ব্লু-ইকোনমি: হতে পারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দিগন্ত
২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে ৯০০ কোটি। এ বিপুল জনসংখ্যার খাদ্য, পুষ্টি ও জ্বালানি চাহিদা মেটাতে মানুষকে অবশ্যই সমুদ্র্রের মুখাপেক্ষী হতে হবে। সেই লক্ষ্যে ২০১৫ সালের পর থেকে জাতিসংঘ যে টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন করতে যাচ্ছে, তার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ব্লু-ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতি। বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতিকে সমুদ্র অর্থনীতি নানাভাবে অবদান রেখে চলেছে। সমুদ্রকে ঘিরে সারা বছর ৩ থেকে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হচ্ছে পৃথিবীতে। বিশ্বের প্রায় ৫০০ কোটি মানুষের ১৫ ভাগ প্রোটিনের জোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও জীবজন্তু। পৃথিবীর ৩০ ভাগ গ্যাস ও জ্বালানি তেল সরবরাহ হচ্ছে সমুদ্রতলের বিভিন্ন গ্যাস ও তেলক্ষেত্র থেকে। সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জ্ঞান ও গবেষণা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমুদ্রনির্ভর ওষুধ শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগ সমুদ্রনির্ভর। আবার অস্ট্রেলিয়া সমুদ্রসম্পদ থেকে বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে।
ব্লু-ইকোনমির মাধ্যমে একদিকে যেমন দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, অন্যদিকে জিডিপি বাড়িয়ে জাতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা যায়। এসব কারণে সমগ্র বিশ্বে ব্লু-ইকোনমি জনপ্রিয় হচ্ছে। ফলে বিগত বছরগুলোয় যতগুলো আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়েছে, তার সবগুলোতেই ব্লু- ইকোনমি ছিল আলোচনার মূল বিষয় ও কেন্দ্রবিন্দু। দারিদ্র্য দূরীকরণ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলাসহ অর্থনৈতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সমুদ্রের ভূমিকা অপরিসীম। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৩ কোটি মানুষ জীবিকার জন্য সামুদ্রিক অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সামর্থ্য ও প্রযুক্তির অভাবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক সম্পদ করায়ত্ত করতে পারেনি। এজন্য সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা ও অনুসন্ধানে নিয়োজিত উন্নত দেশ ও বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় বাংলাদেশ। সমুদ্রসম্পদের উত্সগুলো ব্যবহারে দেশের বেসরকারি খাতকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। সুমদ্রসম্পদ নিয়ে নতুন প্রজন্মের মধ্যে দিন দিন সচেতনতা বাড়ছে। তাই এগুলোকে এখনই কাজে লাগানোর জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা ও বিশদ গবেষণা প্রয়োজন। বেসরকারি খাত এগিয়ে এলে বাংলাদেশেও ব্লু-ইকোনমি গড়ে তোলা সম্ভব। এর জন্য সহজশর্তে ঋণ সহায়তা দরকার। ১৪ থেকে ১৮ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে এ খাতে বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়।
গভীর সমুদ্রে মত্স্য আহরণ এবং বঙ্গোপসাগরের তলদেশে বিদ্যমান খনিজসম্পদ উত্তোলনে আমাদের প্রযুক্তির অভাব রয়েছে। এজন্য এসব ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য বর্তমান সরকারের উদ্যোগে এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষাদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অন্যান্য উপকূলীয় দেশের মতো বাংলাদেশের রয়েছে বঙ্গোপসাগরের অসীম সম্ভাবনাময় সমুদ্রসম্পদ। প্রতি বছর বঙ্গোপসাগর হতে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন টন মাছ ধরা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের জেলেরা ধরে মাত্র ৭০ মিলিয়ন টন। বাকি মাছ ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভারতীয় জেলেরা। এ বঙ্গোপসাগরেই রয়েছে ৪৩৫ জাতের মূল্যবান ও পুষ্টিকর মাছ, যার বিদেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সামুদ্রিক মত্স্যসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জ্বালানি নিরাপত্তায় সমুদ্রের খনিজসম্পদের ব্যবহার, সমুদ্রের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরকে উন্নয়নের নিয়ামক ভূমিকায় দেখতে পারি আমরা। দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পুরোপুরি সমুদ্রনির্ভর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গোপসাগরের বহুমাত্রিক বিশাল সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করেই সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স অ্যান্ড মেরিটাইম জোন্স অ্যাক্ট-১৯৭৪’ আইন প্রণয়ন করে এক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়কের পরিচয় দেন। বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে সমুদ্রে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ জড়িত। বঙ্গোপসাগরে দেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত সীমানা। ফলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর আপত্তির মুখে কেবল সমুদ্রসম্পদ আহরণের প্রক্রিয়াই বাধাগ্রস্ত হয়নি, দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা সম্পর্কিত আদালতে দায়েরকৃত মামলার রায়ে বর্তমান সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টায় মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হওয়ায় বাংলাদেশ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চল, ২০০ নটিক্যাল মাইলের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও খনিজসম্পদের ওপর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার অধিকার পেয়েছে। ফলে বিনাবাধায় সমুদ্রের তলদেশ থেকে বিপুল খনিজসম্পদ উত্তোলনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাংলাদেশের বন্দরগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথ অবাধ বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত ও নিরাপদ রাখা এবং একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মহীসোপান এলাকার প্রাণিজ ও খনিজসম্পদের অবৈধ ব্যবহার প্রতিরোধে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের বন্দরগুলোয় আন্তর্জাতিক জাহাজের আগমন বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ বিশাল জলভাগ ও তার তলদেশ-সংলগ্ন সমুদ্র বা মহাসমুদ্রে বিদ্যমান প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদের যথাযথ ব্যবহার করে ব্লু-ইকোনমির টেকসই উন্নয়ন জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সমুদ্রের সম্পদ সংরক্ষণে এক বার্ষিকী বা পঞ্চবার্ষিকী নয়, শতবর্ষী বা তারও বেশি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পরিকল্পনা করতে হবে আমরা সমুদ্র থেকে কী নেব, কখন নেব বা কখন নেব না। সমুদ্রে অপার সম্পদ আছে, যা অনন্তকাল ধরে আহরণ করা যাবে— এমন ধারণা সঠিক নয়। বরং সমুদ্রকে সংরক্ষণ এবং প্রতিপালনও করতে হবে। পৃথিবীর ৭২ শতাংশ দেশই সমুদ্র পানিবেষ্টিত। সমুদ্র আমাদের খাদ্য দেয়। শক্তি দেয়। খনিজসম্পদ দেয়। অবকাশ যাপন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয়। যোগাযোগে সাহায্য করে। মনে রাখতে হবে, সমুদ্রের বাষ্পীভূত পানি ভূমির উদ্ভিদ ও প্রাণীর নিয়ামক শক্তি। সমুদ্রের তলদেশে যে বিশাল উদ্ভিদজগত্ আছে, সেটাই পৃথিবীর অক্সিজেন সরবরাহের এবং কার্বন শোষণের মূল উত্স। সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনীতি বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য নিয়েও উদ্বেগের কথা ভাবা দরকার। সামুদ্রিক দূষণ নিয়ে উদ্বেগ ও বিপদ সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলেই সূক্ষ্ম পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।
বাণিজ্যিক পরিবহনের ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয় সমুদ্রপথে। এতেই বোঝা যায় বিশ্ব বাণিজ্য কতটুকু সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল। সেজন্য নিরাপদ সমুদ্র প্রয়োজন। সমুদ্র পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নও আবশ্যক। বিশিষ্ট সমুদ্র গবেষণাবিদ ইয়োহানেস গিলের গবেষণা থেকে জানা যায়, ইউরোপের উপকূলীয় দেশগুলো সমুদ্র অর্থনীতি থেকে প্রতি বছর ৫০০ বিলিয়ন ইউরো আয় করতে পারে, যা তাদের জিডিপির ১০ শতাংশ। তাই খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা এবং দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশকেও সমুদ্র অর্থনীতির জন্য যথাযথ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তোলার ব্যাপারে বাস্তব ও বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতি আসলে কি?
বিংশ শতাব্দীজুড়ে পরিবেশগত নানা আন্দোলন ও সম্মেলন আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে একের পর এক পরিবেশবান্ধব মডেল। এসব মডেলের মধ্যে গ্রিন ইকোনমি মডেল বা সবুজ অর্থনীতি মডেল ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল এই মডেলের অধিকতর সম্প্রসারণের। গ্রিন ইকোনমি মডেলের পরবর্তী ধাপ তথা সম্প্রসারণই ব্লু ইকোনমি নামে পরিচিত, যা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে ইতোমধ্যেই পৃথিবীজুড়ে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে।
১৯৯৪ সালে অধ্যাপক গুন্টার পাউলি ভবিষ্যতের অর্থনীতির রূপরেখা প্রণয়নের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক আমন্ত্রিত হন। বিস্তারিত আলোচনা, গবেষণা আর নিজের অধীত জ্ঞানের মিশ্রণ ঘটিয়ে পাউলি একটি টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব মডেল হিসেবে ব্লু ইকোনমির ধারণা দেন। গত দুই দশকের নানা পরিমার্জন-পরিবর্ধনের মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমি মডেল আজ একটি প্রতিষ্ঠিত ধারণা।
নতুন এই মডেলের আদ্যোপান্ত তুলে ধরতে অধ্যাপক পাউলি ২০১০ সালে প্রকাশ করেন তার সাড়া জাগানো গ্রন্থ ‘”The Open Source from the Source”.’ মোট ১৪টি অধ্যায়ে বিভক্ত এই বইটিতে ধাপে ধাপে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে ব্লু ইকোনমির পেছনের তত্ত্ব, তথ্য ও তার প্রয়োগ। নতুন এই মডেল সাদরে বরণ করে নিচ্ছে পৃথিবীর নানা প্রান্তের উদ্যোক্তারা। স্থানীয় প্রযুক্তি, নিজস্ব অভিজ্ঞতা আর ব্লু ইকোনমি মডেলের তত্ত্বীয় জ্ঞানের মিশেল ঘটিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্ভাবন করা হচ্ছে অভিনব নানা ব্যবসা পদ্ধতির। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি এসব ব্যবসা আর্থিকভাবেও লাভজনক বিনিয়োগে পরিণত হয়েছে।
মূলত ২০১২ সালের জুনে রিও-ডি-জেনিরোতে অনুষ্ঠিত রিও+২০-United Nations Conference on Sustainable Development(UNCSD) সম্মেলনে ব্লু ইকোনোমি’র প্রথম কনসেপ্ট নোটটি উপস্থাপন করা হয়। মূলত ২০১২ সালের ২০-২২ জুন রিও-ডি-জেনিরোতে অনুষ্ঠিত রিও+২০-United Nations Conference on Sustainable Development(UNCSD) সম্মেলনে ব্লু ইকোনমি’র প্রথম কনসেপ্ট নোটটি উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ব্লু ইকোনমি বলে অবশ্য আলাদা কোনও শব্দ প্রয়োগ করা হয়নি। বরং সেখানে ‘Green Economy in a Blue World’ নামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। প্রকাশের সাথে সাথেই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন তাত্ত্বিকরা এটিকে লুফে নেন এবং রিও+২০ এর প্রস্তুতিমূলক আলোচনার মধ্য দিয়ে এটি নীতিপ্রণয়নের শীর্ষে চলে আসে। জাতিসংঘের তাত্ত্বিকদের দ্বারা শেষ পর্যন্ত ২০১২-১৬ এই ৫ বছর সময় মেয়াদের একটি একশন এজেন্ডাও তৈরি করা হয়।
জাতিসংঘের রিপোর্টটিতে বলা হয়, কাটিং অ্যাজ টেকনোলোজি এবং ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্য সাগরবক্ষের সম্পদ দ্রুত আহরণের জন্য মানুষকে উসকে দিচ্ছে। অথচ এই মহাসাগরগুলো পৃথিবীর মানুষের সর্বশেষ বৈশ্বিক কমন্স বা সাধারণ সম্পত্তি এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য এই মুহুর্ত থেকেই এই মহাসম্পদের উপযুক্ত ব্যবহারের দিকে নজর দেওয়ার জরুরী। এর মাধ্যমে মূলত টেকসই উন্নয়নের জন্য ব্লু ইকোনমি’কে একটি গ্লোবাল এজেন্ডায় পরিণত করা হয় যার ধারাবাহিকতায় বিশ্বজুড়ে বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখন ব্লু ইকোনমি ধারণার আলোকে উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়নের কর্মপ্রচেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে।
ধারণাগতভাবে ব্লু ইকোনমি বলতে কোনও মেরিন ইকোনমি বোঝায় না বরং গ্রীন ইকোনমি’র সীমাবদ্ধতা আমলে নিয়ে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট বা টেকসই উন্নয়ন অর্জনের কর্মপরিকল্পনাই এককথায় ব্লু ইকোনমি।
সুমদ্র অর্থনীতির জন্য নতুন প্রকল্প
সুমদ্র সম্পদের ওপর গবেষণা করার জন্য দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সুমদ্র সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির পর সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে সরকারের জোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব মোহাম্মাদ খোরশেদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আমরা বিদেশি অর্থ পেয়েছি। এর মাধ্যমে আমাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাড়বে।’
প্রকল্প দুটির প্রথমটি হচ্ছে- ছোট আকারে অ্যাকুয়াকালচার চাষের সম্ভাবনা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে- বঙ্গোপসাগরে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদের ওপর গবেষণা।
আলম বলেন, ‘এ অঞ্চলের অনেকে এ প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। কিন্ত প্রকল্প দুটি আমাদের দেওয়া হয়েছে।’
প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়ন করবে ইন্ডিয়ান ওশেন রিম অ্যাসোসিয়েশন এবং আগামি দুই বছরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।
আলম বলেন, ‘আমরা এর অনুমোদন পেয়ে গেছি এবং আগামী মাসে প্রকল্প শুরু করার জন্য ইন্ডিয়ান ওশেন রিম অ্যাসোসিয়েশনের কাছে আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাবো।’
তিনি বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়াবে। কারণ এ প্রকল্পগুলোর গবেষণার ফল অন্যান্য সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে বিনিময় করা হবে।’
ইন্ডিয়ান ওশেন রিম অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা ২০টি এবং এর উন্নয়ন সহযোগী ৬টি যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও চীন।
জানা গেছে, বাংলাদেশে অ্যাকুয়াকালচার উৎপাদনের গড় প্রবৃদ্ধি ২৮ শতাংশ।