শেষ বলে মুস্তাফিজ জাদুতে টাইগারদের জয়

একুশে টেলিভিশন ।
টান টান উত্তেজনা। রাত যত গভীর হচ্ছে উত্তেজনা আরও বাড়ছে। যে উত্তেজনা মরুভূমির মাঠ থেকে ছড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের শহর-গ্রাম-বন্দরে। জয়ের জন্য ৬ বলে দরকার ৮ রান, ৫ বলে ৬, ৪ বলে ৬, এরপর রশিদ খান আউট, ৩ বলে ৫, ২ বলে ৫, ১ বলে আফগানদের জয়ের জন্য দরকার ৪ রান। শুরু হলো স্নায়ুর ওপর প্রচণ্ড চাপ। পুরো স্টেডিয়ামে নীরবতা। মুহুর্তেই মুস্তাফিজের জাদুতে বিজয় উল্লাসে মুশফিক, সেই সঙ্গে গোটা বাংলাদেশ। শেষ বলে জয় পেলো টাইগাররা।
এখন বুধবার পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচটি জিততে পারলেই ফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ। কথা রেখেছেন মাশরাফি।
আফগান রূপকথা থামিয়ে এশিয়া কাপে টিকে থাকল বাংলাদেশ। সুপার ফোর পর্বে টানা দুই হারে টুর্নামেন্ট থেকে আফগানদের বিদায় নিশ্চিত হলো। দুই ম্যাচ জিতে ভারত ফাইনালে পা দিয়ে রেখেছে। একটি করে জয় এখন বাংলাদেশ-পাকিস্তানের। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর আবুধাবিতে এই দুই দলের ম্যাচেই নির্ধারিত হবে এক ফাইনালিস্ট।
প্রথমে ব্যাট করে মাহমুদউল্লাহ ও ইমরুলের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে সাত উইকেটে ২৪৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। জবাবে সাত উইকেটে ২৪৬ রান করতে সমর্থ হয় আফগানিস্তান। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে মাহমুদউল্লাহ ম্যাচ সেরা হন।
রান তাড়া করতে নেমে ২৬ রানে দুই উইকেট হারায় আফগানরা। ইহসানউল্লাহ (৮) মুস্তাফিজের শিকার হন। সাকিবের থ্রোয়ে রান আউট হন রহমত শাহ (১)। শাহজাদ-হাসমতউল্লাহ শাহিদির ৬৪ রানের জুটি ভেঙেছেন মাহমুদউল্লাহ। ১০ রানে মিঠুনের হাতে জীবন পাওয়া শাহজাদ বোল্ড হন ৫৩ রান করে। আজগর আফগানের সঙ্গেও শাহিদির জুটি জমে গিয়েছিল। তারা ৭৮ রান যোগ করেন। ৬ ওভারে ৩৬ রান দেয়া মাশরাফি তৃতীয় স্পেলে ৩ ওভারে ১৫ রানে নেন দুই উইকেট যা ম্যাচে ফেরায় বাংলাদেশকে। মাশরাফিও পূর্ণ করেন ওয়ানডেতে ২৫০ উইকেটের মাইলফলক। মাহমুদউল্লাহর দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরেন ৩৯ রান করা আজগর। একপ্রান্ত আগলে থাকা শাহিদি বোল্ড হন ৭১ রান করে। পরে নবী-সামিউল্লাহ মিলে তোপ দাগাতে থাকেন। নবীর ২৮ বলে ৩৮ রানের বিস্ফোরক ইনিংসটা থামান সাকিব। সামিউল্লাহ ২৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। বাংলাদেশের মুস্তাফিজ-মাশরাফি দুটি করে উইকেট পান।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের ইনিংসটা ছিল হঠাত্ ঝড়ে এলোমেলো হওয়া এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞ প্রতিরোধে জেগে ওঠার জ্বালানিতে সমৃদ্ধ। রশিদ খান-মুজিবের স্পিন জুজু চেপে বসেনি এদিন। তারপরও ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ের সপ্তমে চড়ে বসা বাংলাদেশের ত্রাতা হয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ ও ইমরুল। ১২৮ রানের রেকর্ড জুটি গড়েছেন তারা যা ষষ্ঠ উইকেটে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগে সর্বোচ্চ ১২৩ রানের জুটি ছিল আল-শাহরিয়ার ও খালেদ মাসুদের গড়া, ১৯৯৯ সালে ঢাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।

আফগান স্পিনারদের তৈরি করা চাপের দেয়াল ভেঙেছেন মাহমুদউল্লাহ। খোলস ছাড়িয়ে রানের চাকা সচল করেছেন ধীরে ধীরে। ক্যারিয়ারের ২০তম হাফ সেঞ্চুরি করা এই ব্যাটসম্যান ফিরেছেন ৪৭তম ওভারে। খেলেছেন ৭৪ রানের (৩ চার, ২ ছয়) অসাধারণ ইনিংস। খুলনা-ঢাকা-দুবাই হয়ে আবুধাবি আসা ইমরুল দেখিয়েছেন অভিজ্ঞতার স্বরুপ। ভ্রমণ ক্লান্তি ছাপিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ছয় নম্বরে নেমে অনবদ্য ব্যাটিংয়ে তুলে নিয়েছেন ১৫তম হাফ সেঞ্চুরি। এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান অপরাজিত ছিলেন ৭২ রানে (৬ চার)।
রুবেল-মোসাদ্দেককে বসিয়ে ইমরুল-অপুকে একাদশে আনার সিদ্ধান্তটা কার্যকর হয়েছিল। যদিও ব্যাটিংয়ে শুরুতে ১৮ রানে শান্ত (৬), মিঠুনকে (১) হারিয়ে চিরাচরিত ধাক্কাটা ঠিকই এসেছিল ব্যাটিং লাইনে। তৃতীয় উইকেটে লিটন ও মুশফিকের ৬৩ রানের জুটিটা বিচ্ছিন্ন হতেই ছন্দপতনের শুরু। ১৯তম ওভারে রশিদ খানকে পরপর দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে লিটনের সম্ভাবনাময় ইনিংসটির অপমৃত্যু হয়। তিনি ৪১ রান করেন। তারপর সাকিব-মুশফিকের অপ্রত্যাশিত ‘বালকসুলভ’ ভুল বিপর্যয় ডেকে আনে। লিটনের দুই বল পর সাকিব (০) রানআউট হন, যেখানে রান নিতে রাজি ছিলেন না মুশফিক। এক ওভার পর একই কান্ডের শিকার এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। এবার নন-স্ট্রাইকে ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন ইমরুল। বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এদিন ওয়ানডেতে ৫ হাজার রান পূর্ণ করা মুশফিক রানআউট হন ৩৩ রানে। মাশরাফি ১০, মিরাজ ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। আফগানদের পক্ষে আফতাব আলম তিনটি উইকেট পান।

স্কোর কার্ড :

বাংলাদেশ ইনিংস :

লিটন দাস ক এহসানউল্লাহ ব রশিদ ৪১

নাজমুল হোসেন ক রহমত ব আফতাব ৬

মোহাম্মদ মিথুন এলবিডব্লু ব মুজিব ১

মুশফিকুর রান আউট (নবী/রশিদ) ৩৩

সাকিব রান আউট (শেনওয়ারি) ০

ইমরুল কায়েস অপরাজিত ৭২

মাহমুুদুল্লাহ ক রশিদ ব আফতাব ৭৪

মাশরাফি ক শেহজাদ ব আফতাব ১০

মেহেদি হাসান অপরাজিত ৫

অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-২, ও-৪) ৭

মোট (৭ উইকেট, ৫০ ওভার) ২৪৯

উইকেট পতন : ১/১৬ (শান্ত), ২/১৮ (মিথুন), ৩/৮১ (লিটন), ৪/৮১ (সাকিব), ৫/৮৭ (মুশফিকুর), ৬/২১৫ (মাহমুদুল্লাহ), ৭/২৩৬ (মাশরাফি)।

আফগানিস্তান বোলিং :

আফতাব : ১০-০-৫৪-৩ (ও-১),

মুজিব উর রহমান : ১০-০-৩৫-১ (ও-১),

নাইব : ৯-০-৫৮-০ (ও-২),

নবী : ১০-০-৪৪-০ (ও-২),

রশিদ : ১০-০-৪৬-১,

শেনওয়ারি : ১-০-৯-০।

আফগানিস্তান ব্যাটিং :

শেহজাদ বোল্ড ব মাহমুদুুল্লাহ ৫৩

এহসানউল্লাহ ক নাজমুল ব মুস্তাফিজুর ৮

রহমত রান আউট (সাকিব) ১

শাহিদি বোল্ড ব মাশরাফি ৭১

আসগর ক মাহমুদুল্লাহ ব মাশরাফি ৩৯

নবী ক নাজমুল ব সাকিব ৩৮

শেনওয়ারি অপরাজিত ২৩

রশিদ ক এন্ড ব মুস্তাফিজুর ৫

নাইব অপরাজিত ০

অতিরিক্ত (লে বা-৩, ও-৫) ৮

মোট (৭ উইকেট, ৫০ ওভার) ২৪৬

উইকেট পতন : ১/২০ (এহসানউল্লাহ), ২/২৬ (রহমত), ৩/৮৯ (শেহজাদ), ৪/১৬৭ (আসগর), ৫/১৯২ (শাহিদি), ৬/২৩৮ (নবী), ৭/২৪৪ (রশিদ)।

বাংলাদেশ বোলিং :

মাশরাফি : ১০-০-৬২-২ (ও-২),

নাজমুল : ৮-০-২৯-০ (ও-১),

মুস্তাফিজুর : ৯-১-৪৪-২ (ও-২),

মিরাজ : ৯-১-৩৬-০,

সাকিব : ৯-০-৫৫-১,

মাহমুদুল্লাহ : ৫-০-১৭-১।

ফল : বাংলাদেশ ৩ রানে জয়ী।

ম্যাচ সেরা : মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (বাংলাদেশ)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.