বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি সম্পন্ন
টঙ্গীর তুরাগ তীরে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব এজতেমার প্রথমপর্ব শুক্রবার শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। স্থান সঙ্কুলান ও নিরাপত্তার জন্য এবারো দুইপর্বে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে প্রথমবারের মতো দেশের মোট ৩২টি জেলা নিয়ে এ বছর ইজতেমার দুইপর্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পরবর্তী বছরের (২০১৭ সালে) ইজতেমা বাকি ৩২ জেলা নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। আগামী শুক্রবার ফজরের নামাজের পর থেকে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের ইজতেমার প্রথমপর্ব। এতে অংশ নেবে ঢাকার একাংশসহ ১৭টি জেলার তাবলিগ অনুসারীরা। আগামী রোববার (১০ জানুয়ারি) আখেরি মুনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথমপর্বের ইজতেমা শেষ হবে। এরপর ১৫ জানুয়ারি দ্বিতীয়পর্ব শুরু হবে। ওই পর্বে অংশ নেবে ঢাকার বাকি অংশসহ ১৬টি জেলার তাবলিগ অনুসারীরা। ১৭ জানুয়ারি দ্বিতীয়পর্বের আখেরি মুনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে দুইপর্বের বিশ্ব ইজতেমা। প্রথমপর্বে ১৭টি হচ্ছে ঢাকা, শেরপুর, নারায়ণগঞ্জ, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, গাইবান্ধা, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, নড়াইল, মাদারীপুর, ভোলা, মাগুরা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও পঞ্চগড়।
১৯৬৭ সালে টঙ্গীর পাগাড় গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম বিশ্ব ইজতেমা। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ জাহিদ আহসান রাসেল এবারের ইজতেমার সার্বিক উন্নয়ন কাজ তদারকি করছেন।
তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে প্রতি বছর এ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় টঙ্গীর তুরাগ তীরে। ১৬০ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ইজতেমা মাঠে বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলিগ জামাতের অনুসারী ধর্মপ্রণ মুসলমান অংশ নেয়। তারা এখানে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতি কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান। প্রতি বছরের মতো এবারো স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিার্থীরা ও কলকারখানার শ্রমিক-মালিকসহ বিভিন্ন পেশার মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা বিশ্ব ইজতেমার মাঠে প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করেছেন।
ইজতেমা মাঠের প্রস্তুতির কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী কলেজের অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ জানান, সব কাজ করা হচ্ছে মোশায়ারার (পরামর্শ) মাধ্যমে। বিদ্যুৎ, পানি, প্যান্ডেল তৈরি, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে। বিদেশী মেহমানদের জন্য ইজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিম পাশে বিশেষ কামরা তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মুসল্লিদের তুরাগ নদী পারাপারের জন্য সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের সদস্যরা তুরাগ নদীর ৯টি স্থানে ভাসমান সেতু নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করেছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের টঙ্গী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ইজতেমা মাঠে স্থাপিত নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন তিন কোটি লিটারেরও বেশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের সব পদপে নেয়া হয়েছে। ওজু-গোসলের হাউজ ও টয়লেটসহ প্রয়োজনীয় স্থানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া পাকা দালানে প্রায় ছয় হাজারের মতো টয়লেট ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে নষ্ট ও তিগ্রস্ত অজু-গোসলখানা এবং টয়লেটগুলো ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে।
ডেসকো কর্তৃপ জানায়, ইজতেমা এলাকায় সার্বণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার পারভেজ আলম জানান, ইজতেমায় আগত মুসুল্লিদের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবা দিতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিক্যাল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করা হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে মন্নু গেট, এটলাস গেট, বাটা কারাখানার গেট ও টঙ্গী হাসপাতাল মাঠসহ ছয়টি অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এখানে হৃদরোগ, অ্যাজমা, ট্রমা, বার্ন, চক্ষু এবং ওআরটি কর্নারসহ বিভিন্ন ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চিকিৎসা দেবেন। রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য সার্বণিক ১৪টি অ্যা¤ু^লেন্স মোতায়েন থাকবে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
গাজীপুর জেলা তথ্য কর্মকর্তা মো: নূরুল হক জানান, বিশ্ব ইজতেমা উপলে আজ বুধবার থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বৃহত্তর জেলাগুলোর ঢাকাগামী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া দুইপর্বের আখেরি মুনাজাতের দিন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আব্দুল্লাহপুর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত গাজীপুরের বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। তিনি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানান, আগামী ১০ ও ১৭ জানুয়ারি আখেরি মুনাজাতের দিন সকাল ৬টা থেকে গাজীপুরের কালীগঞ্জ-টঙ্গী মহাসড়কের মাঝুখান ব্রিজ থেকে স্টেশন রোড ওভারব্রিজ পর্যন্ত সড়ক পথে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। টঙ্গীর কামারপাড়া ব্রিজ থেকে মন্নু টেক্সটাইল মিল গেট পর্যন্ত সড়ক পথেও থাকবে একই নির্দেশনা।
এ দিকে পন্টুন ব্রিজ নির্মাণ ও মুসল্লিদের চলাচলের সুবিধার্থে কামারপাড়া ব্রিজ থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত তুরাগ নদীর সব ধরনের নৌযান চলাচল ৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে নৌযানগুলো টঙ্গী ব্রিজের পূর্ব পাশে এবং কামারপাড়া সেতুর উত্তর পাশে নোঙর করতে পারবে।
গাড়ি পার্কিং
ইজতেমার আখেরি মুনাজাতে অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ১০ জানুয়ারি সকাল ৬টা থেকে বিভিন্ন স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চান্দনা চৌরাস্তা হয়ে আগত মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহন পার্কিংয়ের জন্য মহাসড়ক পরিহার করে টঙ্গীর কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিল কম্পাউন্ড, মেঘনা টেক্সটাইল মিলের পাশে রাস্তার উভয় পাশে শফিউদ্দিন সরকার একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিম পাশে টিআইসি মাঠ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠ, চান্দনা চৌরাস্তা হাইস্কুল মাঠ, তেলিপাড়া ট্রাকস্ট্যান্ড এবং নরসিংদী-কালীগঞ্জ হয়ে আগত মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহন টঙ্গীর কে-টু ও নেভী সিগারেট কারখানাসংলগ্ন খোলা স্থান ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
ইজতেমায় ২৮টি স্পেশাল ট্রেন চলবে
আগামী ৮ থেকে ১০ এবং ১৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমা উপলে ২৮টি স্পেশাল ট্রেন চালু করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই জন্য অতিরিক্ত ২০টি কোচ সংযোজন করা হবে। প্রয়োজনে কোচ আরো বাড়ানো হবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ইজতেমার প্রথম দিন শুক্রবার ঢাকা-টঙ্গী-ঢাকা দুটি জুমা স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। আখেরি মুনাজাতের আগের দু’দিন জামালপুর ও আখাউড়া থেকে দু’টি করে চারটি ট্রেন চলবে। আর লাকসাম-টঙ্গী একটি ট্রেন চলবে। আখেরি মুনাজাতের দিন ঢাকা-টঙ্গী সাতটি, টঙ্গী-ঢাকা সাতটি, টঙ্গী-লাকসাম একটি, টঙ্গী-আখাউড়া দু’টি, টঙ্গী-ময়মনসিংহ চারটিসহ মোট ২১টি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।
এ ছাড়া ১০ ও ১৭ জানুয়ারি আখেরি মুনাজাতের দু’দিন মহানগর প্রভাতী অথবা গোধূলি, আখেরি মুনাজাতের পরের দিন ১১ ও ১৮ জানুয়ারি তিস্তা এক্সপ্রেস এবং ইজতেমার প্রথম দিন ৮ ও ১৫ জানুয়ারি (শুক্রবার) সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো সাপ্তাহিক বন্ধের দিন চলাচল করবে। বিশেষ ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তিস্তা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস, মহুয়া এক্সপ্রেস, তুরাগ এক্সপ্রেস, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ কমিউটার, ঢাকা-টঙ্গী কমিউটার, ঢাকা-জয়দেবপুর কমিউটার ও ঢাকা-কুমিল্লা কমিউটার আখেরি মুনাজাতের দিন বন্ধ থাকবে। ইজতেমা উপলক্ষে সাধারণ যাত্রীর সাথে অতিরিক্ত দেড় লাখ যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশ্বইজতেমা মাঠ পরিদর্শন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মঙ্গলবার দুপুরে টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গৃহীত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাসহ ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমায় যেকোনো ধরনের নাশকতা নির্মূলে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সব সদস্যকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মুসল্লিদের নির্বিঘেœ এজতেমা পালনে পূর্ণ সহযোগিতার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
মোহাম্মদ আলী ঝিলন গাজীপুর