রুদ্র-তসলিমা, একটি কবিতা এবং তার পটভূমি
আহমেদ জহুর
১৯৯১ এর মার্চে তথা মৃত্যুর মাস তিনেক আগে প্রতিবাদি রোমান্টিক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৯৫৬-১৯৯১) এসেছিলেন ইত্তেফাক ভবনে। আমি তখন সাপ্তাহিক রোববার-এর নির্বাহী সম্পাদকের অর্পিত দায়িত্বে।
রুদ্র একা নয়, তার সাথে এসেছিল তসলিমা নাসরিনও। আমার অন্যতম প্রিয়বন্ধু কথা-সাহিত্যিক ইসহাক খান ছিলেন এ কবিজুটির একান্তজন। আমার অনুরোধে তিনি রুদ্র ও তসলিমাকে সাথে নিয়ে ‘রোববার’ অফিসে এসেছিলেন।
রুদ্রের সাথে আমারও সখ্য ছিল। কাঁটাবনের ‘ইত্যাদি’ প্রেসে কবি-দম্পতি অসীম সাহা-অঞ্জলি সাহা, রুদ্র-তসলিমা এবং কখনো সকনো সাহিত্যিক-সাংবাদিক ইসহাক খানও
অংশ নিতেন কবিতার আড্ডায়। কত না বিচিত্র বিষয়ে আলোচনা হতো অাড্ডায়। সেইসব প্রাণবন্ত আড্ডা এখন কেবলই স্মৃতি।
যা-হোক, রোববার অফিসে সেদিন অনেক বিষয়ে কথা হয়েছিল রুদ্র-তসলিমা-ইসহাকের সাথে। মনে পড়ে, ওদের জন্য আমার অফিস সহকারি মাখন বাবুকে দিয়ে দুটি কোকের বোতল আনিয়েছিলাম, যা আমরা চারজনে ভাগ করে খেয়েছিলাম। ইসহাক ও আমি অর্ধেক করে গ্লাসে ঢেলে খেয়েছিলাম এবং রুদ্র-তসলিমা এক বোতলে দুটি পাইপ লাগিয়ে কোক পান করেছিল। সেদিন ওদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ‘এতই যখন সৌহার্দ্য, তাহলে দাম্পত্যের অবসান হলো কেন?’ জবাবে রুদ্র বলেছিল, ‘দাম্পত্য জীবন-জৈবিকতায় অপরিহার্য হলেও, অনেকটা ঠুনকো বিষয়। আর সম্পর্ক, সেতো চিরজীবনের বন্ধন। আমরাতো দুজনই কবি, কবিতার সাথেই আমাদের সহবাস।’
তসলিমার সাথে আমার তেমন হৃদ্যতা ছিল না। ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্যের অবসানকালে আমি সাপ্তাহিক সন্দ্বীপে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলাম, যাতে তসলিমার সাক্ষাতকারও ছিল। প্রতিবেদনটি ছাপা হলে তসলিমা ময়মনসিংহ থেকে আমাকে ফোন করে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন। ওই ফোনটি রিসিভ করেছিলেন আমার আরেক অন্যতম বন্ধু-কবি ও সাংবাদিক সালেম সুলেরী। সুলেরী তখন সন্দ্বীপ-এর নির্বাহী সম্পাদক।
রোববার অফিসে সেদিন আলোচনার মধ্যে তসলিমার পুরুষ-বিদ্বেষও স্থান পেয়েছিল। আলোচনার সারাংশে তসলিমাকে বলেছিলাম, ‘আপনি নারীদের সুখ-সুবিধা নিয়ে লিখছেন ভাল কথা, কিন্তু পুরুষ-বিদ্বেষ মানসিকতা ঠিক নয়। কারণ নারী-পুরুষের সম্মিলনই জীবনের সৌন্দর্য।’ প্রত্যুত্তরে তসলিমা বলেছিলেন, ‘আমি পুরুষ দেখেছি, এটা যার যার দর্শন।’
তসলিমা নাসরিনের কথপোকথনের আলোকে কয়েক দিনের মধ্যে আমি একটি কবিতা শিখেছিলাম, ‘পুরুষ-নারী এবং সৌন্দর্য’ নামে, যা তসলিমা নাসরিনকে উৎসর্গকৃত এবং পরে যা দৈনিক আজকের কাগজ-এ ছাপা হয়েছিল। কবিতাটি আমার একক কাব্যগ্রন্থ ‘বেদনার বৃষ্টি’-তেও স্থান পেয়েছে। বেদনার বৃষ্টি প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। বিদগ্ধ পাঠকদের জন্য গ্রন্থে প্রকাশিত কবিতাটি এখানে সংযুক্ত করা হল।
———————-
১৯ অক্টোবর, ২০১৭
দুপুর ০২:৪৭
খিলগাঁও, ঢাকা।
azohur2002@gmail.com