সংকট সামলাতে অর্থনীতির মোড় ঘোরাবে সৌদি আরব
তারল্য সরবরাহ ও ব্যাংক থেকে ঋণগ্রহণ দুই-ই কমেছে সৌদি আরবে। অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে সৌদি সরকার এখন বেশকিছু ভর্তুকি বাতিল ও করারোপের কথা ভাবছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম ক্রমে কমতে থাকায় বৃহত্তম রফতানিকারক দেশটি অর্থনীতির মোড় ঘুরানোর পরিকল্পনা করছে। খবর রয়টার্স ও আল-আরাবিয়াহ।
সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অক্টোবরে সৌদি আরবে এম৩ অর্থ সরবরাহ এক বছর আগের তুলনায় মাত্র ৩ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। সৌদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপাত্তে দেখা যায়, ২০১০ সালের নভেম্বরের পর থেকে এম৩ অর্থপ্রবাহের এটিই সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। অথচ পূর্ববর্তী মাস সেপ্টেম্বরেও এম৩ অর্থ সরবরাহ বছরওয়ারি হিসাবে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছিল।
অর্থপ্রবাহের আরো সংকুচিত পরিমাপ এম১ ও এম২— দুটিই এখন বহু বছরের নিম্নতম স্তরে। একই ভাবে বেসরকারি খাতে ব্যাংকঋণ মঞ্জুরের হার কমে ৫ শতাংশে ঠেকেছে। ২০১০ সালের নভেম্বরে সৌদি আরব যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের ধাক্কা সামলে উঠছিল, তখনো বেসরকারি খাতে ব্যাংকঋণের হার এর চেয়ে ঢের বেশি ছিল। সে মাসে এমন ঋণের হার ছিল ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এত দিন পর্যন্ত সৌদি সরকার তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে প্রবৃদ্ধির চাকা ঘূর্ণায়মান রাখতে সমর্থ হয়েছিল। কিন্তু অক্টোবরের তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, সরকারের সে কৌশল আর কাজে আসছে না।
চলতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার বাজেট ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে সৌদি আরব। এ অবস্থায় সৌদি নীতিনির্ধারকরা ব্যয়সংকোচনে মনোযোগী হয়েছেন। সরকারি ব্যয়সংকোচনের প্রভাব এরই মধ্যে অর্থ সরবরাহে চাপ সৃষ্টি করেছে।
লন্ডনভিত্তিক ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক অর্থনীতিবিদ জ্যাসন টুভে বলেন, আগে থেকেই সরকারি ব্যয় সংকোচনের আভাস দেখা যাচ্ছিল। এবারের তথ্য-উপাত্তে তারই প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
সৌদি সরকার আগামী মাসে ২০১৬ সালের বাজেট উন্মোচন করবে। এ বাজেটে কঠিন কৃচ্ছ্র কর্মসূচির প্রস্তাব থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সৌদি আরবের ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, তেলনির্ভর অর্থনীতির মোড় ঘুরাতে জ্বালানি ও পানি সরবরাহে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা হবে। এভাবে ব্যয়সংকোচনের পাশাপাশি সিগারেট ও কোমলপানীয়ের মতো অস্বাস্থ্যকর পণ্যে করারোপের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করা হবে।
সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান সে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব পালন করছেন। সৌদি আরবের অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিষয়ক সুপারকমিটির সভাপতি তিনি। এছাড়া তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম মূল্যায়নের জন্য গঠিত ন্যাশনাল পারফরম্যান্স সেন্টারেরও প্রধান। নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, স্থানীয় বাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, মূল্য সংযোজন কর আরোপ, পারমাণবিক ও সৌরশক্তিনির্ভর বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে।
সালমান বিন মোহাম্মদ বলেন, তেলের ওপর আমাদের অতিনির্ভরতা এবং আয়-ব্যয়ের খাত নির্ধারণ করাই মূল চ্যালেঞ্জ। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানির দাম বর্তমানে প্রতি ব্যারেল ৪৫ ডলার। সৌদি সরকার এক্ষেত্রে আরো দরপতনের কথা ভেবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এজন্য অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা হবে বলেও সৌদি যুবরাজ উল্লেখ করেন। নিউইয়র্ক টাইমস তার বরাতে লিখেছে, ‘যাতে করে তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৩০ ডলারে নামলেও সঞ্চয়ে হাত দেয়া ছাড়াই প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল রিয়াদের হাতে থাকে।’
নিউইয়র্ক টাইমস আরো জানায়, সৌদি সরকার সে দেশের খনিগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়ে সেগুলোয় করারোপের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে।
সাবেক বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের সময় সৌদি আরব বড় রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করেছিল। একই সঙ্গে সেসময় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ খাত বেসরকারি ও বিদেশী বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সাবেক বাদশাহর আমলেই সৌদি আরব বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দিয়েছিল।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বেসরকারি খাতে সৌদি নাগরিকদের অধিকতর অংশগ্রহণের পথ সুগম করলে দেশটির অর্থনীতি আরো সবল হবে।
বণিক বার্তা।