বিশ্বের ১৭ মিলিয়ন শিশু বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিচ্ছে

লন্ডন: বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়া এক বছরের কম বয়সি ১৭ মিলিয়ন (১ কোটি ৭০ লাখ) শিশুর বেশির ভাগেরই বাস দক্ষিণ এশিয়ায়। বিষাক্ত বায়ু কীভাবে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে সে বিষয়ে উত্থাপিত প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে বায়ুদূষণ কমাতে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।

৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত ইউনিসেফের নতুন এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বছরের কমবয়সী প্রায় ১৭ মিলিয়ন শিশু এমন এলাকাগুলোতে বসবাস করে যেখানে বায়ু দূষণের মাত্রা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমার চেয়ে অন্তত ছয়গুণ বেশি। যার ফলে তাদের বিষাক্ত বায়ুতে শ্বাস নিতে হয়, যা তাদের মস্তিষ্কের বিকাশকে ঝুঁকিতে ফেলে। এসব ছোট্ট শিশুর তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাস করে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেক বলেন, দূষণ শুধু শিশুর ফুসফুসের গঠনকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, এটা স্থায়ীভাবে তাদের মস্তিষ্কের বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা তাদের ভবিষ্যতকেই ক্ষতির মুখে ফেলে। বায়ু দূষণ থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখা গেলে তাতে শুধু তাদেরই উপকার নয়, সমাজও স্বাস্থ্যসেবা খরচ সাশ্রয় ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এর উপকারিতা পায় এবং প্রত্যেকের জন্য একটি নিরাপদ-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরি হয়।
কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যায়, আনুপাতিক হিসেবে দক্ষিণ এশিয়াতেই সবচেয়ে বেশি শিশু সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বসবাস করে, ১২ দশমিক দুই মিলিয়ন শিশু এমন এলাকায় থাকে যেখানে বাইরের বাতাসে দূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত আন্তর্জাতিক সীমার চেয়ে ছয়গুণ বেশি। পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের চার দশমিক তিন মিলিয়ন শিশু এমন এলাকায় থাকে যেখানে দূষণের মাত্রা নির্ধারিত সীমার ছয়গুণ ছাড়িয়ে যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবনের প্রথম সংকটময় এক হাজার দিনে অপর্যাপ্ত পুষ্টি, উদ্দীপনা ও সহিংসতার মতো বায়ু দূষণও শিশুদের মস্তিষ্কের প্রারম্ভিক বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে শৈশবের বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবনের প্রথম সংকটময় ১,০০০ দিনে অপর্যাপ্ত পুষ্টি, উদ্দীপনা ও সহিংসতার মতো বায়ু দূষণও শিশুদের মস্তিষ্কের প্রারম্ভিক বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে শৈশবের বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

এতে আরো বলা হয়েছে, অতিসূক্ষ্ম দূষণ কণাগুলো এতই ছোট যে সেগুলো রক্তপ্রবাহে ঢুকে পড়তে পারে, মস্তিষ্কে চলে যেতে পারে এবং ব্লাড-ব্রেন ব্যারিয়ারকে নষ্ট করে দিতে পারে, যা স্নায়ু প্রদাহের সৃষ্টি করতে পারে।
অতিসূক্ষ্ণ ম্যাগনেটাইটের মতো কিছু দূষণ কণা ঘ্রাণজনিত স্নায়ু এবং অন্ত্রের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে এবং তাদের চৌম্বকীয় শক্তির (ম্যাগনেটিক চার্জ) কারণে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করতে পারে; যা নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের কারণ। পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বনের মতো অন্য ধরনের দূষণ কণাগুলো মস্তিষ্কের এমন অংশের ক্ষতি করতে পারে, যেসব অংশ মস্তিষ্কের কোষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে ও শিশুদের শিক্ষা এবং বিকাশের ভিত্তি রচনা করে।

এতে আরো বলা হয়, একটি ছোট্ট শিশুর মস্তিষ্ক অত্যন্ত নাজুক, কেননা প্রাপ্তবয়স্ক একজনের মস্তিষ্কের তুলনায় খুব অল্প পরিমাণে বিষাক্ত রাসায়নিকেই এটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বায়ু দূষণের ক্ষেত্রেও শিশুরা অত্যন্ত ঝুঁকিতে থাকে। কারণ তারা অনেক দ্রুত শ্বাস নেয় এবং তাদের শারীরিক প্রতিরক্ষা ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণ বিকশিত থাকে না।

ঘরে তামাকজাত পণ্য, রান্নার চুলা ও আগুন থেকে উৎগত ক্ষতিকর ধোঁয়া থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখার মতো পদক্ষেপ বাবা-মায়েরা গ্রহণ করতে পারেন এমন তাৎক্ষণিক পদক্ষেপসহ শিশুদের ক্রমবিকাশমান মস্তিষ্কের ওপর বায়ু দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে জরুরি পদক্ষেপগুলো প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। লেইক বলেন, কোনো শিশুরই বিপজ্জনকভাবে দূষিত বাতাসে শ্বাস নেয়া উচিত নয় এবং কোনো সমাজেরই বায়ু দূষণকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.