বড় ধরনের রহস্য: এফ-১৬ এর মোকাবেলায় কেন পুরনো মিগ-২১ পাঠিয়েছিল ভারত?

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক পাল্টাপাল্টি বিমান হামলার সময় অত্যাধুনিক এফ-১৬ বিমানের মোকাবেলায় পুরনো মিগ-২১ বিমান পাঠানোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে ভারতীয় বিমানবাহিনী।

২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের বিমান পাকিস্তানের সীমান্ত অতিক্রম করে বালাকোটে বোমা হামলা করে। ভারত দাবি করেছে যে, সন্ত্রাসীদের কথিত আস্তানায় তারা বোমা ফেলেছে।

বোমা হামলার পর দুই দেশের মধ্যে কয়েকদিন পাল্টাপাল্টি হামলা হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের এফ-১৬সহ অন্যান্য বিমান ভারতীয় সীমান্ত পার হলে ভারতের মাটিতে হামলা করে।

ভারত সরকার দাবি করেছে যে, ভারতীয় মিগ-২১ বিমানগুলোকে পাকিস্তানী বিমানকে ধাওয়া করে এবং একটি এফ-১৬ বিমান ভূপাতিত করে এবং তার পাইলট নিহত হয়। ইসলামাবাদ অন্যদিকে দাবি করেছে যে, তারা ভারতের দুটো মিগ-২১ বিমান ভূপাতিত করেছে, যদিও নয়াদিল্লী বলেছে যে একটি মাত্র বিমান হারিয়েছে তারা।

পাকিস্তানী বাহিনী একটি মিগ-২১ বিমানের পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করে। দুই দিন আটক রাখার পরে তাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে পাকিস্তান।

ভারতের মিগ-২১ বিমানগুলোর কিছু আধুনিকায়ন হলেও এগুলো মূলত ৩০ বছরের পুরনো বিমান। ভারত পাকিস্তানের যে এফ-১৬ ভূপাতিত করার দাবি করছে, বলা হচ্ছে সেটা ব্লক ৫২ডি মডেলের। ইসলামাবাদ ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এই মডেলের বিমান কিনেছিল।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারতের এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধানোয়া পাল্টা প্রশ্ন করেন যে, “আমাদের বহরে মিগ-২১ রযেছে, আমরা কেন এটা ব্যবহার করবো না?”

ভারত নব্বইয়ের দশকে মিগ-২১ বিমান আপগ্রেড করে এটাকে ‘বাইসন’ পর্যায়ে উন্নীত করে। এটাতে পশ্চিমা স্টাইলের অ্যাভিওনিক্স, নতুন রাডার এবং রাডার ওয়ার্নিং রিসিভার এবং আধুনিক অস্ত্র ব্যবহারের উপযোগী করা হয়। ধানোয়া বলেন যে, “এতে ভালো অস্ত্র ব্যবহারের সিস্টেম রয়েছে, উন্নত এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল বহন করতে পারে এটা”।

কিন্তু মূলত যে কারণে ভারত মিগ-২১ পাঠিয়েছিল, সেটা হলো তাদের বহরে এই বিমানই সবচেয়ে বেশি। ধানোয়া বলেন, “আমরা আমাদের বহরের সব ধরনের বিমান দিয়েই লড়াই করি”।

এমনিতেও সাম্প্রতিক যে বিমান যুদ্ধে মিগ-২১ ভূপাতিত হলো, সেখানে উভয় পক্ষই নতুন পুরাতন মিলিয়ে মিশ্র ধরনের বিমান ব্যবহার করেছে।

ডেভিড সেনসিওত্তি দ্য অ্যাভিয়েশানিস্টকে বলেন, “২৭ ফেব্রুয়ারি যে মিগ-২১ বিমানটি ভূপাতিত হয়, সেটা ভারতের আটটি বিমানের বহরের একটি অংশ, যে বহরে চারটি সুখোই ৩০, দুটো আপগ্রেডকৃত মিরেজ ২০০০ এবং দুটো মিগ-২১ বাইসন বিমান ছিল। অন্যদিকে পাকিস্তানের ২৪টি বিমানের প্যাকেজে রয়েছে আটটি এফ-১৬, চারটি মিরেজ থ্রি, চারটি জেএফ-১৭ থান্ডার বিমান”।

ভারত বহু বছর ধরেই তাদের পুরনো রাশিয়ান বিমানগুলো বদলে ফেলতে চাচ্ছে। ২০১৮ সালে ভারতীয় বিমান বাহিনী ২৪৪টি ষাটের দশকের মিগ-২১ এবং ৮৪টি মিগ-২৭ বিমান ব্যবহার করেছে।

মিগ-২১ বিমানগুলোর এখন দুর্ঘটনায় পড়ায় আশঙ্কা বেশি। ভারত প্রথম ৮৭৪টি মিগ-২১ বিমান বহরে যোগ করেছিল ১৯৬৩ সালে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৪৯০টি বিমান বিভিন্ন সময়ে ক্র্যাশ করেছে এবং প্রায় ২০০ জন পাইলট নিহত হয়েছে।

পুরনো মিগ বিমানগুলো বদলে ১১৫টি নতুন জঙ্গি বিমান কেনার জন্য ১৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে চায় নয়াদিল্লী। নতুন বিমানগুলো ইউরোপিয় ডিজাইনের জাগুয়ার, ফরাসি মিরেজ ২০০০ এবং রাফাল, রাশিয়ান মিগ-২৯ এবং সু-৩০, ভারতের নিজস্বভাবে তৈরি তেজাস জঙ্গি বিমানের সাথে উড়বে। লকহিড ভারতের এই বৈচিত্রময় বিমানের বহরকে বিশ্বের বৃহত্তম জঙ্গি বিমানের ইকোসিস্টেম আখ্যা দিয়েছে।

নয়া দিল্লির জটিল ক্রয় প্রক্রিয়ার কারণে ভারতীয় বিমান বাহিনীকে হয়তো আরও বহু বছর এমনকি দশক ধরে মিশ্র ধরনের পুরনো ও নতুন বিমান ব্যবহার করতে হবে।

সেনসিওত্তি ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, এই মিশ্র ধরনের বিমানগুলোর যুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা না রাখার কোনই কারণ নেই। মিগ-২১ বিমানের মতো পুরনো বিমানও বিশেষ পরিস্থিতিতে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।

বিমান আধুনিক এবং সক্ষমতাসম্পন্ন হলেই শুধু যুদ্ধে জেতা যায় না। আরও কিছু ফ্যাক্টরকে বিবেচনায় নিতে হয়: পাইলটের দক্ষতা, অন্যান্য আনুষঙ্গিক সহায়তা, গ্রাউন্ড রাডার – সবকিছু মিলিয়েই জয় পরাজয় নির্ধারিত হয়। সূত্র: ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট

পালাবদল.নেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.