিউট ফর মেডিকেল রিসার্চের ডায়াবেটিস অ্যান্ড মেটাবলিজম বিভাগের প্রধান এবং সেলুলার অ্যান্ড মেটাবলিজম ল্যাবরেটরির প্রধান প্রফেসর মার্ক ফেবারিও বলেছেন, আইরিসিন পরিমাপ করার জন্য যে মাস স্পেকট্রোমেট্রি ব্যবহার করা হয়েছে তা অনেক বেশি নিখুঁত এবং নির্ভরযোগ্য।

ফেবারিও এই গবেষণার সাথে জড়িত ছিলেন না। তিনি বলেন, গবেষকরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে আইরিসিন বাস্তব। এই ব্যাপারে আর তর্ক নেই।

ফেবারিও জানান এর আগের গবেষনাগুলিতে ‘এলিসা’ নামে একটি বাণিজ্যিকভাবে সহজলভ্য কিট ব্যবহার করা হতো আইরিসিনের উপস্থিতি শনাক্ত করার জন্য। এটা স্যাম্পলে একটি অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি থেকে আইরিসিন শনাক্ত করত। কিন্তু এতে একেকবার একেক ফল আসত।

ব্যায়াম001

অন্যান্য অসুস্থতার ক্ষেত্রেও সুবিধা পাওয়ার রাস্তা
ফেবারিও জানিয়েছেন, বিভিন্ন বিপাক ক্রিয়া সংক্রান্ত অসুখ এবং স্থূলতা-রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসার উপায় খুঁজে পাওয়ার জন্য আইরিসিনের আবিষ্কার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

ফেবারিও জানান, যারা ব্যায়ামে অপারগ তাদের ওজন ঠিক রাখার ক্ষেত্রে ব্যায়ামের ফল দিতে পারে এমন ঔষুধ তারা হয়ত এখন তৈরি করতে পারবেন।

তবে তিনি এও সন্দেহ করেন আইরিসিন মিরাকল ইনজেকশনে পরিণত হতে পারে। তিনি বলেন, এই ধরনের পণ্য খুব সহজ এবং উদ্ভট ধরনের হবে।

এই হরমোন মানবদেহে কীভাবে কাজ করে তা বোঝার জন্য আরো গবেষণা দরকার। বিশেষ করে ফ্যাট টিস্যু এবং শক্তি ক্ষয়ের সাথে এটা কীভাবে সম্পর্কিত তা গুরুত্বপূর্ণ।

গারভান ইনস্টিটিউটের একজন রিসার্চ অফিসার ড. পল লি এটাকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলেছেন।

তিনি বলেন, গবেষণাটিতে দেখা যাচ্ছে ব্যায়াম করলে মানবদেহে আইরিসিন নিঃসৃত হয় এবং এর পরিমাণ বাড়ে। মানবদেহে আইরিসিনের বায়োলজিক্যাল ফাংশন ভবিষ্যতের গবেষণাগুলিতে পাওয়া যাবে।  উৎস: সাম্প্রতিক

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.