মিউজিক ছাড়া থাকা সম্ভব নয়’

মিউজিক ছাড়া থাকা সম্ভব নয়

 

সাত বছর বয়সে মায়ের কিনে দেয়া হাওয়াইন গিটারে হাতেখড়ি। ১৩ বছর বয়সে প্রিয় ব্যান্ড আয়রন মেইডেনের বেজিস্ট স্টিভ হ্যারিসকে দেখে তত্ক্ষণাত্ সিদ্ধান্ত বেজই বাজাতে হবে। দীর্ঘ পথচলার শুরুটা এমনই। মাঝে ক্যান্সারসহ অনেক প্রতিবন্ধকতা এসেছে কিন্তু কিছুই থামিয়ে রাখতে পারেনি বেজবাবাখ্যাত সুমনকে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মিউজিকেও প্রথম বাংলাদেশী মিউজিশিয়ান হিসেবে নিজেকে নতুনভাবে মেলে ধরেছেন

বর্তমান ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাই?

হাতে এখন অনেক প্রজেক্ট। ন্যাশভিলের একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি একক বেজ ইনস্ট্রুমেন্ট বাজিয়ে অ্যালবাম বের করব। আটটি ইনস্ট্রুমেন্ট থাকবে এ অ্যালবামে। আগামী জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যালবামটির রেকর্ডিং। এছাড়া মহান ফাহিমের সঙ্গেও একটি দ্বৈত ইনস্ট্রুমেন্টাল অ্যালবাম বের করব যুক্তরাষ্ট্র থেকেই। আনিলার সঙ্গেও দ্বিতীয় অ্যালবামের কাজ শুরু করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম প্রকাশের কথা চূড়ান্ত হয়েছে। এখানে তিনটি যুক্তরাষ্ট্রের এবং পাঁচটি বাংলাদেশেরসহ মোট আটটি ব্যান্ড গান গাইবে। প্রত্যেকেই গাইবে ইংরেজি মৌলিক গান। বাংলাদেশ থেকে কারা যাবে, সেটা পরে ঠিক করে জানিয়ে দেয়া হবে।

 

তাহলে শ্রোতারা আপাতত অর্থহীনের কোনো অ্যালবাম পাচ্ছে না?

অর্থহীনের অ্যালবাম আগামী ২০১৬ সালেই বের করব। আমাদের গান বানাতে বেশি সময় লাগে না। যদি মনে হয় মিউজিক করব, তখন এমনিতেই সব হয়ে যায়। অসমাপ্ত দুই অ্যালবাম মাত্র চারদিনে করেছিলাম আমরা।

 

ন্যাম শোতে কীভাবে গেলেন এবং কেমন ছিল ওই সময়টা?

যুক্তরাষ্ট্রের বেজ গিটার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মাইকেল টোবিয়াস ডিজাইনের (এমটিডি) ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর আমি। ওখান থেকেই ন্যাম শোতে যাওয়ার প্রস্তাব পাই। ন্যাম শোতে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটা অন্য  রকম। পছন্দের সব মিউজিশিয়ানের সঙ্গে এভাবে বাজাতে পারব আগে ভাবিনি। সেখানে গিয়ে সংগীতের অনেক অজানা বিষয় জানতে পেরেছি। সবচেয়ে প্রিয় বেজ গিটারিস্ট ভিক্টর উটেনের সঙ্গেও দেখা হয়। ওখানে গিয়েই অনেক নতুন নতুন সুযোগ আসছে আন্তর্জাতিক কাজ করার। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আগামী ন্যাম শোতেও যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।

 

একটু পেছনে তাকানো যাক। মিউজিকের শুরুটা কেমন ছিল? ওয়ারফেইজ কি প্রথম ব্যান্ড ছিল আপনার?

না স্কুলে থাকতে বন্ধুদের নিয়ে একটি ব্যান্ড ফর্ম করেছিলাম। এর পর অনেক ব্যান্ডে বাজিয়েছি। কমন বেইজিস্ট ছিলাম, তো অনেক ব্যান্ডে গিয়েই একবার হলেও শো করা হয়েছে। জেমস ভাইয়ের সঙ্গে ফিলিংস ব্যান্ডেও বেশ কিছুদিন বাজিয়েছি। এর পর ওয়ারফেজে যোগ দিই। ওয়ারফেজ ছাড়ার পর একবার ভেবেছি আর মিউজিক করব না, অনেক করেছি। গিটার প্রসেসর, অ্যাম্প সব বিক্রি করে দিয়েছিলাম। পরে তিন মাসও হয়নি আবার সব কিনেছি। তখন উপলব্ধি করেছি, মিউজিক ছাড়া আমার পক্ষে থাকা সম্ভব নয়।

মাঝে তো আপনার ক্যান্সার ধরা পড়ল। সেটা কীভাবে সামলে নিলেন?

প্রথম ক্যান্সার ধরা পড়ে পাঁচ-ছয় বছর আগে। যখন জেনেছি ১০-১৫ দিন খুবই আপসেট ছিলাম। পরে মনে হলো যা হওয়ার হবে। যত দিন থাকব জীবন উপভোগ করতে চাই। ক্যান্সারের কথাটা প্রথমে কাউকেই জানাইনি। গত এক-দেড় বছর হলো সবাই জেনেছে। আমার ছেলে জেনেছে এক বছর আগে। ১১টা অপারেশন হয়েছে আমার। আমি এখন ভালো আছি, যদিও মাথায় টিউমার রয়েছে এখনো। তিন মাস পর পর চেকআপের জন্য যেতে হয় আমাকে। সোমবার (গতকাল) রাত ১টায় ফ্লাইট সিঙ্গাপুর যাচ্ছি আবার চেকআপের জন্য।

 

তার মানে এবারো ঈদ বাংলাদেশে করছেন না?

না বাংলাদেশে করা হচ্ছে না সম্ভবত। গত ঈদও করতে পারিনি, আমেরিকা ছিলাম। এবার চিকিত্সকের ওপর নির্ভর করছে। যদি ঈদে বাংলাদেশে না থাকি, তাহলে আমার ছেলেমেয়েও ঈদে সিঙ্গাপুর যাবে। টিকিট করাই আছে।

 

সন্তানদের কথা যেহেতু চলেই এল, ওদের সম্পর্কে জানতে চাই। ওরাও কি মিউজিকে আসবে?

আহনাফ ও অররা আমার দুই ছেলেমেয়ে। ছেলে এ লেভেল দিয়েছে আর মেয়ে ক্লাস ফাইভে পড়ে। ওরা পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত যদিও দুজনই ভালো গান গায়। দেখা যাক, ভবিষ্যতে  কী হয়।

 

সবার একটাই অভিযোগ ‘ভৌতিষ্ট’ কবে আসবে?

ভৌতিষ্টের ৭০ শতাংশ কাজ অনেক আগেই শেষ। মাঝে অসুস্থ ছিলাম পরে মিউজিক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম, তাই আর কাজ করা হয়নি। আগামী বছরের মধ্যেই কাজ শেষ করে টিভি চ্যানেলে দেব।

গানের বেসবাবাকে তো সবাই চেনে, ব্যক্তি সুমন নিয়ে একটু জানতে চাই।

ব্যক্তি সুমন নিয়ে বলার কিছু নেই। মিউজিক করতে ভালো লাগে, করি। মিউজিক আমার প্রফেশন না। ফ্যামিলি বিজনেস দেখতে হয়। ঘুরতে ভালো লাগে খুব। ইউরোপ, আমেরিকাসহ অনেক দেশই ঘুরেছি। বাংলাদেশে থাকলেও ঢাকায় খুব কম থাকি। এখনো ঢাকায় থাকতাম না যদি রকনেশন কনসার্টটা না থাকত। সব মিলিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। মাঝে মধ্যে সিনেমা দেখি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ দেখি সময় পেলে। এই তো চলে যাচ্ছে। ভালোই আছি। আর যত দিন ভালো আছি, তত দিন মিউজিক করেই যাব।

সাক্ষাত্কার নিয়েছেন রাশিকা তাসিনম কেয়া । বণিক বার্তা ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.