শিশুর হাতে ইন্টারনেট অভিশাপ না আশীর্বাদ!

একবিংশ শতাব্দীর জয়জয়কার চলছে ইন্টারনেট দুনিয়ায়। মা-বাবার সাথে পাল্লা দিয়ে এখন শিশুরাও সময়ে-অসময়ে ব্যবহার করছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তা হোক কী পারদর্শিতা বড়দের চেয়ে কোনো দিক দিয়েই পিছিয়ে নেই শিশুরা। ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুল তথ্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনেক শিশু-কিশোর-তরুণ নিজেদের ঠেলে দিচ্ছে নানা অন্যায়-অপকর্মের দিকে। যার ফলে তারা ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে নৈতিকতা-মূল্যবোধ থেকে। লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ ইফতেখার
‘ইন্টারনেট’ আজ শিশুর জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্কুলের প্রজেক্টের উদ্দেশ্য থেকে শুরু করে নিজের পছন্দের কোনো গেম আর সিনেমা ডাউনলোডের জন্য শিশুরা ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। তবে বর্তমানে অভিভাবকদের ভয়ের একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে ‘শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার’।
কারণ ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন শুধু ক্লিক করলেই সামনে হাজির হয়ে যাচ্ছে পুরো দুনিয়ার বইয়ের ভাণ্ডার। এক ক্লিকেই চিঠি উড়ে যাচ্ছে হাজার মাইল দূরে। আজকের এই যুগে ব্যস্ততার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জীবনকে সহজ থেকে সহজতর করে দেয়ার প্রচেষ্টা। বিশাল বিশ্ব এখন আমাদের ক্ষুদ্র হাতের মুঠোয়। আর এ কারণেই বর্তমানে শিশুদের লালন-পালনের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের চিন্তার ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে নতুন বিষয় ইন্টারনেট।
শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য, পরিবারের ভালোর জন্য এবং সর্বোপরি দেশের উন্নতির জন্য তাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে ইন্টারনেটের ভালো দিকটির সাথে আর এরই সাথে তার মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিতে হবে ভালো-খারাপের পার্থক্য।
একসময় বাবা-মা সন্তানের হাতে খেলনা তুলে দিয়ে যতটা নিশ্চিন্তে থাকতেন, এখন ইন্টারনেট-সংযোগ সুবিধা দিয়ে ঠিক ততটাই চিন্তায় থাকেন। কেননা ইন্টারনেটের জাদুকরি প্রভাবে আপনার শিশু ভবিষ্যতে ভালো-মন্দ দুই পথেই অগ্রসর হতে পারে। আজকের যুগে শিশুদের ইন্টারনেট প্রীতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষতির কারণ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
তবে তাদের খারাপের হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার একেবারেই বন্ধ করে দেয়াটাও বোকামি। কেননা এর ফলে যেমন তারা জীবনযুদ্ধে পিছিয়ে পড়বে তেমনি হঠাৎ করে ইন্টারনেটের ব্যবহার বন্ধ করার ফলে তারা হয়ে উঠতে পারে বেপরোয়া, লাগামহীন।
শিশুদের সাথে জড়িত প্রত্যেকটি বিষয়ই সামাল দিতে হয় খুব সতর্কতার সাথে। একটু অসাবধানতা তাদের মানসিক বিকাশের পথে ভয়ঙ্কর বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর শিশুর যেকোনো পছন্দের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারটি কিছুটা স্পর্শকাতর।
শিশুরা ইন্টারনেটে কী করছে বা দেখছে তা জানার জন্য অভিভাবকদের কি তাদের পাশে বসে থাকার প্রয়োজন নেই। কারণ সারাক্ষণ নজরদারিতে রাখলে তারা অস্বস্তিবোধ করবে। তাদের মাঝে মাঝে নিজেদের জন্য স্পেস বা সময় দেয়া প্রয়োজন।
তবে যদি কখনো দেখা যায় যে, তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে এমন কিছু করছে বা দেখছে যা তাদের করা উচিত নয় সে ক্ষেত্রে যদি বকাঝকা করা হয় তাহলে ওই সময়টাতে হয়তো শিশুটিকে থামিয়ে রাখা সম্ভব। কিন্তু এর ফলে তার মধ্যে ধারণা জন্মাবে যে, এখানে এমন একটা কিছু আছে যেটা তাকে পরে জানতে হবে এবং সে ঠিকই অগোচরে তা পরে জেনে নেবে।
বর্তমানে প্রতিনিয়ত আমাদের ব্যস্ততা বেড়েই চলছে। বাবা-মা দু’জনেই চাকরির প্রয়োজনে প্রায় সারাদিনই বাইরে থাকছেন। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হলো বাবা-মায়ের সন্তানের সাথে কোয়ালিটি টাইম মেইনটেইন করা। দিনের মধ্যে যতটুকু সময়ই মা-বাবা সন্তানকে দেন না কেন ওই সময়ের মধ্যেই তাকে খারাপ-ভালো এই ধারণা দিতে হবে। আরেকটি জরুরি ব্যাপার হলো মা-বাবার অনুপস্থিতিতে শিশুটি কার তত্ত্বাবধানে থাকছে। অবশ্যই নির্ভরযোগ্য কারো কাছেই তাকে রাখা উচিত। তবে সারাক্ষণ এ ব্যাপারে চিন্তিত থাকলে চলবে না। কেননা শিশু ইন্টারনেট ব্যবহার করে শুধু খারাপ কিছুই তো আর শিখবে না, ভালো কিছুও তো শিখবে।
বাবা-মাকে প্রথমেই ইন্টারনেট সিকিউরিটি সিস্টেমটি ব্যবহার করতে হবে। শিশুটি যাতে তার উপযোগী সাইটগুলো পরিদর্শনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। আর তারপরও যদি কোনোভাবে অন্যায় কিছু দেখেই ফেলে তবে সেক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে জরুরি, তা হলো সে কি সেটার কোনো প্রয়োগ তার জীবনে করছে কি না বাবা-মায়ের তা পর্যবেক্ষণ করা, আর অবশ্যই তাকে তার ভুলগুলো সম্পর্কে বোঝানো।
সর্বপ্রথম শিশুকে বোঝাতে হবে। বাবা-মাকে তার জায়গায় নেমে এসেই, তার বন্ধু হয়েই সন্তানের আনন্দ-চাওয়াগুলো বুঝতে হবে। ইন্টারনেটের ব্যবহার একদম বন্ধ করে দেয়া যাবে না, তা সম্ভবও না। তবে তাকে তার উপযোগী বিষয়গুলো নিয়ে ধারণা দেয়া, শিশুদের জন্য যেসব সাইট-ব্লগ আছে সেসবের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া উচিত। বন্ধু হয়েই শিশুর দিকে বাড়িয়ে দিন আপনার পরিচর্যার হাত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.