রান্নাঘরের নিরাপত্তা কোথায় ।। বিস্ফোরণে প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ আতংক বাড়ছে
শুকলাল দাশ
রাজধানীর উত্তরায় গ্যাসের চুলার বিস্ফোরণে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে একই পরিবারের পিতা ও দুই পুত্রের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা সংশ্লিষ্ট সব মহলকে জানিয়ে দিল আবাসিকের (বাসা-বাড়ির) গ্যাস সংযোগ কতটা অনিরাপদ। চট্টগ্রামেও দীর্ঘদিনের পুরনো গ্যাস সংযোগ লাইন নিয়ে শহরের মানুষ এখন বেশ উদ্বিগ্ন। রান্নাঘরের গ্যাস সংযোগে ছিদ্র বা ত্রুটির কারণে প্রতিবছরই সারাদেশে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বিশেষ করে গ্যাস লিকেজ হয়েই এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এ ধরনের দুর্ঘটনার দায়ভার কে নেবে, ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে করণীয়টাই বা কে করবে? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিছু বাণী-বিবৃতির মাধ্যমেই তাদের দায় সারার চেষ্টা করেন। এতে তারা পার পেয়ে গেলেও জননিরাপত্তা থেকে যায় অরক্ষিত। এর একটি বিহিত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা। নগরীর জামালখান এলাকার বাসিন্দা কামরুজ্জামান বলেন, এমন ঘটনা চট্টগ্রামেও ঘটতে পারে- এ আশংকা অমূলক নয়। শুক্রবার ঢাকায় গ্যাসের চুলা বিস্ফোরণে একটি পরিবারের পুড়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটতে পারে যে কোন স্থানে। সাধারণ মানুষ তো জানে না কোথায় লিকেজ, কোথায় বিপদ। এই বিপদজনক পরিস্থিতি দেখে কর্তৃপক্ষ কি আদৌ কোন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ কিম্বা তদারকির ব্যবস্থা নেবে- এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তিনি আরো জানান ঢাকার ঘটনার ব্যাপারে ঐ পরিবারের লোকজন বেশ কিছুদিন থেকেই বাড়িওয়ালাকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাড়িওয়ালা তাতে কর্ণপাত করেননি। এরকম ঘটনা আমাদের চট্টগ্রামেও হরদম হচ্ছে। কোন সমস্যার কথা বলা হলে বাড়িওয়ালারা খুব সহজে মাথা ঘামান না। ফলে ঘটে মারাত্মক দুর্ঘটনা।
এই ব্যাপারে নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া আজাদীকে জানান, একটি সুন্দর-বাসযোগ্য ও নিরাপদ নগরী গড়ার জন্য নিরাপদ গ্যাস সংযোগ লাইনের প্রয়োজনীয়তা সবার আগে। তবে এই ক্ষেত্রে নিজ নিজ আবাসিক লাইন নিজ দায়িত্ব দেখা উচিত। যখনই কোনো ত্রুটি দেখা দিবে তখনই সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত। যেভাবে আমাদের আবাসিকের লাইন গুলো গেছে, এতোগুলো লাইন দেখার মতো জনবল কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির নেই। তবে মেইন লাইনগুলো নিয়মিত ভাবে দেখ-ভাল করা উচিত কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির।
এদিকে নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বলার সময়ে অনেকেই জানান, বাসা-বাড়ির মানুষ নিজেদেরকে প্রতিনিয়ত অনিরাপদ ভাবছেন। অপঘাতে মৃত্যু কখন যে কাকে কোন ঘটনায় কেড়ে নেবে তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
তবে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যে কোনো সময়-যে কোনো জায়গায় আমাদের পাইপ লাইনে ত্রুটি বা লিকেজের খবর পাওয়ার সাথে সাথে টিম গিয়ে তা সমাধান করে।
এই ব্যাপারে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের জিএম (মার্কেটিং) সুধীর কুমার সাহা রায় আজাদীকে জানান, উত্তরায় যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি রান্নাঘরে নিজেদের ত্রুটির কারনে ঘটেছে। তবে আমাদের কাছে যখনই কোনো পাইপ লাইনে ত্রুটি বা লিকেজের কথা জানানো হয় আমরা সাথে সাথে তার ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আমাদেরকে ঠিকাদার বা এলাকার লোকজন জানালে আমাদের টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত তার সমাধান করে থাকে। তবে এই ধরনের ঘটনার জন্য গ্রাহকদেরকে সচেতন হওয়ার জন্য তিনি আহবান জানান।
পুলিশ ও হাসপাতালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৪ মাসে রাজধানীতে গ্যাস সংযোগের আগুনে দগ্ধ হয়ে নারী, শিশুসহ ২৪ জন নিহত হয়েছেন। এ সময়ে দেড় শতাধিক মানুষ গ্যাসের সংযোগ ও চুলার আকস্মিক বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে আবাসিক গ্যাস সংযোগ ও চুলায় দুর্ঘটনা বেড়েছে। এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ গ্যাসলাইনে ছিদ্র বা ত্রুটি। ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ সংযোগের কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা।
গ্যাস কোম্পানি সংযোগ দেয়ার পর থেকে কখনোই সংযোগ লাইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে আসেনা অভিযোগ করেছেন নগরীর অধিকাংশ মানুষ।
সৌজন্যে: দৈনিক আজাদী।