মহেশখালী দ্বীপকে ঘিরে উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা
মহেশখালী দ্বীপকে ঘিরে নেয়া হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্প স্থাপনের এক মহাপরিকল্পনা। দ্বীপের দক্ষিণ ও পশ্চিমে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে জেগে ওঠা চরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রকল্পের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চারটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, কয়লাভিত্তিক একাধিক তাপবিদ্যুত্ প্রকল্প এবং গ্যাস ও জ্বালানি তেলের ডিপো ও পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা। এরই মধ্যে এসব উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য দ্বীপের ভূমি ব্যবহারের একটি লে-আউট প্ল্যান প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়েছে। এটি চূড়ান্ত করতে গত বৃহস্পতিবার ১৯ সদস্যবিশিষ্ট সরকারের উচ্চপদস্থ একটি দল কক্সবাজার পরিদর্শন করছেন।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর নেতৃত্বে ১২টি মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা এ পরিদর্শন দলে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার তারা মহেশখালীর সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী ও নলবিলা পরিদর্শন করেন। পরে কক্সবাজারে ফিরে রাতে সার্কিট হাউজে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে করেন। গতকাল তারা কক্সবাজারের আরো কয়েকটি স্থান পরিদর্শন করেন। আজ তাদের পরিদর্শন শেষ হবে। মহেশখালী দ্বীপে বড় শিল্প-কারখানা স্থাপন প্রক্রিয়ায় ভূমি ব্যবহারে তিনদিনের সফরে থাকা এ দলের মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ২ হাজার ৪৯১ দশমিক ৮৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মহেশখালী দ্বীপে বাস করেন চার লক্ষাধিক মানুষ। গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের জন্য এ দ্বীপকে উপযোগী মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সামুদ্রিক যোগাযোগ সহজ হওয়ায় দ্বীপটিতে আমদানিকৃত গ্যাসের ডিপো স্থাপনসহ বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বণিক বার্তাকে জানান, মহেশখালী দ্বীপের নয়টি মৌজায় বিশাল এলাকাজুড়ে চর জেগে উঠছে। এরই মধ্যে ২৬ হাজার ৩০০ একর নতুন জেগে ওঠা চর শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সোনাদিয়া ও ঘটিভাঙ্গায় আছে কমপক্ষে ১৬ হাজার একর জমি। এ জমি দিয়ারা জরিপের মাধ্যমে হালনাগাদ করে সরকারের নামে রেকর্ড করতে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, শুধু মহেশখালী দ্বীপেই হচ্ছে চারটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। দ্বীপের ঘটিভাঙ্গা, সোনাদিয়া, কুতুবজোম ও ধলঘাটায় জেগে ওঠা ১৫ হাজার ৮৭২ একর জমিতে স্থাপন করা হচ্ছে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
জানা গেছে, জাইকার অর্থায়নে ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুত্ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এটিই দেশের এখন পর্যন্ত সর্ববৃহত্ উন্নয়ন প্রকল্প। ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এ বিদ্যুেকন্দ্রের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে মোট ১ হাজার ৪০০ একর জমি। অন্যদিকে একই স্থানে ৭০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরেকটি বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের জন্য ১ হাজার ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।
মহেশখালীতে স্থাপন করা হবে আমদানিকৃত গ্যাস ও তেলের ডিপো এবং পাইপলাইন। মহেশখালী থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত এসব পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। এসব ছাড়াও মহেশখালী চ্যানেলের পূর্বতীরে পেকুয়ায় আরেকটি বিদ্যুেকন্দ্রসহ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি সাবমেরিন ঘাঁটিও স্থাপন করা হবে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য দ্বীপের হোয়ানক, হেতালিয়া, করইয়ারদিয়া, কালারমারছড়া ও পানিরছড়া মৌজায় ৫ হাজার ৬০০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
বণিক বার্তা |