শুভ নববর্ষ ১৪২৮ : আজ পহেলা বৈশাখ
আজ পহেলা বৈশাখ, বাংলা বছরের প্রথম দিন, প্রভাতের অলোকচ্ছটায় আবহমান এ বাংলার দিক-দিগন্ত উদ্ভাসিত করে আজ ভোরের নতুন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে আসবে বাংলা বছরে নতুন দিন। আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতিকে অগ্নিস্নানে শূচি করে তুলতে আবার এসেছে বৈশাখ। শুভ নববর্ষ ১৪২৮।
বাঙালির হাজার বছরের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, উৎসব, নৃত্য, নাট্য, গীত, বাউল গান, পালাগান, লোকাচার, প্রাত্যহিক জীবনযাপন প্রতিক্ষেত্রেই রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। সেই ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে ঝাঁকে ঝাঁকে থাকা ঐতিহ্যের সারাৎসার গ্রহণ করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সামনের দিকে। বর্তমানকে মেলাবার আর ভবিষ্যতের সুখস্বপ্ন দেখার, ছবি আঁকার। মুসলিম, হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এক পঙক্তিতে দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে গাইবে, ‘তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে’।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বর্ষবরণ উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর রমনার বটমূলে। এটি প্রায় ৫০ বছর ধরে আয়োজন করে আসছে দেশের শীর্ষস্থানীয় সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। তবে এবার করোনা ভাইরাসের জন্য কোন আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না।
কৃষির সঙ্গে বাংলা নববর্ষের ঘনিষ্ঠতা জড়িয়ে আছে এ সন প্রবর্তনের সূচনা থেকেই। মোগল সম্রাট আকবর প্রচলন করেন বাংলা সনের। এর আগে মোগল বাদশাহরা রাজকাজে ও নথিপত্রে ব্যবহার করতেন হিজরি সন। হিজরি চান্দ্র বছর, যা ন্যূনধিক ৩৫৪ দিনে পূর্ণ হয়। কিন্তু সৌর বছর পূর্ণ হয় ন্যূনধিক ৩৬৫ দিনে। বছরে প্রায় ১১ দিনের পার্থক্য হওয়ায় হিজরি সন আবর্তিত হয় এবং ৩৩ বছরের মাথায় সৌর বছরের তুলনায় এক বছর বৃদ্ধি পায়। কৃষকের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করতে হলে সারা দেশে একটি অভিন্ন সৌর বছরের প্রয়োজন। আর এ ধারণা থেকেই সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তা কার্যকর হয় তার সিংহাসন আরোহণের সময় অর্থাৎ ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই নভেম্বর থেকে। আকবরের নবরত সভার আমির ফতেউল্লাহ খান সিরাজী বাংলা সন প্রবর্তনের কাজটি সম্পন্ন করেন।
প্রথমে এর নাম ছিল ফসলি সন। পরে তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত হয়। বৈশাখ নামটি নেয়া হয়েছিল নক্ষত্র বিশাখার নাম থেকে। আর সেই থেকে ক্রমান্বয়ে নববর্ষের ব্যাপ্তি আরও বিস্তৃত হয়েছে। এখন এটি রূপান্তর হয়েছে বাঙালি লোকজ উৎসবে। কালের বিবর্তনে নববর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক পুরনো উৎসবের বিলুপ্তি ঘটেছে, আবার সংযোগ ঘটেছে অনেক নতুন উৎসবেরও। বাংলা সন। বৈশাখ। এ দুটির সঙ্গে হালখাতা জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য হয়ে। তবে পুরনো এ ‘হালখাতা’র ঐতিহ্য এখন খুব কমই দেখা যায়। যদিও অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি আজও পালিত হয়। তবে তা কম।