শিল্পবর্জ্যে বিষাক্ত সুতাং নদীর পানি
নদীমাতৃক বাংলাদেশে দূষণ, দখল ও শাসনের কবলে পড়ে অনেক নদী আজ মৃত প্রায়। হবিগঞ্জ জেলা সদরের সুতাং নদীও এ অবস্থার বাইরে নয়। শিল্পবর্জ্যরে দূষণের কারণে নদীটি এখন মৃত প্রায়। নদীটি দূষণের কারণে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকার ফসলি জমি, জৈব-বৈচিত্রসহ নদীপাড়ের বাসিন্দারা এখন চরম হুমকির মুখে পড়েছেন। নদীর পাড়ের বাসিন্দারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, এ নদীর পানি দূষণে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিকর ভূমিকা রাখছে প্রাণ ও স্কয়ারের একাধিক প্রতিষ্ঠান। তারা হবিগঞ্জের ওলিপুর এলাকায় বিশাল এলাকা জুড়ে একাধিক শিল্প-প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে। এ সব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য সরাসরি সুতাং নদীতে ফেলা হচ্ছে। ওই বর্জ্য সুতাং নদীর ৪০ কিলোমিটার অতিক্রম করে কিশোরগঞ্জ জেলা হয়ে মেঘনায় পড়ছে। শুধু তাই নয়, সুতাং নদীতে মাছের দেখা মেলা ভার। বন্ধ হয়ে গেছে কয়েক হাজার জেলের আয়ের একমাত্র উৎস। এমন কি নদী পাড়ের মানুষরা এখন আর হাঁস পালন করতে পারেন না। নদীর পানির বিষক্রিয়ায় মারা যাচ্ছে হাঁস। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান জানান, এ নদীতে এখন যে পানি দেখছেন তাকে কোনো ভাবেই পানি বলা যাবে না। পানির সঙ্গে বর্জ্য মিলেমিশে বিষাক্ত তরল পদার্থে পরিণত হয়েছে। নদীর পানিতে এখন কোনো মানুষ নামতে পারে না। পশু-পাখি এ নদীর পানি পান করলে মারা যায়। নদী দূষণের প্রভাব পড়েছে স্থানীয়দের জীবনযাত্রায়। বর্ষা মৌসুমে পানি অন্য পুকুর ও জলাশয়ে গেলে সেই পুকুর-জলাশয়ের মাছ মারা যায়। ফসলি জমিতে আগের মতো আর ফসল উৎপাদন হচ্ছে না। স্থানীয় কৃষক ইউসুফ আলী জানান, নদী পাড়ের জমিতে কেউ ফসল ফলাতে পারছেন না। এ জমিতে কাজ করার কারণে অনেকে রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি জানান, ওলিপুরে প্রাণ কোম্পানির বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হয়। নদীর পানির রঙ হয়েছে মবিলের মতো। আমরা সাধারণ মানুষ কয়েক বছর ধরে খুব অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করছি।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ৬নং রাজিউড়া ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম বাবুল জানান, প্রায় দুই বছর আগে এলাকার কৃষি কাজে সেচের জন্য শৈলজুড়া খালটি পুনঃখনন করা হয়। ওই খাল দিয়ে প্রাণ ও স্কয়ারসহ নানা কোম্পানির দূষিত বর্জ্য ছাড়া হয়। এখন শৈলজুড়া খাল সুতাং নদীর সঙ্গে সংযোগের কারণে সব খালের পানি দূষিত হয়ে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হক আহমেদ শেখ কামাল জানান, আমরা এলাকাবাসীকে নিয়ে অনেকবার এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেয়েছি। কিন্তু কোম্পানিগুলো প্রভাবশালী হওয়ায় কিছুই করতে পারি না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপার) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, ওলিপুরে গড়া উঠা বড়-বড় শিল্প-কারখানার বর্জ্য ফেলে হচ্ছে সুতাং নদীতে। ফলে নদীটি ব্যাপকভাবে দূষণের কবলে পড়েছে। এ নিয়ে বাপাসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও স্থানীয়রা আন্দোলন করে যাচ্ছে। নদী দূষণের কারণে কৃষি, মৎস্য সম্পদ, গবাদি পশু ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বড় ধরনের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। দৈনিক ডেসটিনি