বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ অকালে মৃত্যুর ঝুঁকিতে!

শারীরিকভাবে যথেষ্ট সক্রিয় না হওয়ার কারণে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষই নানা গুরুতর রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সংস্থাটি বলেছে, কায়িক পরিশ্রম না করার কারণে তাই বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ অকালে অর্থাৎ স্বাভাবিক বয়েসের আগেই মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে।

জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যারা শারীরিকভাবে সক্রিয় নয় বা ব্যায়াম করে না তাদের হৃদরোগ, টাইপ-টু ডায়াবেটিস ও কয়েক ধরণের ক্যানসারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি। ২০০১ সাল থেকে এ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি দেখা যায়নি।

ল্যানসেট গ্লোবাল হেল্থ জার্নালে প্রকাশিত এই জরিপটিতে ২০ লাখ অংশগ্রহণকারীর উপাত্তের বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

পৃথিবীর ১৬৮টি দেশের মধ্যে ১৫৯টিতেই দেখা যায়, যথেষ্ট শারীরিক সক্রিয়তার অভাব পুরুষদের চেয়ে মেয়েদের মধ্যেই বেশি। কিছু দেশে এ পার্থক্য ১০ শতাংশের মতো। বাংলাদেশসহ নয়টি দেশে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে যথেষ্ট শারীরিক সক্রিয়তার মাত্রার পার্থক্য ২০ শতাংশেরও বেশি।

এ জরিপের গবেষকদের একজন ড. ফিওনা বুল বলেছেন, অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের জীবযাত্রা বদলে যাচ্ছে। মানুষ এখন কম হাঁটে, কম সাইকেল চালায়। সব মিলিয়ে মানুষের শারীরিক চলাফেরা, তৎপরতা এখন অনেক কমে গেছে।

তিনি বলেন, বিশ্বায়ন, নগরায়ন – এ সব কিছুর প্রভাবে মানুষ যেভাবে কাজ করে, যেভাবে যাতায়াত করে, সেটা পর্যন্ত বদলে যাচ্ছে।

ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে জানানো হয়, কম পরিশ্রম করা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যসহ বেশি আয়ের দেশগুলো রয়েছে। এশিয়ার দুটি অঞ্চল বাদে বিশ্বজুড়ে নারীদের বেশি নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ করা যায়।

এতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে ৪০ ভাগই যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রমসাধ্য কাজ করে না। সৌদি আরব ও ইরাকে পরিস্থিতি আরো খারাপ। সেখানে অর্ধেকেরও বেশি মানুষের কোনো শারীরিক তৎপরতাই নেই। ব্যায়াম না করা দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী।

গবেষকেরা বলছেন, তারা দেখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো উচ্চ আয়ের দেশে শারীরিক পরিশ্রম না করা মানুষের হার ২০০১ সালের চেয়ে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০০১ সালে শারীরিক শ্রম করা মানুষের হার ছিল ৩২ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭ শতাংশে। তবে কম আয়ের দেশগুলোয় এ হার ১৬ শতাংশে স্থায়ী রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় ৩৩ শতাংশ লোকই শারীরিকভাবে যথেষ্ট সক্রিয় নন। পুরুষদের মধ্যে ২৩ শতাংশ এবং মেয়েদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ এ কাতারে পড়েন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশমালা অনুযায়ী সুস্বাস্থ্যের জন্য মানুষের প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মাঝারি থেকে উচ্চমাত্রার শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করা প্রয়োজন। এই প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, ডব্লিউএইচও ২০২৫ সাল নাগাদ শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তা অর্জন করা সম্ভব হবে না। সূত্র: বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.