শিশুরা খেলবে বেড়াবে ফুল পাখি দেখবে গান শুনবে আর বেশি বেশি পড়বে : রহীম শাহ
জহিরুল ইসলাম, দৈনিক সময়ের আলো ।
গত ২৩ জানুয়ারি ঘোষণা করা হয়েছে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ২০১৯। শিশুসাহিত্য বিভাগে এবারে পুরস্কার পাচ্ছেন রহীম শাহ। চার দশক ধরে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত তিনি। চট্টগ্রামের চন্দনাইশে জন্ম নেওয়া রহীম শাহ মূলত শিশুসাহিত্য রচনা করেন। কবিতা-ছড়া, গল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধ, বিজ্ঞান, জীবনী, ভ্রমণকাহিনি, অনুবাদসহ সাহিত্যের সব শাখায় তিনি লিখেছেন এবং লিখছেন। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৪০। স্বপ্ন নিয়ে খেলা, আগামী দিনের রহস্য, আগুন ডানার পাখি, অ্যাডভেঞ্চার হিমছড়ি, আনন্দ রে আনন্দ, পৃথিবীর জন্মকথা, বেজি বাঘ বানরেরা, মানুষ করল আকাশ জয়, টোকাই টোকাই, একটু পেলে ছুটি, ঘুরে আসি প্রাণিরাজ্যে, বীরমানুষের ছড়া, সবার আগে কুসুম বাগে, পাখির জন্য ভালোবাসাÑ এসব তার উল্লেখযোগ্য বই। বাংলা একাডেমি পুরস্কার ছাড়াও এর আগে তিনি পেয়েছেন অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, সুভাষচন্দ্র বসু পুরস্কার, কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার, প্রতীকী ছড়াসাহিত্য পুরস্কার, পল্লীকবি জসীমউদ্দীন পুরস্কার, ভারতের অন্নদাশংকর রায় স্মৃতি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। সময়ের আলোর প্রজাপতির পাখার পক্ষ থেকে শিশুসাহিত্যিক রহীম শাহর একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন জহিরুল ইসলাম
প্রশ্ন : বাংলা একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার পাওয়ায় আপনার অনুভ‚তি কেমন?
রহীম শাহ : যেকোনো পুরস্কারই মানুষকে খুশি করে। অনুপ্রেরণা দেয়। স্বাভাবিকভাবেই বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়ে আমি নিজেকে অনেক অনেক সম্মানিত মনে করছি। কারণ শিশুসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার এবং এটি অনেক সম্মানজনকও। তাই এ পুরস্কার পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
প্রশ্ন : শিশুদের কোন ধরনের বই পড়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
রহীম শাহ : প্রথমত শিশুদের উপযোগী যেকোনো ধরনের বই শিশুদের পড়া উচিত। এ ছাড়াও তারা বিজ্ঞান বিষয়ক বই পড়বে। ভ্রমণকাহিনি পড়বে। রূপকথার গল্প পড়বে। অনেকে মনে করেন রূপকথা মানেই শিশুদের জন্য লেখা। আসলে কিন্তু তা নয়। রূপকথা বড়দের জন্যই বেশি লেখা হয়। বিজ্ঞান বিষয়ক লেখাও হাই। তবুও শিশুরা এসব লেখা পড়বে। কারণ যত বৈচিত্র্যময় লেখা ছোটরা পড়বে ততই তাদের জ্ঞানের জগৎ, ভাবনার জগৎ প্রসারিত হবে। আমাদের দেশের ছোটদের অনেকটা গÐির মধ্যে আটকে রাখা হয়। ফলে তাদের মেধার বিকাশ ঠিকমতো হয় না। তাই পড়ার ক্ষেত্রে তাদেরকে কোনো গÐিবদ্ধ করা যাবে না। সব ধরনের লেখাই তাদের পড়তে হবে।
প্রশ্ন : এ পর্যন্ত আপনার কতটি বই প্রকাশিত হয়েছে? এবারের বইমেলায় আপনার কী কী বই প্রকাশ পাচ্ছে?
রহীম শাহ : এ পর্যন্ত আমার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৪০। এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে দশটির মতো বই। এর মধ্যে রয়েছেÑ ছোটদের কবিতা, মজার ছড়া, হলুদ পাখির গান, বুনো হাঁসের অভিযান ইত্যাদি।
প্রশ্ন : লেখালেখি নিয়ে আপনার জীবনের সুখকর অনুভ‚তি কী?
রহীম শাহ : লেখালেখির মাধ্যমে
ছোট-বড় সবার কাছ থেকে আমি অনেক অনেক সম্মান ও ভালোবাসা পাই সেটাই আমার সবচেয়ে সুখকর অনুভ‚তি। আমি মনে করি, একজন লেখক তার পাঠকের কাছ থেকে যে ধরনের আন্তরিক ভালোবাসা পায় আর কেউ তা পায় না। তাই লেখক হিসেবে আমি যে ভালোবাসা মানুষের কাছ থেকে পেয়েছি এবং পাচ্ছি সেটাই আমার সবচেয়ে সুখকর অনুভ‚তি।
প্রশ্ন : লেখালেখি নিয়ে আপনার অতৃপ্তি বা অসম্পূর্ণতা কী?
রহীম শাহ : যারা লেখালেখি করে তাদের অসম্পূর্ণতা থেকেই যায়। আমি যদি দুইশো বছরও বেঁচে থাকি এবং লেখালেখি করি তবুও এ অসম্পূর্ণতা থেকেই যাবে। আর অতৃপ্তি যেটা রয়েছে সেটা হচ্ছে, কিছুদিন আগে আমার ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে আগের মতো আর চিন্তা করতে পারছি না, লিখতে পারছি না। তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছি লেখালেখি করার। আশা করি সবার ভালোবাসা এবং দোয়ায় আবারও আগের মতো লিখতে পারব।
প্রশ্ন : ছোটদের প্রতি আপনার উপদেশ…
রহীম শাহ : ছোটদের প্রতি আমার কোনো উপদেশ নেই। কারণ আমি যখন ছোট ছিলাম তখন কারও উপদেশ নিইনি। তাই আমিও ছোটদেরকে কোনো উপদেশ দিই না। আমি মনে করি, ছোটরা নিজেরাই নিজেদের ব্যাপারটা খুব ভালো বোঝে। তবে একটা কথা বলতে চাই, তারা বেশি বেশি লেখাপড়া করবে। পাঠ্যবইয়ের বাইরেও সব ধরনের বই পড়বে। ঘুরে বেড়াবে। নিজের দেশকে দেখবে, জানবে। যাদের পক্ষে সম্ভব তারা বিদেশে বেড়াতে যাবে। তারা খেলবে, টেলিভিশন দেখবে। ছবি আঁকবে। আর পাখি দেখবে। ফুল দেখবে। গান শুনবে।