বিশ্ব ক্রিকেটে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের

ক’দিন আগেও বাংলাদেশকে সেভাবে মূল্যায়ন করতো না ক্রিকেটের কুলীন পরিবারের সদস্যরা। সুযোগ পেলেই দু’চারটা কথা শুনিয়ে দিতেন ঠোটকাঁটা ভদ্রলোকরা। এই তালিকায় সবার চেয়ে এগিয়ে ইংলিশ ‘ভদ্রলোক’ জিওফ বয়কট।

২০১৫ সাল বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য কেমন ছিল? এককথায় বললে, ‘সোনায় মোড়ানো’। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে সিরিজ জয় দিয়ে শুরু। বিশ্বকাপে ইংলিশদের বধ করে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল। ভারত সেই কোয়ার্টার ফাইনাল জিততে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিল। বেশ কয়েকটা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আম্পায়াররা। অনেকের মতে, ওই সিদ্ধান্তগুলো বাংলাদেশের পক্ষে গেলে ফল অন্যরকমও হতে পারতো। এটা যে বলার জন্য বলা নয়, সেটা প্রমাণ করতে খুব বেশি সময় লাগেনি মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের। ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার পর ভারতের সঙ্গেও বাংলাদেশ সিরিজ জিতলো ২-১ ব্যবধানে। ছাড় পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকাও। তাদের ২-১ ব্যবধানে পরাজয়ের স্বাদ উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ।

তারপরও বয়কটদের চোখে বাংলাদেশের দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি চোখে পড়ে না! এবার তিনি বলে দিলেন, বাংলাদেশকে দেশের বাইরে জিতে প্রমাণ করতে হবে। তিনি হয়তো ভুলেই গিয়েছিলেন বিশ্বকাপে তার দেশকে হারিয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশকে নিয়ে সবচেয়ে অবমাননাকর কথা বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড হুকস। ২০০৩ সালে বাংলাদেশের অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রয়াত এই ব্যক্তির কথা পুরো বাংলাদেশকেই কাঁটা দিয়েছিল। হুকস যে বলেছিলেন, স্টিভ ওয়াহ’র দলের উচিৎ বাংলাদেশের বিপক্ষে একদিনেই টেস্ট জিতে নেওয়া!

বয়কট-হুকসদের কথা টেনে নিয়ে আসার কারণ পাঠকদের অতীতে ফিরে নিয়ে যাওয়া। এই লোকগুলো বাংলাদেশকে নিয়ে কত তুচ্ছ তাচ্ছিল্যই না করেছেন। সেই বাংলাদেশ আর এই বাংলাদেশের মধ্যে বিস্তর ফারাক। ক্রিকেটের পরাশক্তি ভারত, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাশরাফিরা এখন হেলায় হারিয়ে দিচ্ছে। সাংগঠনিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) একের পর এক সাফল্যের মালা গাঁথছেন।

ক্রিকেটের নবতর ফরম্যাট টি২০ ক্রিকেটে প্রতিটি দেশই তুমুলভাবে আগ্রহী হয়ে পড়ছে। ঘরোয়া টি২০ লিগগুলো দিনকে দিন আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এদেশের ক্রিকেটকে অন্যমাত্রা এনে দিয়েছে। কিছুদিন আগে শেষ হলো বিপিএলের তৃতীয় আসর। অসংখ্য বিদেশী খেলোয়াড় এখন অপেক্ষা করে থাকেন বিপিএলে খেলার জন্য। একইভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও খেলছেন অন্য দেশগুলোর ফ্রাঞ্চাইজি টি২০ টুর্নামেন্টগুলোতে।

সোমবার পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিরা বাংলাদেশ থেকে ডেকে নিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল এবং মুস্তাফিজুর রহমানকে। করাচি কিংসে সাকিব, লাহোর কোয়ালানডারসে মুস্তাফিজুর এবং পেশোয়ার জালমি নিয়েছে তামিমকে।

তামিমের জন্য এটাই প্রথম নয়। তিনি ইংলিশ কাউন্টিতে নটিংহ্যামশায়ার, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) সেন্ট লুসিয়ার হয়েও খেলেছেন। আইপিএলে পুনে ওয়ারিয়র্সের হয়ে ডাক পেলেও এক ম্যাচও খেলার সৌভাগ্য হয়নি তামিমের। আইপিএলে যে দু’বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স ( কেকেআর) দু’বারই বড় ভূমিকা ছিল সাকিবের। সাকিব পৃথিবীর এমন কোন ঘরোয়া টি২০ ক্রিকেট নেই যেখানে খেলেননি। মুস্তাফিজুরের জন্য এটা নতুন অভিজ্ঞতা।

প্রথম আইপিএলে এর শুরুটা হয়েছিল মোহাম্মদ আশরাফুল এবং আব্দুর রাজ্জাকের হাত ধরে। সেবার আশরাফুলকে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স এবং রাজ্জাককে নিয়েছিল রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। এরপর ২০০৭ বিশ্বকাপে মাশরাফির অভাবনীয় পারফরম্যান্সের পর আইপিএলে তাকে নিয়ে টানাটানি শুরু করেন আইপিএলের দুই মালিক বলিউড অভিনেত্রী প্রীতি জিনতা এবং জুহি চাওলা। শেষ পর্যন্ত জয় হয় জুহিরই।

Bangladesh c team02

কিন্তু মাশরাফির দুর্ভাগ্য যে, ওই সময় নাইটদের কোচ অস্ট্রেলিয়ার জন বুকানন হওয়ায় এক ম্যাচ ছাড়া বাকি ম্যাচগুলোতে ডাগ আউটে বসেই কাটিয়েছেন। বুকাননদের ধারণা ছিল, বাংলাদেশের এক মাশরাফি কিইবা করতে পারবেন! হয়তো তাই আস্থা রাখতে পারেননি। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রবাসী সেই আইপিএলে তলানিতে থেকে শেষ করেছিল কেকেআর। বুকানন এখন নিশ্চয় দেখছেন, মাশরাফি কিভাবে একটা দেশের ক্রিকেটকেই বদলে ফেলেছেন। তার নিশ্চয় এখন মনে হওয়ার কথা, মাশরাফিকে না খেলিয়ে তিনি বড় অন্যায় করেছেন!

বাংলামেইল২৪ডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.