যে শৃঙ্খল থেকে মুক্তি নেই

চাইলেই বিয়ের বন্ধন থেকে মুক্তি পেতে পারেন না ইসরায়েলের নারীরা। এ জন্য তাঁদের স্বামীর অনুমতির অপেক্ষায় থাকতে হয়। কখনো কখনো তা বছরের পর বছর গিয়ে গড়ায়। স্বামীর মর্জি হলে তবেই মেলে মুক্তি। কাজেই সেখানে বিয়ের মধুর বন্ধন ঘটনাচক্রে কোনো কোনো নারীর জন্য হতে পারে এমন এক শৃঙ্খল, যা থেকে তাঁর মুক্তি নেই। ইসরায়েলে প্রচলিত ধর্মীয় আদালতের এমনই নিয়ম। এই নিয়মের পুরো সুবিধাই ভোগ করেন স্বামীরা। স্ত্রীকে ভালোবেসে নয়, কেবলমাত্র হয়রানি করতেই বিচ্ছেদে রাজি হন না তাঁরা। অনেকে সন্তানের ভরণপোষণ দেওয়া থেকে বাঁচতে চান। স্ত্রীকে বিয়েতে আটকে রাখতে নাম-পরিচয় বদলে অনেক স্বামী দেশান্তরীও হন।

এ রকম পরিস্থিতিতে বিয়ের বন্ধন পরিণত হয় শৃঙ্খলে। এই শৃঙ্খলে আটকা দেশটির অগণিত নারী। তাঁদের মধ্যে অনেকে রুখে দাঁড়ান। নিজের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেন। শেষ পর্যন্ত জয়ী হন। এমনই একজন জয়িতা ৩০ বছরের এক নারী, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। সাবেক স্বামীর নাম ওডেড গেজ। ওই নারীর দুই সন্তান রয়েছে। বিবাহিত জীবনে সুখী ছিলেন না তিনি। তাই বিচ্ছেদ চান। পাঁচ বছর ধরে টালবাহানা করছিলেন গেজ। কিছুতেই স্ত্রীকে বিচ্ছেদ ঘটানোর অনুমতি দিচ্ছিলেন না। ওই নারীও নাছোড়। দ্বারস্থ হন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের, যারা এমন পরিস্থিতিতে নারীদের আইনি সহায়তা দেয়। ধর্মীয় আদালতেও লড়াই চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত আদালত গেজের এই খেয়ালখুশির জন্য তাঁকে ভর্ৎসনা করেন। তাঁকে ধর্মীয় সম্প্রদায় থেকে বের করে দেওয়া হয়। গেজকে সামাজিক কর্মকাণ্ড, দৈনন্দিন প্রার্থনা, আত্মীয়ের শেষকৃত্যে যোগদান থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। লড়াকু ওই নারীর অনুরোধে রায়টি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও ছড়িয়ে দিতে বলা হয়। সেখানে গেজের ছবি দেওয়া হয়। এসব চাপের মুখে স্ত্রীকে বিচ্ছেদের অনুমতি দিতে রাজি হন গেজ। ধর্মীয় আদালতের পরিচালক সিমন ইয়াকোবি বলেন, ইসরায়েলে বছরে ১১ হাজার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এর মধ্যে এমন ‘শৃঙ্খলিত নারী’ থাকেন ১৩১ জন। তবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও মানবাধিকারের কর্মীরা বলছেন, শৃঙ্খলিত নারীদের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে আরও অনেক বেশি। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ইয়াদ লিসার কর্মী অ্যালিজা গেলিস এ রকম শৃঙ্খলিত স্ত্রীদের আইনি সহায়তা দেন। তিনি বলেন, তাঁদের কাছে এ রকম আইনি সহায়তা চেয়ে বছরে অন্তত ছয় হাজার অনুরোধ আসে।

তবে কিছু এমন মামলাও আছে, যেখানে স্বামীই বিচ্ছেদ চান। কিন্তু স্ত্রী তা দিতে অস্বীকার করেন। ধর্মীয় আদালতের প্রধান মুখপাত্র পরিচালক পিনহাস তেনেনবুয়াম বলেন, ওই নারীর লড়াইয়ের পর বিবাহবিচ্ছেদ-প্রক্রিয়া আরও সহজ করার কথা ভাবছেন আদালত। বিচ্ছেদ নিয়ে যেসব স্বামী জীবনসঙ্গীকে হয়রানি করেন, তাঁদের শাস্তির কথাও ভাবছেন। তিনি বলেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এসব স্বামীর গাড়ি চালানোর অনুমতি প্রত্যাহার, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, ব্যাংক হিসাব জব্দ বা দ্রুত কারাবাসের ব্যবস্থা করতে পারেন আদালত। অবশ্য এর মধ্যে এ রকম কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। জেরুজালেমে ধর্মীয় আদালত এসব অপরাধে স্বামীদের দ্রুত কারাদণ্ড দিতে বিশেষ সেল গঠন করেছেন। পুত্রবধূকে ১০ বছর ধরে বিচ্ছেদ না দেওয়ার ব্যাপারে নিজের ছেলেকে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে এক ব্যবসায়ীকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় গেজকেও কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে। আর এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে তাঁর স্ত্রীর সাহসী লড়াইয়ের ফলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.