বিশ্বের ২৩০ শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ২১৪ নম্বরে
বিশ্বের ২৩০টি শহরের মধ্যে জীবনযাত্রার মানের দিক থেকে ঢাকার অবস্থান ২১৪তম। ১ নম্বরে আছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জরিপ প্রতিষ্ঠান মার্সার প্রকাশিত ‘কোয়ালিটি অব লিভিং র্যাঙ্কিং ২০১৬’ শীর্ষক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। জরিপটি গতকাল মঙ্গলবার মার্সারের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। জরিপে জীবনযাত্রার মান নির্ধারণে শহরে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর ও নভেম্বরে এই জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপে জীবনমানের মূল্যায়ন করা হয়েছে শহরের ৩৯টি বিষয়কে বিবেচনায় রেখে। এই ৩৯টি বিষয়কে আবার ১০টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।
জরিপে মূল্যায়িত সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিবেশের মধ্যে ব্যাংকিং সুবিধা ও মুদ্রা বিনিময়ে শর্ত, সাংস্কৃতিক পরিবেশের মধ্যে গণমাধ্যমের উপস্থিতি ও বিধিনিষেধ এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য, স্কুল ও শিক্ষা, গণপরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থা, বিনোদন, গৃহায়ণ ও আবাসনব্যবস্থা এবং শহরের প্রাকৃতিক পরিবেশ। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের ৪৪০টি শহরের তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি। পরে ২৩০টি শহর নিয়ে মূল তালিকা তৈরি করা হয়। এ ছাড়া অঞ্চলভেদেও বিভিন্ন শহরের অবস্থানের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বসবাস উপযোগী শহর ভিয়েনা। জীবনধারণের জন্য নিরাপদ ও স্থিতিশীল পরিবেশ, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, পরিবহনসুবিধা ও বিনোদনের ভালো সুযোগ থাকায় ভিয়েনা এই তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে।
ভিয়েনার পরের অবস্থানগুলোতে আছে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ, নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড, জার্মানির মিউনিখ, কানাডার ভ্যাঙ্কুভার, জার্মানির ডুসেলডর্ফ ও ফ্রাঙ্কফুর্ট, সুইজারল্যান্ডের জেনেভা, ডেনমার্কের কোপেনহেগেন ও অস্ট্রেলিয়ার সিডনি।
আগের বছরগুলোতে বাসযোগ্য শহর হিসেবে প্যারিস মোটামুটি স্থিতিশীল অবস্থানে থাকলেও এ বছর ১০ ধাপ পিছিয়েছে। ২০১৫ সালের সন্ত্রাসী হামলার কারণে ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় বেশ পিছিয়ে পড়া এই শহরটির অবস্থান ৩৭তম। বাসযোগ্যতার তালিকায় ৩৯তম অবস্থানে আছে লন্ডন। এটি পিছিয়ে পড়েছে বায়ুদূষণ, যানজট ও জলবায়ুর কারণে।
জরিপে ব৵ক্তিগত নিরাপত্তা নির্ধারণে শহরের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা, অপরাধের মাত্রা, স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা বিবেচনা করা হয়েছে। মার্সারের জরিপ অনুয়ায়ী, ব৵ক্তিগত নিরাপত্তা সবচেয়ে কম ইরাকের রাজধানী বাগদাদে, জীবনযাত্রার মানও সবচেয়ে কম। ফলে এই শহরটির অবস্থান ২৩০তম। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দিক থেকে ২২৯তম, তবে জীবনযাত্রার মানে ২২৪তম। জীবনযাত্রার মানে ২২৯তম অবস্থানে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের বাঙ্গুই, ২২৮তম ইয়েমেনের সানা, ২২৭তম হাইতির পোর্ট অব প্রিন্স, ২২৬তম সুদানের খার্তুম, ২২৫তম অবস্থানে চাদের রাজধানী এনজামিনা।
দক্ষিণ এশিয়ার শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থান শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর (১৩২)। ভারতের হায়দরাবাদ (১৩৯), পুনে (১৪৪), বেঙ্গালুরু (১৪৫), চেন্নাই (১৫০), মুম্বাই (১৫২), কলকাতা (১৬০) ও নয়াদিল্লি (১৬১)। পাকিস্তানের ইসলামাবাদ ১৯৩, লাহোর ১৯৯ ও করাচি আছে ২০২তম অবস্থানে।
মার্সারের জরিপের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, এই জরিপের ভিত্তিতেই ঢাকাকে সম্পূর্ণ বসবাসের অনুপযোগী শহর বলা যাবে না। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ঢাকা তালিকায় এগিয়ে থাকা অনেক শহরের চেয়ে সমৃদ্ধ। তবে তিনি বলেন, ঢাকা একটি শতভাগ অপরিকল্পিত শহর। এরপরও ঢাকার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এই সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে পরিবর্তিত মানসিকতা, নেতৃত্ব ও সুশাসন প্রয়োজন। সময়ভিত্তিক রূপকল্প নিতে হবে এবং তাতে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বাস্তবায়ন করতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জরিপের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের অনেক সমস্যা আছে। এসব সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেব। তবে শুধু মেয়র বা তাঁর লোকদের এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে।’
আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘আমি জানি না, কী বিষয় বিবেচনায় নিয়ে জরিপটি করা হয়েছে। শুধু এটুকু বলব, তিন বছর পরে ঢাকার এই অবস্থা থাকবে না ইনশা আল্লাহ।’