মানিকগঞ্জে বিষমুক্ত সবজি চাষে মুন্নাফ খানের চমক

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর-মানিকগঞ্জ: সবজি চাষে মানিকগঞ্জ জেলার অনুসরণীয় কৃষক হিসেবে পরিচিত মুন্নাফ খান। মেধাবী ছাত্র থেকে কৃষিশ্রমিক অতঃপর লাখপতি বনে যাওয়া এই কৃষক বিষমুক্ত সবজি চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন। ক্রমান্বয়ে সবজি চাষ করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন। তার দেখাদেখি এলাকার আরো অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকরা এখন কৃষি কাজে উৎসাহিত হচ্ছেন। কৃষিশ্রমকে তারা এখন সম্মানের পাশাপাশি দেখছেন লাভজনক খাতে।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার চঙ্গশিমুলিয়া গ্রামের রমজান খানের ছেলে মুন্নাফ খান। আর্থিক অনটনে অনেক কষ্টে ২০১৩ সালে ঘিওর সরকারী ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। দীর্ঘদিন বিভিন্ন চাকরির জন্য চেষ্টা করেও টাকার অভাবে তার ভাগ্যে জোটেনি চাকরি নামক সোনার হরিণ। অবশেষে নিরুপায় হয়েই তিনি আত্মনিয়োগ করেন কৃষিকাজে। আধুনিক চিন্তাধারা আর যুগপযোগী কৃষি পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার ফলে প্রথম বছরেই তিনি লাভের মুখ দেখেন। সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পুরো উদ্দোমে হয়ে যান সফল কৃষকে। গত ৫ বছরে সবজি চাষ করে তিনি আয় করেন ৩০ লাখ টাকার ওপরে। বর্তমানে নিজের ২ বিঘা ও অন্যের ৩ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে শসার চাষ করছেন। তিনি জানান, অন্যের কৃষিজমিতে একসময় শ্রম বিক্রি করেছেন। এরপর নিজেই শুরু করেন সবজি চাষ। তার ক্ষেতে সারাক্ষণ ৮/১০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।

মানিকগঞ্জ-ঘিওর সড়কের পাশে চঙ্গশিমুলিয়া ও মাইলাঘী এলাকায় সবজি ক্ষেতে কথা হয় মুন্নাফ খানের সাথে। তিনি জানান, ৫ বিঘা জমির বীজ, সার, কীটনাশক আর পরিচর্যার মজুরি মিলিয়ে খরচ পড়েছে আড়াই থেকে তিন লক্ষাধিক টাকা। বীজ লাগানোর দেড় মাসের মধ্যেই হাইব্রীড (অল রাউন্ডার-২) প্রজাতির শসা গাছে ফলন ধরে। কার্তিক থেকে শুরু করে মাঘ মাসের শেষ পর্যন্ত শসা বিক্রি করে লাভ হবে ৬ লক্ষাধিক টাকার ওপরে। উৎপাদিত শসা মানিকগঞ্জ আড়তসহ ঢাকার কারওয়ান বাজার ও আশুলিয়ার বাইপাইল কাঁচা বাজারে পাইকারী বিক্রি করেন। বর্তমানে প্রতি কেজি পাইকারী ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এছাড়াও তিনি মৌসুমী অনেক সবজী যেমন টমেটো, শিম, লাউ এর আবাদ করেও বেশ লাভবান হয়েছেন। এই সবজিতে কীটনাশকের ব্যবহার খুবই কম থাকে। সেটা এমন সময় এবং এত কম পরিমাণে ব্যবহার হয় যে মানুষের শরীরের কোনো ক্ষতির ঝুঁকি থাকে না।

পাশের ৮০ শতাংশ জমিতে শসা চাষ করেছেন কৃষক গোপাল ও দীলিপ সরকার। তারাও বাম্পার ফলনে বেশ লাভবান। দীলিপ সরকার জানান, সরকারী পর্যায়ে কৃষি ঋণ ও কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ প্রদান করেন তাহলে শসা চাষে আরো অনেকেই এগিয়ে আসবে। ফলনও বৃদ্ধি পাবে।

মুন্নাফ খান অনেকটা অভিযোগের সুরে বলেন, বীজ লাগানো থেকে বিক্রি পর্যন্ত কোনো কৃষি কর্মকর্তা শসা ক্ষেত পরিদর্শনে আসেননি। বালাই দমনে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। ঘন কুয়াশা ও সাম্প্রতিক সময়ে বৃষ্টির কারনে শসার ডগায় ও জালিতে পঁচন ধরে ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও শালিক, ফিঙে পাখির অত্যাচার থেকে ফলন রক্ষা করতে শসার মাচায় জাল দিয়ে আবৃত করা হয়েছে।

ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফউজ্জামান বলেন, মুন্নাফ খানের সফলতায় এলাকার অনেক চাষি শসা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সবজি চাষে তার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান অন্যান্য শস্য ফলনেও কাজে লাগবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.