বুড়িগঙ্গা তীরের সব সুয়ারেজ লাইন বন্ধের নির্দেশ

রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী বুড়িগঙ্গা নদীতে পতিত হওয়া ওয়াসার ৬৮টি সুয়ারেজ লাইন বন্ধের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটিকেই পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট।

সেই সাথে নদীর দুই পাড়ে আর কোনো সুয়ারেজ লাইন থাকলে তা বন্ধে বিআইডব্লিউটিএকে পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে এ আদেশ বাস্তবায়ন করে এ সময়ের মধ্যে একটি প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে হবে।

মঙ্গলবার বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর বেঞ্চ এ আদেশ দিয়ে জানায়, পানি দূষণ বন্ধ করতে বুড়িগঙ্গা নদীতে পতিত সব ড্রেন ও সুয়ারেজ লাইন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

আদালত বলেছে, ওয়াসার যেসব সুয়ারেজ লাইন আছে তা বন্ধ করার দায়িত্ব সংস্থাটির নিজের। তবে এ ৬৮টি লাইন কত দিনের মধ্যে বন্ধ করতে হবে সে ব্যাপারে হাইকোর্ট আগামী রবিবার আদেশ দেবে বলে জানিয়েছেন রিটকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

এর আগে গত ১৭ নভেম্বর হাইকোর্ট বুড়িগঙ্গার চারপাশে গড়ে ওঠা ২৭ প্রতিষ্ঠানের পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকায় সেগুলো বন্ধের নির্দেশ দেয়। ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলা হয়েছিল।

এছাড়া, বুড়িগঙ্গার দূষণ নিয়ে ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে হলফনামা আকারে আদালতে মিথ্যা তথ্য দেয়ায় ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় আদালত। একই সাথে হাইকোর্টের রায় অনুসারে বুড়িগঙ্গার দূষণ রোধে ওয়াসার নিষ্ক্রিয়তায় কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়।

এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার শুনানি হয়।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে আমাতুল করিম, ওয়াসার পক্ষে এএম মাছুম ও বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষে সৈয়দ মফিজুর রহমান শুনানি করেন।

আদালত শুনানি নিয়ে ‘বুড়িগঙ্গায় ওয়াসার ১৬টি সুয়ারেজ লাইন রয়েছে’ এমন তথ্য সম্বলিত হলফনামা উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেয়। এ সময় নতুন হলফনামা দাখিলের জন্য সময় চাইলে আদালত রবিবার পর্যন্ত সময় দেয়। ওই হলফনামা দাখিলের পরই এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেবে হাইকোর্ট।

এর আগে ওয়াসা হলফনামা দিয়ে হাইকোর্টে বলেছিল, ঢাকা ওয়াসার অধিক্ষেত্রে মোট প্রায় ৯৩০ কিলোমিটার পয়োলাইন রয়েছে। এগুলোর কোনো মুখ বা আউটলেট বুড়িগঙ্গা কিংবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক জলাধারে পতিত হয়নি, বরং ঢাকা ওয়াসার নিয়ন্ত্রণাধীন পয়োলাইনের মুখ পাগলা পয়ঃশোধনাগারে পতিত হয়েছে। এখানে পতিত পয়োবর্জ্য পরিশোধন করা হয়।

অপরদিকে, বিআইডব্লিউটিএ প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছে যে ঢাকার শ্যামবাজার, চরকালীগঞ্জ, মিলব্যারাক, গোসাইবাড়ী, পোস্তাগোলা, কদমতলী, শ্যামপুর, ফতুল্লা, পাগলা বাজার, সদরঘাট, লালবাগ, ওয়াইজঘাট, বাবুবাজার, কেরাণীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর ও লালকুঠির ৫৫টি এলাকা দিয়ে ওয়াসার স্থাপিত ৬৮টি সুয়ারেজ লাইনের তরল শিল্প বর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্য, দূষিত পানি ও গৃহস্থালি বর্জ্য বুড়িগঙ্গা নদীতে পড়ছে।

সরকারি এ দুটি সংস্থার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে হাইকোর্ট বলে, ওয়াসা হলফনামা আকারে আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করা অপরাধের শামিল।

হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে হাইকোর্ট এক রায়ে বুড়িগঙ্গার পানি দূষণ রোধে কয়েক দফা নির্দেশনা দেয়। কিন্তু ওই নির্দেশনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় আবারও আদালতে আবেদন করে রিটকারী সংগঠনটি।

ইউ.এন.বি নিউজ