‘ব্ল্যাক হোল’ নিয়ে চর্চা করেও আমজনতার নায়ক! এতটা জনপ্রিয় কেন বিজ্ঞানী হকিং

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের মতে হকিং শুধু কিংবদন্তি বিজ্ঞানী ছিলেন না, তিনি হয়ে উঠেছিলেন ‘সেলিব্রিটি বিজ্ঞানী’।
এমন বিষয় নিয়ে গবেষণা করতেন, যা হয়তো আমজনতার পক্ষে সহজে বোধগম্য করা সম্ভব নয়। কিন্তু পদার্থবিদ্যার সেই জটিল তত্ত্বগুলিই আমজনতার কাছে সহজভাবে বুঝিয়ে দিতে পারতেন এই মানুষটি। অথচ শারীরিক প্রতিকূলতার জন্য অন্যদের সঙ্গে নিজের ভাবের আদানপ্রদান করাটাই তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জের মতো ছিল। অথচ আরও অনেক অসাধ্যের মতো সেই অসাধ্যও সাধণ করেছিলেন স্টিফেন হকিং।
সম্ভবত সেই কারণেই গোটা বিশ্বের সাধারণ মানুষের কাছেও এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের মতে হকিং শুধু কিংবদন্তি বিজ্ঞানী ছিলেন না, তিনি হয়ে উঠেছিলেন ‘সেলিব্রিটি বিজ্ঞানী’।
সেই কারণেই কোনও বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনাসভা বা কর্মশালায় যদি স্টিফেন হকিং বক্তব্য রাখতেন, তাহলে তাঁর বলা একটি শব্দও মিস করতে চাইতেন না শ্রোতারা। কিন্তু কোন তত্ত্বের জোরে গোটা বিশ্বে নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছিলেন হকিং?
মহাকাশবিজ্ঞানী তাপস দাসের কথায়, ‘‘হকিং যুগের আগে পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন, কোনও কিছুর পক্ষেই ব্ল্যাক হোলের তীব্র মহাকর্ষণ শক্তি এড়ানো সম্ভব নয়। এমনকী, ব্ল্যাক হোল থেকে আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে ব্ল্যাক হোল থাকলেও তা দেখতে, জানতে পারা সম্ভব নয়। কিন্তু কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্ব কাজে লাগিয়ে অঙ্ক কষে হকিং দেখিয়ে দিয়েছিলেন, ব্ল্যাক হোল থেকে বিকিরণ বেরিয়ে আসে। ব্ল্যাক হোল যত ছোট হতে থাকে, তত তার বিকিরণের তাপমাত্রা শক্তিশালী হয়। এই বিকিরণের সূত্রেই ব্ল্যাক হোল তার ভর হারায়। এবং ক্রমশ ভর কমতে কমতে বিস্ফোরণের মাধ্যমে ব্ল্যাক হোল মহাশূন্যে মিলিয়ে যায়। এই তত্ত্বকেই বলা হয় হকিং বিকীরণ।’’
বিজ্ঞানের এই জটিল তত্ত্বগুলিই ১৯৮৮ সালে ‘অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম’ নামের বইয়ে প্রকাশ করেন হকিং। পৃথিবীর অন্যতম বেস্ট সেলার বই হয়ে ওঠে এটি। কিন্তু হকিংয়ের রসবোধ এতটাই প্রখর ছিল যে মজা করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘এটি সবথেকে কম পড়া কিন্তু বেশি বিক্রি হওয়া বই।’’ পরবর্তীকালে এই বইটিই আরও সহজ ভাষায় ‘অ্য ব্রিফার হিস্ট্রি অফ টাইম’ নামে প্রকাশিত হয়।
গোটা জীবন জুড়েই একের পর এক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন এবং জিতেছেন হকিং। শরীরকে যখন ক্রমশ পঙ্গুত্ব গ্রাস করছে, তখনও তাঁকে দমানো যায়নি।
২০০৭ সালে ‘জিরো জি কর্পোরেশন’ নামে একটি সংস্থার পক্ষ থেকে তাঁকে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। একটি বিশেষ ধরনের বিমানে উঠে ভরশূন্য অবস্থায় থাকার সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন হকিং হুইলচেয়ারে বন্দি থাকা হকিং। হুইলচেয়ারে চেয়ার ছেড়ে সেই বিশেষ বিমানের মধ্যে হাওয়ায় ভেসে থাকা হকিংয়ের ছবি গোটা বিশ্বকে অবাক করেছিল।
ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির পদার্থবিদ কিপ থোর্ন একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে হকিং সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হয়তো তাঁকে মানসিকভাবে অন্যদের থেকে অনেক শক্তিশালী করে তুলেছিল। ভাবনাচিন্তার নতুন দিগন্ত খুলে ফেলতেন তিনি। তাঁর জগতেই অন্যরা যা কল্পনা করতে পারতেন না, সেটাই সহজে ভেবে ফেলতেন তিনি।’’
সূত্র: এবেলা.ইন |

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.