মক্কা থেকে মিনায় যাত্রা হাজিদের
মক্কা থেকে মিনায় যাত্রা হাজিদের
সারা বিশ্বের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ শুরু করার জন্য মঙ্গলবার পবিত্র নগরী মক্কা থেকে পার্শ্ববর্তী মিনায় যাত্রা শুরু করেছেন। এবার হজে প্রায় ২০ লাখ হাজি অংশ নিচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হাজিরা ইহরাম পরে হজের নিয়ত করে মক্কা থেকে যাত্রা শুরু করেছেন মিনার উদ্দেশে। তারা যাচ্ছেন আর মুখে বলছেন ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়ালমুল্ক্, লা শারিকা লাকা।’
হজ করতে আসা নারী ও পুরুষরা পাশাপাশি বসে হজের ইতিহাস ও রীতিনীতি নিয়ে ধর্মীয় বক্তৃতা শুনছেন।
পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী মিসরীয় হাজি ওয়ালা আলী বলেন, ‘মহান আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে এটা আমাদের জন্য উপহার যে, তিনি আমাদেরকে এখানে এসে হজের জন্য মনোনীত করেছেন।’ তিনি কান্নাভেজা চোখে বলেন, ‘আমি এখানে আসতে পেরে খুবই খুশি।’
পবিত্র হজের অংশ হিসেবে হাজিরা মিনায় আসছেন। মিনায় যেদিকে চোখ যায়, তাঁবু আর তাঁবু। যেন তাঁবুর শহর। চৌচালা ঘরের মতো তাঁবুতে থাকবেন হাজিরা। পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথক তাঁবু। শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত তাঁবুতে প্রত্যেকের জন্য আলাদা ফোম, বালিশ, কম্বল বরাদ্দ।
হজের প্রথম দিন তারবিয়াহ দিবস নামে পরিচিত। এ সময় হাজিরা আরাফাতের ময়দানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। আরাফাতের ময়দান মিনার ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত।
হাজিরা মিনায় নামাজ কায়েম করে ও কোরআন পাঠ করে সময় কাটাচ্ছেন।
ইহরামের সময় পুরুষরা দুই টুকরা সাদা কাপড় পরেন। নারীরা পোশাক হয় ঢিলেঢালা এবং তাদের কেবল মুখমন্ডল ও হাতের কব্জি খোলা তাকে।
হাজিরা ১৪শ’ বছর ধরে হজ পালনে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) ঐতিহ্য অনুসরণ করে আসছেন।
এর আগে পদদলিত ও অগ্নিকান্ডে শত শত প্রাণহানি সত্ত্বেও ব্যাপক নিরাপত্তা পদক্ষেপের কারণে গত এক দশকে বড়ো ধরণের ঘটনা-দুর্ঘটনা ছাড়াই হজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু গত ১১ সেপ্টেম্বর তীব্র ঝড়ের সময় নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত একটি ক্রেন মক্কায় গ্রান্ড মসজিদের চত্বরে ভেঙে পড়লে কয়েক শ’ লোক হতাহত হয়। নিহতদের মধ্যে সৌদি, ইরানি, নাইজেরিয়ান, মালয়েশিয়ান, ইন্দোনেশিয়ান ও ভারতীয় রয়েছে।
এদিকে চরমপন্থী ইসলামী স্টেট গ্রুপের সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার বিষয়েও কর্তৃপক্ষ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে গ্রুপটি সৌদি আরবের বিভিন্ন মসজিদ লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালিয়েছে।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেনারেল মনসুর আল তুর্কি বলেন, হজ অনুষ্ঠানকে বানচাল করতে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো যেন কোন ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলো ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলছে হজ অনুষ্ঠান নিরাপদ করতে এক লাখ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে চলতি বছর সৌদি আরবও যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে। দেশটি মার্চ মাস থেকে ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাহিনীর সমর্থনে আরব নেতৃত্বাধীন যে জোট বিমান হামলা চালাচ্ছে তার নেতৃত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব।
এছাড়া আরো রয়েছে মারাত্মক মার্স ভাইরাস মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ। গত মাসে রাজধানী রিয়াদে একজনের শরীরে মার্স ভাইরাস আক্রান্তের খবর জানা গেলেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন এ পর্যন্ত হজ করতে আসা কারো মধ্যে এ রোগের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, সৌদি আরবে মারাত্মক মার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি লোক। ২০১২ সালে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার পর দেশটিতে ৫২৮ জন মারা গেছে। হজ প্রত্যাশীদের এই ভাইরাস মুক্ত রাখতে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হাজার হাজার স্বাস্থ্য কর্মীকে নিয়োগ করেছে।