মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধাতঙ্ক, মক্কায় জরুরি বৈঠক

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে বিরাজমান যুদ্ধাবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান ৩০ মে মক্কায় এক জরুরি বৈঠকে বসতে আরব লিগ ও উপসাগরীয় দেশগুলোর জোট জিসিসি সদস্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

ইতিমধ্যে ইরাক ও ইরান ত্যাগ করতে নিজ নাগরিকদের নির্দেশনা দিয়েছে বাহরাইন। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ হলে ইরান পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সৌদি আরবের বার্তা সংস্থা এসপিএ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমুদ্রসীমায় সৌদি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা এবং সৌদি আরবের ভূখণ্ডে দুটি তেল ক্ষেত্রে হুতিদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন বাদশাহ সালমান। এসব হামলা এই অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা এবং বৈশ্বিক তেল সরবরাহের ওপর মারাত্মক হুমকি তৈরি করেছে।

গত সপ্তাহান্তে উপসাগরে সৌদির দুটি তেলের ট্যাংকারে হামলা চালানো হয়। এছাড়া সৌদিতে দুটি তেলের স্থাপনায় ড্রোন হামলার পর অপরিশোধিত তেলের গুরুত্বপূর্ণ একটি পাইপলাইন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসপিএ জানিয়েছে, শনিবার রাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে সৌদি যুবরাজ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে কথা বলেছেন।

সৌদি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদিল আল জুবেইর রিয়াদে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সৌদি আরব এ অঞ্চলে কোনো যুদ্ধ চায় না। যুদ্ধ ঠেকাতে সব চেষ্টাই করবে দেশটি। তবে অন্যপক্ষ যুদ্ধ শুরু করলে সৌদি আরব তার নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষায় কড়া জবাব দেবে।

তিনি বলেন, ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সৌদি স্বার্থে আঘাতের চেষ্টা করছে। সৌদি আরব আশা করে বিপদ এড়াতে ইরানের সরকার তাদের শুভবুদ্ধি প্রয়োগ করবে এবং অনুচরদের দায়িত্বহীন হঠকারি কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখবে। না হলে এই অঞ্চলের যে পরিণতি হবে, তার জন্য পরে অনুশোচনা করতে হবে।

সতর্ক বাহরাইন : ইতিমধ্যে বাহরাইন তার নাগরিকদের ইরাক ও ইরানে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছে এবং যত দ্রুত সম্ভব দেশ দুটো ত্যাগ করতে নির্দেশনা দিয়েছে। উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশটি প্রায়ই অভিযোগ করে আসছে যে, ইরান তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। এছাড়া বৃহৎ মার্কিন তেল কোম্পানি এক্সন-মোবিল দক্ষিণ ইরাকের একটি তেলক্ষেত্র থেকে সব বিদেশি কর্মীকে সরিয়ে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে সৃষ্ট অনিশ্চয়তাকে কেন্দ্র করে আলোচনার জন্য জ্বালানি তেল উৎপাদকদের সমিতি ওপেক রোববার বৈঠকে বসেছে।

এ অবস্থায় ইরান একাধিকবার হুমকি দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালালে তারা তেল পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেবে। তবে বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক অ্যালান জনস্টন বলছেন, যুদ্ধের সম্ভাবনাকে ইরানিরা খাটো করে দেখাচ্ছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ শনিবার বলেন, ইরান কোনো যুদ্ধ চায় না। তিনি এও বলেন, ইরানের সঙ্গে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হবে না, এটা আমেরিকানরাও জানে। সাবেক মার্কিন জেনারেল ডেভিড পেট্রেয়াসও বলছেন, সর্বাত্মক যুদ্ধের সম্ভাবনা কম। ইরান দখলের বিশাল চ্যালেঞ্জের বিষয়ে মার্কিন সামরিক দফতর পেন্টাগন অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের জানাবে।

যুদ্ধ হলে আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের সমাপ্তি ঘটবে : যুদ্ধ চাইলে সেটি ইরানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রোববার এক টুইটে ট্রাম্প এ হুঁশিয়ারি দেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এর আগে একই দিন সৌদি আরবও ইরানকে হুঁশিয়ার করেছিল।

সৌদি তেল স্থাপনায় ড্রোন হামলা ও রোববার ইরাকের বাগদাদের ‘গ্রিন জোনে’ রকেট নিক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় এসব হুঁশিয়ারি এলো। ‘গ্রিন জোনে’ নিক্ষিপ্ত রকেটটি যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কাছে বিস্ফোরিত হয়। এরপরই টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান যদি যুদ্ধ চায়, তাহলে সেটিই হবে ইরানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি। আর কখনই যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি নয়!’

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিক্ষিপ্ত রকেট যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে আঘাত করেনি, এতে কেউ হতাহত বা উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষয়ক্ষতিও হয়নি। কোনো পক্ষ রকেট নিক্ষেপের দায় স্বীকার না করলেও এই ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্র খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বলে জানান তিনি।

ইমেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে আমরা পরিষ্কারভাবে বলে আসছি এবং আবারও বলছি, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও স্থাপনার ওপর হামলা সহ্য করা হবে না এবং নিষ্পত্তিমূলক ভঙ্গিতে এর জবাব দেয়া হবে। ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীগুলো বা এ রকম কোনো বাহিনীর কোনো অংশ এ ধরনের হামলা চালালে আমরা ইরানকে দায়ী বলে গণ্য করব এবং সেই অনুযায়ী ইরানকে জবাব দেব।

এদিকে বাহরাইনভিত্তিক মার্কিন পঞ্চম নৌবহর জানিয়েছে, শনিবার থেকে আরব উপসাগরে জিসিসিভুক্ত দেশগুলো ‘সর্বাধুনিক নিরাপত্তা টহল’ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে বিমানবাহী রণতরী বহর ও পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম বি-৫২ বোমারু বিমান মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত এরপর থেকেই ওই অঞ্চলজুড়ে যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.