রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আরো অবনতি
সাকিব তনু
গত জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা ছিল ৮৯টি। তিন মাস পর সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩০টিতে। একইভাবে লোকসানি শাখা বেড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য তিন বাণিজ্যিক ব্যাংক জনতা, অগ্রণী ও রূপালীরও। সব মিলিয়ে তিন মাসেই (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এ চার ব্যাংকের লোকসানি শাখা ২৪৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০৩টি।
এ সময়ে অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেড়েছে অনেক। মূলধন ঘাটতি বেড়েছে জনতা ব্যাংকের।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সার্বিক পারফরম্যান্সে অবনতি হওয়ায় গত ১৮ নভেম্বর সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করেই পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা চেষ্টা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত পর্ষদে তুলে ধরতে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তথ্যমতে, সেপ্টেম্বর শেষে জনতা ব্যাংকের লোকসানি শাখা ৭০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২টিতে। অগ্রণী ব্যাংকের লোকসানি শাখা ৬৬ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২টিতে। রূপালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা ২১ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৯টি। সারা দেশে বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের শাখা রয়েছে ১ হাজার ১৮৯টি, অগ্রণীর ৯২৮টি, রূপালীর ৫৪৭টি ও জনতা ব্যাংকের ৯০২টি।
জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফরিদ উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, শাখাগুলোয় কোর ব্যাংকিং সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। ফলে এসব শাখার ব্যয় ৩-৫ লাখ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে অনেক শাখা লোকসানে চলে যাচ্ছে। এটা শিগগিরই কেটে যাবে। তবে কিছু শাখা মুনাফায় আনতে ২০১৬ সালের পুরোটা লেগে যাবে।
এদিকে জুন শেষে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। জুন শেষে ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ৯২ শতাংশ খেলাপি ছিল। সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে বিতরণ করা ঋণের ২২ দশমিক ২ শতাংশ।
একইভাবে জুন শেষে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫২২ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের এ হার ব্যাংকটির ওই সময় পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তিন মাসের ব্যবধানে সেপ্টেম্বরে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা, বিতরণ করা ঋণের যা ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ জুনের তুলনায় সেপ্টেম্বরে কিছুটা কমলেও এখনো তা বিতরণ করা ঋণের ২৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণও সেপ্টেম্বরে সামান্য কমলেও এখনো তা ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৩৮ শতাংশ। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটি মনে করে রাষ্ট্রায়ত্ত এসব ব্যাংক তাদের শ্রেণীকৃত ঋণের বড় অংশ আদায়ে ব্যর্থ হবে। এতে আবারো মূলধন সংকটে পড়বে ব্যাংকগুলো। বর্ধিত ঋণ সুবিধার (ইসিএফ) পঞ্চম ও ষষ্ঠ কিস্তির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য করে সংস্থাটি।
এ সমস্যা সমাধানে শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ে আগ্রাসী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। ঋণদানের ক্ষেত্রেও আরো কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। আইএমএফ মনে করে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাংকগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা পালনে তারা (ব্যাংকগুলো) আন্তরিক হলে অবস্থার উন্নতি হতে পারে।
তথ্যমতে, জুন শেষে সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরেও ২ হাজার ১৫ কোটি টাকা ঘাটতি রয়ে গেছে ব্যাংকটির। একই সময়ে রূপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ৫৫৪ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে তা কিছুটা কমলেও এখনো ৩৭৪ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে ব্যাংকটির। তবে জনতা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি জুনের তুলনায় সেপ্টেম্বরে বেড়েছে বেশ। জুনশেষে ব্যাংকটির ৩৪৫ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি থাকলেও সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬৩ কোটি টাকা।
মূলধন ঘাটতি পূরণে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে ব্যাংকগুলো। চিঠিতে মূলধন সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সোনালী ব্যাংক ১ হাজার ৫০ কোটি, জনতা ব্যাংক ৬৬৩ কোটি ও রূপালী ব্যাংক ১৪৬ কোটি টাকা মূলধন সহায়তা চেয়েছে। সূত্র: বণিক বার্তা।