রসে ভরা এক অভিধান
অভিধান বলতেই আমরা বুঝি অসংখ্য শব্দের সংগ্রহ, তাদের অর্থ, ব্যবহারবিধি ইত্যাদি। অভিধানে তাই আমরা শব্দের অর্থ খুঁজি, সাহিত্যরস খুঁজতে যাই না। কিন্তু ছড়াকার-শিশুসাহিত্যিক মাহবুবুল হাসান হেঁটেছেন চেনা পথের উল্টো দিকে। এটা হয়েছে দু’ভাবে – প্রথমত তিনি শিশুসাহিত্যের আপন বলয় ছেড়ে সংকলন করেছেন অভিধান, দ্বিতীয়ত সেই অভিধানে পুরে দিয়েছেন সাহিত্যরস।
অভিধানটি প্রথমে ছিল ”চট্টগ্রামী বাংলার অভিধান”। পরে চট্টগ্রামী শব্দসম্ভারের সাথে এর ইংরেজী অর্থও যুক্ত হয়ে বর্ধিত কলেবরে এটি হয় ”চট্টগ্রামী বাংলা-ইংরেজী অভিধান”।
মাহবুবুল হাসান তাঁর সংকলনে শব্দের অর্থই শুধু দেননি, পাশাপাশি দিয়েছেন ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসা চট্টগ্রামের লোকছড়া, লোকপ্রবাদ, লোকধাঁধা, বাগধারা ইত্যাদি। এমনকি কখনো-কখনো আধুনিক কালের ছড়াকারদের (যেমন, সুকুমার বড়ুয়া) ছড়া ব্যবহারেও কুণ্ঠিত হননি তিনি। এসব বৈশিষ্ট্য অভিধানটিকেই শুধু অনন্যতা দেয়নি, এটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের লোকছড়া, লোকপ্রবাদ, লোকধাঁধা, বাগধারা ইত্যাদি সংরক্ষণেও ছোট হলেও একটি পদক্ষেপ।
এ অভিধান পড়ে কেউ-যে চট্টগ্রামের লিপিহীন ভাষাটি শিখে ফেলতেপারবে – নয়। অচট্টগ্রামীদের কাছে এ অভিধান মূল্যহীন। কিন্তু যেসব চট্টগ্রামী ছোটবেলায় বড়দের কাছে চট্টগ্রামের লোকছড়া, লোকপ্রবাদ, লোকধাঁধা, বাগধারা ইত্যাদি শুনে-শুনে বেড়ে উঠেছেন, তাদের কাছে এর কেমন মূল্য হবে, সে আমি বুঝিয়ে বলতে পারবো না।
আর যেসব চট্টগ্রামী দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে, এ অভিধান তাদের সবাইকে না-হলেও কাউকে-কাউকে অন্তত স্মৃতিকাতর করে তুলবে, চোখকে করবে জলসিক্ত – এ আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি।
”চট্টগ্রামী বাংলা-ইংরেজী অভিধান” প্রকাশ করেছে ঢাকার অ্যাডর্ণ পাবলিকেশন।
হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী ।