‘শঙ্খচিলও সফল ছবি হবে’
রুবেল পারভেজ |
আসছে পহেলা বৈশাখ মুক্তি পাচ্ছে ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষ নির্মিত ছবি ‘শঙ্খচিল’। এ উপলক্ষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিতে সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। অনুষ্ঠান শেষে টকিজের মুখোমুখি এ নির্মাতা—
‘মনের মানুষ’-এর পর ছয় বছরের বিরতি। তার পর নির্মাণ করলেন ‘শঙ্খচিল’। সব মিলিয়ে কেমন লাগছে?
বাংলাদেশে ছবি নির্মাণের ব্যাপারে আমার ভাগ্য অত্যন্ত সুপ্রসন্ন। বাংলাদেশের মানুষ সবসময়ই আমাকে সানন্দে গ্রহণ করে। আমার ছবির প্রতি এখানকার মানুষের বাড়তি ভালোবাসাই পুনরায় আমাকে এ দেশের ছবি নির্মাণে টেনে আনে। পদ্মা নদীর মাঝি ও মনের মানুষ তার বড় উদাহরণ। যে কারণে আগের অভিজ্ঞতা ও সাড়াই এ ছবি নির্মাণে ভেতর থেকে আমাকে তাগিদ দিয়েছে। পহেলা বৈশাখে ছবিটি দুই বাংলায় মুক্তি পাবে। আশা করি, শঙ্খচিলও সফল ছবি হবে।
ছবিটির গল্প, চরিত্র নিয়ে বলুন
শুরুতেই বলব এটি ভালোবাসার ছবি, আনন্দের ছবি। এতে দুঃখ আছে, আছে বিষাদ। সবকিছু ছাপিয়ে এটা বাঙালির ছবি। ছবিটির মূল গল্প সীমান্ত বা কাঁটাতারকে ঘিরে না হলেও সেখানকার অপ্রিয় কিছু ঘটনার ছোঁয়া আছে। আবার দেশভাগও এ ছবির বিষয় নয়, দেশভাগের স্মৃতিই উঠে এসেছে তাতে। মূলত এখনকার সময়ের একটা শিক্ষিত পরিবারের গল্প ধারণ করবে শঙ্খচিল। আর ছবির নাম শঙ্খচিল রাখা হয়েছে প্রতীকী অর্থে। ছবির গল্পটা যাকে ঘিরে আবর্তিত, সেই রূপসা কখনো শঙ্খচিলের মতো উড়তে চায়। আর পাত্রপাত্রী নির্বাচনের বেলায় আমার সব অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। ছোট ছোট চরিত্রও আমার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেটিও এখানে বজায় রাখার চেষ্টা করেছি।
পদ্মা নদীর মাঝি মুক্তির প্রায় দুই যুগ পরও এখনো আলোচনা, কথাবার্তা হয়। শঙ্খচিল কি সে রকম কিছু করতে পারবে বলে মনে হয়?
শঙ্খচিল নিয়ে আমি আশাবাদী। এর বড় কারণ প্রচণ্ড অনুভূতির জায়গা থেকে ছবিটি নির্মাণ করেছি। সেটা গল্প নির্বাচন থেকে শুরু করে চিত্রনাট্য, শুটিং, পোস্ট প্রডাকশন সবক্ষেত্রে। মনে রাখতে হবে, পদ্মা নদীর মাঝি যখন নির্মাণ করেছিলাম, সে সময়ের চিন্তা-ভাবনা, সমাজ সবকিছু এ সময়ের চেয়ে অন্য রকম ছিল। এসবের রূপ হয়তো বদলেছে, কিন্তু ভেতরের বিষয়গুলো এখনো রয়ে গেছে। অন্যদিকে শঙ্খচিলও সময়কে ধারণ করে। গল্পটি এ সময়ের হলেও উদাহরণ হিসেবে হয়তো বারবার ফিরে আসবে। কারণ আমরা তো একটি বৃত্তের ভেতরই আছি।
চলচ্চিত্র একদিকে সামাজিক হাতিয়ার, অন্যদিকে ব্যবসা। বর্তমানে ব্যাপারটি একটু গুলিয়ে যাচ্ছে কি?
আসলে ব্যবসাকে তো মাথায় রাখতেই হবে। প্রযোজকরা লগ্নি করে সে টাকাটা ফেরত পেতে চায়। আর আমরা চলচ্চিত্র নির্মাতারা কিন্তু আমাদের নিজেদের অনভূতি, সামাজিক চিন্তা-ভাবনাগুলোকে ব্যক্ত করার চেষ্টা করি। একজন নির্মাতার উদ্দেশ্যই থাকে তার চলচ্চিত্রে সময়ের একটা অনুলিপি রেখে যাওয়ার। আমি অনেক দিন ধরে ছবি করি। আমার ছবিতে সময়ের প্রতিফলন ঘটে। এটা চলতেই থাকবে। একটা ছবি নিজের মতো করে নির্মাণের পর যদি সেটা ব্যবসায়িক সাফল্য পায়, সেটা আসলে বোনাস। প্রযোজককে একটু মাথায় রাখতে হবে, কোনো ছবি ঘোষণা দিয়ে ব্যবসায়িকভাবে সফল করা যায় না। এটা দর্শকের ওপরই ছেড়ে দিতে হয়।
যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে আপনার মন্তব্য
সবাই মিলে ছবি করার রীতি অন্যান্য দেশের চেয়ে দুই বাংলায় পুরোপুরি আলাদা। আমাদের প্রথম শর্তই থাকে যার যার তার তার। এর পর দুই পক্ষ এক হয়ে কিছু একটা করতে চায়। কিন্তু যেটা আদৌ সম্ভব নয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এমনটি হয় না। এজন্য দুই দেশের সরকারকে আরো বিশদ পরিকল্পনা করতে হবে। দুই বাংলার চলচ্চিত্র যদি আরো মুক্ত হয়, তাহলে ব্যবসায়িক দিক থেকেও উভয়ই লাভবান হব। বণিক বার্তা।