ভালোবাসা হলো ‘বিশ্বাস’: অভিনেতা আবুল হায়াত
খ্যাতিমান অভিনেতা, একুশে পদকে ভূষিত আবুল হায়াত এবারের আয়োজনে তাঁর মনের খবর শোনাচ্ছেন। সঙ্গে ছিলেন মুতাসিম বিল্লাহ নাসির। সূত্র: মনের খবর।
মখ : কেমন আছেন?
উত্তর : আলহামদুলিলাহ, ভালো আছি।
মখ : কেন ভালো আছেন?
উত্তর : আপাতত কোন সমস্যা চোখে পড়ছে না। এই মুহুর্তে কোনো রকম অস্বাভাবিকতা নেই।
মখ : ভালো থাকাটা কেন জরুরি?
উত্তর : আমি ভালো থাকলে আমার আশেপাশের সবাই ভালো থাকবে। অন্যদের ভালো রাখতে আমাকে আগে ভালো থাকতে হবে।
মখ : ভালো থাকার জন্য কোন কোন বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখেন এবং ভালো রাখার চেষ্টা করেন?
উত্তর : ভালোভাবে চলা, সবার সাথে ভালো ব্যবহার করা, বিপথে না যাওয়া এগুলোই অনুসরণ করি এবং নিজের পেশায় সৎভাবে কাজ করা।
ছবিঃ
মখ : ভালো থাকার জন্য প্রতিটি দিন জরুরি নাকি অন্য কোনো পরিকল্পনা করেন?
উত্তর : প্রতিটা দিনই জরুরি, অন্য কোনো পরিকল্পনার প্রয়োজন নেই। এটা একটি ফরয কাজ বলে আমি মনে করি।
মখ : মন খারাপ হয়?
উত্তর : মন খারাপ না হওয়ার তো কোন কারণ নেই। অনেক সময় যখন মনের ইচ্ছা পূরণ হয় না তখন খারাপ হয়। তবে সাধারণত যেটা হয় যে অনেকের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করি কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী সেটি পাই না। এটা হতেই পারে। মন খারাপ হয় না এ কথাটি বলা মুশকিল।
মখ : তখন কি করেন?
উত্তর : চুপচাপ থাকি। আমি মনে করি টাইম ইজ দ্যা বেষ্ট হিলার [সময় হচ্ছে সবচেয়ে ভালো নিরাময়কারী।
মখ : মন ভালো-খারাপ-দু:খ-কষ্ট রাগ-হিংসা-এগুলোকে কিভাবে দেখেন?
উত্তর : এগুলো স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি মনে করি, মানুষের মনটাই ওভাবে সৃষ্টি হয়েছে। মনের মধ্যে ভালো লাগা, খারাপ লাগা সবকিছু থাকবে। তবে ভালো থাকার জন্য আমার একটি থিওরী আছে যে চাহিদা সবসময় কম থাকতে হবে। তাহলে ভালো থাকবেন। চাহিদা কম থাকলে পূরণ হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। চাহিদা পূরণ হলে মনও ভালো থাকে।
রাগ মানুষের বড় শত্রু, রাগ চন্ডাল। মানুষের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো তার রাগ। মানসিক দিক থেকে তো বটেই, শারিরীক দিক থেকেও ক্ষতিকর। সমাজে বসবাসের জন্যও এটি ক্ষতিকর। সম্পর্কের ওপর এর ফলে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। ফলে রাগ নেমে গেলে ভাবি, কেন করলাম? যার ওপর রেগে গিয়েছি তাকে গিয়ে ‘সরি’ বলি। আমাদের আচরণ এমনই হওয়া উচিত।
মখ : রাগ করেন?
উত্তর : করি না, সে কথা বলবনা। রাগ করতে না চাইলেও অনেক সময় হয়ে যায়। অনেক সময় অনেকের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করি। কারো কাছ থেকে ভালো কাজ আশা করি, কাউকে দায়িত্ব দিয়ে ভাবছি, স্বাভাবিকভাবে কাজটি হয়ে যাবে কিন্তু যখন দেখি, হচ্ছে না তখন রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় না। তবে এটি খুবই কম সময়ের জন্য হয়, মুহুর্তমাত্র। কয়েক সেকেন্ড পরেই সব ভুলে যাই।
মখ : রাগ দমিয়ে রাখেন না কারো ওপর ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করেন?
উত্তর : তখন হয়ত একটি-দুটি উচ্চস্বরে শব্দ করে রেগে যাই।কিন্তু গালাগালি তো শিখিনি। জীবনে কোনোদিন বাবা-মা এটি আমাকে শেখাননি। হয়তো উচ্চস্বরে কিছু বলে ফেলি। সব ভুলে গেলে ডেকে বলি, ভাই কাজটি কেন করলে না? এমন অবশ্য খুব কমই হয়।
মখ : রাগ নিয়ন্ত্রণ করা দরকার?
উত্তর : অবশ্যই দরকার। রাগ মানুষের বড় শত্রু , রাগ চন্ডাল। মানুষের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো তার রাগ। মানসিক দিক থেকে তো বটেই, শারিরীক দিক থেকেও ক্ষতিকর। সমাজে বসবাসের জন্যও এটি ক্ষতিকর। সম্পর্কের ওপর এর ফলে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। ফলে রাগ নেমে গেলে ভাবি, কেন করলাম? যার ওপর রেগে গিয়েছি তাকে গিয়ে ‘সরি’ বলি। আমাদের আচরণ এমনই হওয়া উচিত।
মখ : হিংসা আছে?
উত্তর : কাউকে কখনো হিংসা করতে শিখিনি তো।
মখ : ভালোবাসার প্রবণতা কতটুকু?
উত্তর : জীবন ভালোবাসি, প্রকৃতি ভালোবাসি, পৃথিবী ভালোবাসি, ধর্ম ভালোবাসি, দেশ ভালোবাসি।
মখ : ভালোবাসাকে কীভাবে দেখেন?
উত্তর : ভালোবাসা হলো ‘বিশ্বাস’।
মখ : আর একবার ভালোবাসার সুযোগ দিলে কাকে ভালোবাসতেন?
উত্তর : যাদের নিয়ে বসবাস করছি, তাদেরই ভালোবাসতে চাই। অন্য কাউকে ভালোবাসবো চিন্তাই করতে পারি না। কয়োমনে প্রার্থনা করি, আবার জন্ম হলে যেন এ দেশেই জন্মি, এই মানুষগুলোকেই যেন পাই। এই আত্মীয়-স্বজন, স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা এদেরই যেন পাই। তাদেরই যদি আরো বেশি ভালোবাসতে পারি।
মখ : কখনো মানসিকভাবে অসুস্থ হয়েছেন?
উত্তর : না সেরকম হওয়ার কথা তো মনে পড়ছে না।
মখ : মানসিক স্বাস্থ্যকে কিভাবে দেখেন?
উত্তর : মানসিক স্বাস্থ্য তো মানুষের পরিবেশের উপর নির্ভর করে। হয় কী-ছোটবেলা থেকে একটি মানুষ যে পরিবেশে বেড়ে ওঠে, তার মানসিকতা সেভাবে গড়ে ওঠে। আমি বলব যে, প্রাকৃতিক কারণে, আলাহর সৃষ্টির কারণে অনেক মানুষের মানসিক ভারসাম্য থাকে না। তাদের সঙ্গে সৎ ব্যবহার করা বড় প্রয়োজন। এটি সাংঘাতিকভাবে প্রয়োজন। তবে আমাদের দেশে এর বোধহয় অভাব আছে। মাঝে মাঝে তা অনুভব করি। সুতরাং মন-মানসিকতার ভারসাম্য থাকা না থাকা যেমন আরেকজনের দোষ নয়, তেমনি আমারও কৃতিত্ব নয়। ভালো আছি এটি আমার কৃতিত্ব নয়, আরেকজন খারাপ আছেন সেজন্য তিনি দায়ী তা বলা মুশকিল। দোষ অবশ্যই তার নয়। সেজন্য সবার প্রতি সবার সহানুভূতিশীল থাকা উচিত।
মখ : স্বপ্ন দেখেন?
উত্তর : স্বপ্ন তো দেখি।
মখ : মানুষ হিসেবে কি ধরণের স্বপ্ন দেখেন? সেটি কিভাবে সফল করেছেন?
উত্তর : ছোটবেলা থেকেই তো স্বপ্ন দেখতে শিখিনি। আমরা খুব গন্ডির মধ্যে বসবাস করতাম। মানে আমরা দরিদ্র পরিবারের মানুষ। তাই ইচ্ছাটি সবসময় ছোট রেখেছি। এটি আমার বাবার কাছ থেকে শেখা। তোমার লিমিট অনুযায়ী তুমি ইচ্ছা করবে এবং সে থেকে যখন দেখবে, বেশি পেয়ে গেছো, তখন আনন্দটা বেশি হবে। আমার স্বপ্নও রকমই ছিল। বিশাল স্বপ্ন কখনো দেখিনি।
মখ : জীবনে স্বপ্ন দেখার প্রয়োজনীয়তা?
উত্তর : অনেকে বলেন, স্বপ্ন না দেখলে সফল হতে পারবে না। আমার মনে হয় বড় বড় স্বপ্ন দেখে হতাশায় ভুগবে। সুতরাং আমার থিওরি-ইচ্ছা ছোট হলে পাওয়া সবসময় বড় হয়। ফলে আমি আনন্দে আছি, সুখে আছি। তবে হ্যাঁ, স্বপ্ন তথা মানুষের একটি লক্ষ্য থাকে। যদি সে মনে করে, ৫০% লক্ষ্য পূরণ হলেই আমি সুখী, তাহলে কিন্তু সহজে মানুষ অসুখী হয় না। দশ আনার আশা করছিলাম পেলাম চার আনা। শোকর আলহামদুলিলাহ-চার আনাই বা কতজনে পায়? এভাবে ভাবতে পারলে সুখী হবে।
মখ : অন্যরা যাতে ভালোবাসেন, তাদের ভালো-খারাপ লাগার ব্যপারে কতটুকু সচেতন?
উত্তর : আমি তাদের সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলি, তাদের সুখ-দুঃখে থাকার চেষ্টা করি। সবসময় আমার মধ্যে সে চেষ্টা থাকে। কখনো কারো অমঙ্গল কামনা তো করিই না, তা কল্পনাও করতে পারি না। সব সময় মনে করি-প্রতিটি মানুষই ভালো, খুব সহজে মানুষকে বিশ্বাস করি। বিশ্বাস করে যে মাঝে মাঝে ঠকি না তা নয়। তবে জেতার হারই বেশি।
মখ : নিজের কাছে মানুষ হিসেবে কেমন?
উত্তর : দোষ-গুণ সম্পন্ন মানুষ। ভালো কাজ করি, মাঝে মাঝে নিজের অজান্তে হয়তো খারাপ কাজও করি। আচরণে অনেকে কষ্টও পেতে পারেন। এটি হতে পারে। আমি মনে করি আমি একজন সাধারণ এ্যাভারেজ হিউম্যান বিং।
মখ : আপনার জীবনে মানসিক শক্তির প্রভাব?
উত্তর : মানসিক দিক থেকে আমি খুব শক্তিশালী নই। একটু ভীতু প্রকৃতির। আমার মধ্যে বিশ্বাস করার প্রবণতা আছে। আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হলো-আমার লাইফ পার্টনার আমার সবচেয়ে বড় সহযোগী এবং আমার মানসিক শক্তির যোগানদাতা। এটা আমার প্লাস পয়েন্ট। তিনি যখন সঙ্গে থাকেন, আমার মানসিকতা স্ট্রং থাকে। যতদূর এসেছি সেজন্য তার সাংঘাতিক অবদান আছে।
মানসিক স্বাস্থ্য তো মানুষের পরিবেশের উপর নির্ভর করে। হয় কী, ছোটবেলা থেকে একটি মানুষ যে পরিবেশে বেড়ে ওঠে, তার মানসিকতা সেভাবে গড়ে ওঠে। আমি বলব যে, প্রাকৃতিক কারণে, আলাহর সৃষ্টির কারণে অনেক মানুষের মানসিক ভারসাম্য থাকে না। তাদের সঙ্গে সৎ ব্যবহার করা বড় প্রয়োজন। এটি সাংঘাতিকভাবে প্রয়োজন। তবে আমাদের দেশে এর বোধহয় অভাব আছে। মাঝে মাঝে তা অনুভব করি। সুতরাং মন-মানসিকতার ভারসাম্য থাকা না থাকা যেমন আরেকজনের দোষ নয়, তেমনি আমারও কৃতিত্ব নয়। ভালো আছি এটি আমার কৃতিত্ব নয়, আরেকজন খারাপ আছেন সেজন্য তিনি দায়ী তা বলা মুশকিল। দোষ অবশ্যই তার নয়। সেজন্য সবার প্রতি সবার সহানুভূতিশীল থাকা উচিত।