সমাজে রোবটের প্রভাব ভেবে দেখার আহ্বান বিজ্ঞানীদের
বিশ্বে সার্ভিস রোবটের সংখ্যা এখন ১ কোটি ২০ লাখ। এদের পাশাপাশি বিভিন্ন কারখানায় নিযুক্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট রয়েছে দেড় কোটি। রোবটের এ ক্রমবর্ধমান সংখ্যা মানুষের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে। বেকারত্বের পাশাপাশি অন্যভাবেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যম হচ্ছে রোবট। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও নীতি বিশারদরা রোবটের প্রভাব ভেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। খবর ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
রোবটের উপস্থিতির প্রভাব নিরূপণ ও অনৈতিক প্রয়োগ বন্ধে বিজ্ঞানীরা দ্য ফাউন্ডেশন ফর রেসপনসিবল রোবোটিকস নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন। ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতাদের মতে, গবেষক ও সরকারি নীতিনির্ধারকরা এত দিন সমাজজীবনে প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে মাথা ঘামাননি। রোবোটিকসের প্রভাবে বেকারত্বসহ নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা থাকে। লন্ডনভিত্তিক ফাউন্ডেশন ফর রেসপনসিবল রোবোটিকস বিভিন্ন দেশের সরকার ও ব্যবসায়ীদের এ বিষয়টি ভাবতে উত্সাহিত করবে।
শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির রোবোটিকস বিভাগের প্রফেসর নোয়েল শারকি নতুন এ সংগঠনের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, সামান্য দূরে অদেখা যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলোর কথা না ভেবেই আমরা রোবোটিকস বিপ্লবের পথে ছুটছি। প্রযুক্তি পুরোপুরি চড়াও হওয়ার আগেই আমাদের উচিত— একটু থেমে তার ভবিষ্যত্ সম্পর্কে ভাবা।
এত দিন পর্যন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবটের সংখ্যাই ছিল বেশি। কিন্তু সেবা খাতের যন্ত্রায়নের পাশাপাশি এ চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর রোবোটিকসের পূর্বাভাস, ২০১৮ সাল নাগাদ সেবা খাতে নিযুক্ত রোবটের সংখ্যা হবে ৩ কোটি ১০ লাখ।
রোবট এরই মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের যত্নআত্তি, রান্না, ঘরদোর পরিষ্কার, গরুর দুধ দোহন, নরহত্যাসহ নানা কাজে নিয়োগ পেয়েছে। শিল্পের বাইরে সবচেয়ে বেশি রোবট নিযুক্ত হয়েছে প্রতিরক্ষা খাতে। গেরস্থালিসহ দৈনন্দিন প্রয়োজনে নিয়োজিত রোবট মানুষের চিন্তার ধরন পাল্টে দেয়। ডেনমার্কের আরহস ইউনিভার্সিটির প্রফেসর জোহানা সিবট বলেন, সামাজিক রোবটগুলো মামুলি যন্ত্র নয়। মানুষ হিসেবে আমাদের প্রকৃতিও পাল্টে দেয় তারা।
প্রফেসর সিবট বলেন, কাছাকাছি থাকায় রোবটের প্রতি একসময় মায়া জন্মে। আবার মানুষ হিসেবে আমাদের জানা থাকে যে, রোবটকে শিখিয়ে পড়িয়ে অন্য মানুষের মতো ভালো বোঝানো সম্ভব নয়। এ চিন্তা মানুষকে যেকোনো মূল্যে, এমনকি অন্য মানুষের ক্ষতি করে হলেও প্রিয় রোবটকে বাঁচাতে উদ্বুদ্ধ করে।
জনপ্রিয় জাপানি রোবট পারোর অনেক অনুকৃতিকে বৃদ্ধনিবাসে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্সের প্রফেসর অ্যামান্ডা শারকি এ প্রসঙ্গে বলেন, এসব নিয়োগে স্বল্পমেয়াদে লাভ হলেও সেবার ছদ্মবেশ মানুষের যে সম্মানহানি ঘটাচ্ছে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। রোবট কখনো মানবিক স্পর্শের বিকল্প হতে পারে না। আমরা নিশ্চয় প্রবীণ স্বজনদের রোবটের হাতে ছেড়ে দিতে চাই না।
জীবনের অন্য প্রান্তে রোবটের সংস্পর্শ নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। রোবটের কাছে যত্ন পাওয়া শিশু পরবর্তী জীবনে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা, মৈত্রী গড়বে কীভাবে, সে কথা ভাবা হয়নি।
ফাউন্ডেশন ফর রেসপনসিবল রোবোটিকসের প্রতিষ্ঠাতারা বলেন, আমরা কোনোভাবেই রোবটের বিপক্ষে নই। রোবটের ব্যাপারে আমাদের অপরিসীম উচ্ছ্বাস। কথা হচ্ছে, রোবোটিকসের ইতিবাচক দিকগুলো কাজে লাগাতে হবে এবং নেতিবাচক ঝুঁকি পরিহার করতে হবে।
ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট আইমে ফন ভিন্সবার্গ বলেন, সাময়িক লাভ নয়, আগামী দিনে রোবটের ব্যবহার হওয়া চাই শুধু মানবতার কল্যাণে।
বণিক বার্তা |