রোনালদোর হ্যাটট্রিক : স্পেন-পর্তুগাল নাটকীয় ড্র

আগের তিন বিশ্বকাপে মাত্র ৩ গোল। বিশ্বকাপে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর এমন পারফরম্যান্স ভক্তদের মন ভরাতে পারেনি যেন! কিন্তু চতুর্থ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই যেন ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকে। সেই সঙ্গে ঢুকে পড়লেন ‘গ্রেট শো অন আর্থের’ হ্যাটট্রিকের রেকর্ডে। শুধুকি তাই ৩ গোলে এগিয়ে থাকা স্পেনকে ম্যাচের শেষ মুহুর্তে হতাশ করেন যাদুকরি এক ফ্রি কিকে। এর আগে বিশ্বকাপের পাঁচ বারের দেখাতে শুধু একবারই ড্র করেছিল পর্তুগাল। বাকি চার বার দেখেছিল হারের মুখ।
এবার অবশ্য জয়ের সুযোগ এসেছিল কিন্তু একা রোনালদো কিভাবে জেতাবেন নিজ দলকে! তবে, বিশ্বকাপসুলভ টান টান উত্তেজনাকর খেলার জন্য মুখিয়ে থাকা ফুটবল ভক্তদের দারুণ এক ৯০ মিনিট উপহার দিল ২০১০ বিশ্বকাপ জয়ী স্পেন ও রোনালদোর পূর্তগাল। হ্যা, স্পেনের বিপক্ষে মাঠে খেলেছে রোনালদোর পর্তুগালই। কারন, তিনি ছাড়া পূর্তগালকে জেতানোর যে কেউ ছিলনা। মাঠের অপর প্রান্তে দিয়েগো কস্তা স্প্যানিশ শিবিরকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছিলেন প্রায়। কিন্তু শেষমেষ রোনালদো কারিশমায় ‘বি’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে স্পেনের ভাগ্যে জুটেছে ড্র’র হতাশা।
শুরুতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দুই গোলের জবাবে দুই গোল করলেন দিয়েগো কস্তাও। এরপর স্পেনকে ম্যাচে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়েছিলেন ফার্নান্দো নাচো। কিন্তু শেষে আবার রোনালদো জাদু। দুর্দান্ত ফ্রি-কিকে সমতা ফেরান পর্তুগিজ অধিনায়ক। রাশিয়া বিশ্বকাপের ‘বি’ গ্রুপে আইবেরিয়ান উপদ্বীপের দুই দেশের রোমাঞ্চকর লড়াইটি শেষ হয়েছে ৩-৩ গোলের সমতায়। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে স্পট কিকে বল জালে পাঠান রোনালদো। ডি-বক্সের ঠিক ভেতরে রিয়াল মাদ্রিদ সতীর্থ নাচো ফার্নান্দেস রোনালদোকে ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ডান দিক দিয়ে জোরালো শটে জাল খুঁজে নেন পর্তুগিজ অধিনায়ক। দেশের পক্ষে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চার বিশ্বকাপে গোল করলেন পর্তুগাল অধিনায়ক। ২০১৬ থেকে ২০১৮ নিজের চতুর্থ বিশ্বকাপে এ গোল ছিল নিজেকেই ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রথম বার্তা। অন্যদিকে স্পেনের বিপক্ষে এই ম্যাচের আগে ৩৪০ মিনিটে খেলে একটি গোলও করতে পারেননি রোনালদো।
এরপর শুরু হয় স্পেনের নায়ক দিয়াগো কস্তার পাল্লাপাল্টি লড়াই। ২৪ তম মিনিটে ফিরতি আক্রমণ থেকে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান দিয়েগো কস্তা। বল পেয়ে এগিয়ে যান ব্রাজিলে জন্ম নেওয়া স্পেনের এই ফরোয়ার্ড। পায়ের কারিকুরিতে দুই ডিফেন্ডারের চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে ঠান্ডা মাথায় দারুণ শটে বল জালে পাঠান কস্তা। ভিএআর প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েছিলেন রেফারি। বল রিসিভ করার আগে পেপেকে ফেলে দিয়েছিলেন কস্তা। তবে সেটি ফাউল না হওয়ায় গোল বাতিল হয়নি। ২৭তম মিনিটে দলকে প্রায় এগিয়েই নিচ্ছিলেন ইসকো। তার শট ফেরানোর কোনো সুযোগই ছিল না গোলরক্ষক পাত্রিসিওর। কিন্তু বল ক্রসবারের নিচের দিকে লেগে গোললাইনে পড়ে মাঠে ফিরে। ৪৪তম মিনিটে পর্তুগালকে আবার এগিয়ে নিলেন রোনালদো। পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলারের এই গোল যেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক দাভিদ দে হেয়ার উপহার। ডি-বক্সের বাইরে থেকে নিচু শট তার গ্লাভস ফস্কে জালে জড়ায়। পিছিয়ে পড়া স্পেনকে ৫৪তম মিনিটে আবার সমতায় ফেরান কস্তা। তার এই গোলে অবশ্য বড় অবদান আছে বুসকেতসের। দাভিদ সিলভার ক্রসে বাইলাইন থেকে হেডে বার্সেলোনা মিডফিল্ডার খুঁজে নেন কস্তাকে। গোলের অমন সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেননি অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ মিডফিল্ডার। ম্যাচের শুরুতেই রোনালদোকে ডি-বক্সে ফাউল করে যেন খলনায়ক হয়ে গেছিলেন নাচো। সেই ভুল ৫৮তম মিনিটে শোধ করে দলকে এগিয়ে নেন এই ডিফেন্ডার। ডি-বক্সের বাইরে থেকে তার কোনাকুনি শট পোস্টের ভেতর দিকে লেগে জড়ায় জালে।
কিন্তু বাকি ছিল রোনালদোর জাদু। ৮৭তম মিনিটে চমৎকার এক ফ্রি-কিক গোলে দলকে সমতায় ফেরান রোনালদো। ডান পায়ের নিখুঁত শটে বল ক্রসবার ঘেঁষে পৌঁছায় জালে। ফেরানোর চেষ্টাই করতে পারেননি ডি গিয়া। বিশ্বকাপে রোনালদোর এটাই প্রথম হ্যাটট্রিক। ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরে স্পেনের বিপেক্ষে কোনো খেলোয়াড়েরও এটা প্রথম হ্যাটট্রিক। তবে বিশ্বকাপের হ্যাটট্রিকের ইতিহাসে এটি ৫১ তম। মানবজমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.