ভারতের একাধিক বাঁধ নির্মাণ মরুকরণের দিকে বাংলাদেশ
অলকানন্দা ও ভাগিরথী নদীতে ভারতের একাধিক বাঁধ নির্মাণ মরুকরণের দিকে বাংলাদেশ |
বাংলাদেশকে মরুকরণের দিকে ঠেলে দিতে ভারত সরকার গঙ্গা ও ভাগিরথীর অন্যতম প্রাণপ্রবাহ সৃষ্টিকারী ‘অলকানন্দা’ নদীতে একাধিক বাঁধ নির্মাণ করছে। খোদ ভারতেই এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ চলছে। উত্তরখ-ের রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে বলা হয়েছে, হিমালয়ের নদীগুলোর উৎসমুখে যেভাবে বাঁধ নির্মাণ চলছে- তাতে করে পরিবেশ বিপর্যয় এবং জলবায়ুতে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা দেবে। এ নিয়ে ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ইকোনোমিক টাইমসের প্রতিবেদন হচ্ছেÑ ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, গঙ্গা, ভাগিরথী, হুগলী, অলকানন্দা নদীর ওপর নির্মাণাধীন বাঁধ শুধু ভারতকেই নয়; বাংলাদেশ ও নেপালকেও পরিবেশ বিপর্যয়ের কবলে ফেলে দেবে।তবে এ নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের খুব একটা মাথা ব্যথা নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, অলকানন্দা নদীর ওপর নির্মাণাধীন বাঁধের ব্যাপারে সরকার অবগত রয়েছে। ওই কর্মকর্তার মতে, এসব বাঁধ বাংলাদেশের কোন ক্ষতি করবে না। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, পানি বিদ্যুৎ নির্মাণের জন্য ড্যাম করা হলে এর কাছাকাছি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু অলকানন্দা নদীর যেসব জায়গায় এই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে তা বাংলাদেশ থেকে ২৩শ’ কিলোমিটার দূরে। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, এই বাঁধ নির্মাণের আগে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের অনুমতি নিয়েছে। এসব বাঁধে অর্থায়ন করছে বিশ্ব ব্যাংক। এ ব্যাপারে ভারত সরকার এবং বিশ্ব ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে যে, এসব বাঁধের মাধ্যমে অলকানন্দা নদীর পানি সেচ প্রকল্পের জন্য প্রত্যাহার করা হবে না। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তার বক্তব্য এমন হলেও এ ব্যাপারে উত্তরখ-ের রাজ্য সরকার ভারতের মিনিস্ট্রি অব এনভায়রনমেন্ট ফরেস্টের কাছে ২০১৪ সালে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগের। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারত সরকার অলকানন্দা নদীর ওপর যেসব বাঁধ নির্মাণ করছে তা তেহেরি ড্যামের চেয়েও ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। ওই রিপোর্টে গোটা ভারতে বিভিন্ন নদ-নদীতে ৪ হাজার ৮৫৭টি ড্যাম নির্মাণের কথা বলা হয়। রিপোর্টে বলা হয়, এসব বাঁধের ১০ শতাংশ করা হচ্ছে নদ-নদীগুলো থেকে পানি প্রত্যাহারের জন্য। ইতোমধ্যেই ভারত গঙ্গায় ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তায় গজলডোবা বাঁধ, মনু নদীতে নলকাথা বাঁধ, খোয়াই নদীর উপর চাকমা ঘাট বাঁধ, বাংলাবন্ধে মহানন্দা নদীর উপর বাঁধ, গোমতি নদীর উপর মহারানি বাঁধ এবং মহুরি নদীর উপর ভারত কলসি বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার করছে। এছাড়াও বরাক নদীর পানি প্রত্যাহার করতে নির্মাণ করা হচ্ছে টিপাইমুখ ড্যাম। জানা যায়, ভারতের জাতীয় নদীগুলোর ৬৪ শতাংশ পানির উৎসস্থল হিমালয় থেকে নেমে আসা স্রোতধারা, বাংলাদেশের ৯০ ভাগ পানি উৎসস্থল একই প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল এবং নেপালের ৮০ ভাগ নদীর পানির উৎসস্থলও একই। হিমালয়ান নদীগুলোর ওপর ভারত যাতে বাঁধ নির্মাণ করতে না পারে এজন্য বাংলাদেশ সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক মোজাদ্দেদ আল ফারুক। তার মতে, ভারত ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে গঙ্গা নদীর পানি প্রত্যাহার করছে। এখন যদি ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও তারা প্রত্যাহার করে নেয়-তাহলে দেশে ভয়াবহ মরুকরণ দেখা দেবে।ভারতের বিভিন্ন ওয়েব সাইডে দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, শুধুমাত্র অলকানন্দা ও ভাগিরথী এই দুই নদীতেই অন্তত ৩৭টি বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ শুরু করেছে ভারত। এর ফলে উৎসমুখেই গঙ্গা নদী হারিয়ে যাবার উপক্রম হবে বলে উত্তরখ-ের রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। যার বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হবে বাংলাদেশও।অলকানন্দা নদী হলো গঙ্গার উৎসের কাছে সবচেয়ে বিস্তীর্ণ ও দীর্ঘ প্রবাহমান নদী দু’টির অন্যতম। যার একটি ভাগিরথী। গঙ্গায় পানির প্রবাহ জীবন্ত রাখতে এই অলকানন্দা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে থাকে। অলকানন্দার উৎসস্থল নন্দা, ত্রিশূল ও কামেট শৃঙ্গের বরফগলা পানি। গঙ্গার উৎস অনেকগুলো ছোট নদী। এর মধ্যে ছ’টি দীর্ঘতম ধারা হল অলকানন্দা, ধৌলীগঙ্গা, নন্দাকিনী, পি-ার, মন্দাকিনী ও ভাগিরথী। দেবপ্রয়াগে ভাগিরথী ও অলকানন্দার মিলনের ফলে মূল গঙ্গা নদীর জন্ম হয়েছে। ভাগিরথী নদী উত্তরখ- থেকে গঙ্গায় মিলিত হয়ে এর মূলধারা উত্তর প্রদেশ, বিহার হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুর মহকুমায় ফারাক্কা পয়েন্টে পতিত হয়েছে। তবে একটি উপ-ধারা দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এখানে আবার ভাগিরথী নাম নিয়ে কলকাতা হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলেছে। গঙ্গার মূলধারা ফারাক্কায় পতিত হলেও এর দীর্ঘ মাঝপথে ভারত অসংখ্য বাঁধ নির্মাণ করে পানির প্রবাহ আগেই সরিয়ে নিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের ভাগ্যে জুটছে ছিটেফোঁটা অংশ। এর মাশুল দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।অন্যদিকে, অলকানন্দা ও তার উপনদীগুলোর উপরে ভারত সরকার যে ৩৭টি ড্যাম নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে; তা থেকে ৫ হাজার ৩৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এসব ড্যামের মধ্যে ১৪টির কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথে রয়েছে। এগুলো থেকে ২ হাজার ২২৩ মেগাওয়াট পাওয়া যাবে। বাকি ২৩টি প্রকল্প অনুসন্ধান ও জরিপের আওতায় রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে পাওয়া যাবে ৩ হাজার ১৩২ মেগাওয়াট। এ পর্যন্ত সম্পন্ন হওয়া ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, বদ্রিনাথ, তপোবন, থারালি, উরগাম, বিষ্ণুপ্রয়াগ, কালিনাগা-১, কালিনাগা-২, কোটিবেল-আইবি, কোটিভেল-২, মাধামহেশ্বর, তপোবন বিষ্ণুগাদ, শ্রীনগর ও সিঙ্গলি ভাটওয়ারি ড্যাম প্রকল্প। এদিকে, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলা হয়