বেশির ভাগ ক্যান্সারের জন্য জীবনযাপন প্রণালিই দায়ী
প্রায় ১০ ভাগের নয় ভাগ ক্যান্সারের পেছনেই পরিবেশ ও শরীর-বহির্ভূত কারণ দায়ী। পরিবেশ ও শরীর-বহির্ভূত এসব কারণের মধ্যে ধূমপান, মদ্যপান, বায়ুদূষণ ও সূর্যালোকে বেশি অবস্থান করার মতো জীবনযাপন প্রণালি দায়ী। নিউইয়র্কের স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটি পরিচালিত এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। খবর টেলিগ্রাফ ইউকে।
অস্বাভাবিক কোষীয় পরিবর্তনের কারণে শরীরে টিউমার সৃষ্টি হয় বলে এ-বিষয়ক এর আগের গবেষণায় জানা গিয়েছিল। পূর্ববর্তী এসব গবেষণার ফলাফল ক্যান্সার আর দুর্ভাগ্যকে একসূত্রে গেঁথে দিয়েছিল। কিন্তু শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টির পেছনে বহিঃস্থিত বিভিন্ন নিয়ামকের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা এখন বিশ্বাস করেন। এর অর্থ হচ্ছে, ক্যান্সারের বহু প্রকরণের বিরুদ্ধেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যভিত্তিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর ৩ লাখ ৩০ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ১ লাখ ৬১ হাজারই অনিরাময়যোগ্য।
গবেষণার ফলাফলে দাবি করা হয়েছে, ধূমপান হ্রাস, সূর্যালোক থেকে দূরে থাকা বা নিয়মিত ব্যায়ামের মতো জীবনযাপন প্রণালিতে পরিবর্তন আনলে মানুষের পক্ষে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
গবেষকরা এক্ষেত্রে পূর্ববর্তী কিছু গবেষণারও সাহায্য নিয়েছেন। এসব গবেষণায় দেখা গেছে, নিম্ন ক্যান্সার ঝুঁকির দেশ থেকে উচ্চ ক্যান্সার ঝুঁকির দেশে আগতরা একই ধরনের টিউমারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এটি ক্যান্সারের পেছনে জেনেটিক ও জৈবিক কারণের বিপরীতে পরিবেশগত কারণকে দাঁড় করিয়ে দেয়। প্রায় ৭৫ শতাংশ কলোরেক্টাল ক্যান্সারের পেছনে খাদ্যাভ্যাস দায়ী বলে এখন বিশ্বাস করা হয়। পাশাপাশি সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্যমতে, ত্বকের ক্যান্সারের প্রায় ৮৬ শতাংশ ঝুঁকির কারণ সূর্যালোক। আর ঘাড় ও মাথার ক্যান্সারের ৭৫ শতাংশের জন্যই দায়ী ধূম ও মদ্যপান।
গবেষকরা বলছেন, কিছু বিরল ক্যান্সারের পেছনে জেনেটিক কারণ থাকলেও অধিকাংশই পরিবেশগত কারণে সৃষ্টি হয়। শরীর-বহির্ভূত এসব কারণকে ক্যান্সার প্রতিরোধ ও তার গবেষণায় বিবেচনা করা জরুরি।
এক ব্রিটিশ পরিসংখ্যানবিদ জানান, গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, শরীর-বহির্ভূত ঝুঁকির কারণগুলো থেকে দূরে থাকতে পারলে ৭০-৯০ শতাংশ ক্যান্সার থেকে দূরে থাকা যায়। গবেষণালব্ধ এ নতুন ফলাফল একই বিষয়ের ওপর পূর্ববর্তী গবেষণার সম্পূর্ণ বিপরীত। বছরের শুরুর দিকে পরিচালিত ওই গবেষণায় বলা হয়েছিল, ৬৫ শতাংশ ক্যান্সারই এড়ানো সম্ভব নয়। এসব ক্যান্সারের পেছনে অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন দায়ী, যা সম্পূর্ণভাবে মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। জানুয়ারিতে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ওই গবেষণায় বলা হয়, কোষ বিভাজনের হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কোষে পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর এ পরিবর্তন ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যায়। এ কারণে কোলনের মতো শরীরের যেসব অংশে কোষ বিভাজনের হার বেশি, সেসব অংশে টিউমার ও ক্যান্সার সৃষ্টির ঝুঁকিও বেশি।
এর বিপরীতে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ক্যান্সারের কারণ ব্যাখ্যায় কোষ বিভাজনের ফলে ঘটা পরিবর্তনের মতো সরলীকৃত ধারণার বাইরেও বহু কিছু রয়েছে। কোষীয় পরিবর্তনই কেবল দায়ী হলে ক্যান্সারের এত ঘটনা সামনে আসত না।
গবেষক দলের একজন ইউসুফ হান্নুন বলেন, শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টির পেছনে অভ্যন্তরীণ কারণ অল্প মাত্রায় দায়ী। আমাদের কাছে এর প্রমাণ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ কারণে কোষীয় পরিবর্তনের হার এ রোগের ঝুঁকির সঙ্গে সমতুল্য নয়। বণিক বার্তা |