সাংবাদিকতায় ‘ভুল’ স্বীকার করলেন মাহফুজ আনাম
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সূত্রবিহীন খবর যাচাই না করে প্রকাশের জন্য সাংবাদিকতার ‘ভুল স্বীকার’ করেছেন ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম। “এটা আমার সাংবাদিকতার জীবনে, সম্পাদক হিসেবে ভুল, এটা একটা বিরাট ভুল। সেটা আমি স্বীকার করে নিচ্ছি।” ইংরেজি দৈনিকটির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন এটিএন নিউজে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রশ্নের মুখে মাহফুজ আনামের এই স্বীকারোক্তি আসে। মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে মাহফুজ আনাম গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, দায়িত্বশীলতা নিয়ে কথা বলেছিলেন। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ডেইলি স্টারের বিতর্কিত ভূমিকার প্রসঙ্গ শুরুতেই সঞ্চালক তুললে তা অস্বীকার করেন মাহফুজ আনাম। অনুষ্ঠানের আলোচক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ‘হেড অফ কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ও এডিটোরিয়াল পলিসি কো-অর্ডিনেটর’ গাজী নাসিরউদ্দিন আহমেদও তখন ডেইলি স্টার নিয়ে নানা অভিযোগের বিষয়টি তোলেন। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনা হস্তক্ষেপে গঠিত ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ডেইলি স্টারের ‘সমর্থন’ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। তার আগে সিপিডির উদ্যোগে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সহযোগিতায় দেশজুড়ে নাগরিক সংলাপে ‘বিরাজনীতিকরণের’ প্রচার চালিয়ে অসাংবিধানিক সরকারের প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছিল বলে সমালোচকদের যুক্তি। আলোচনা সভায় বিষয়গুলো তোলা হলে মাহফুজ আনাম অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সুনির্দিষ্ট ঘটনার উল্লেখ করতে বলেন। তখন গাজী নাসিরউদ্দিন তখন শেখ হাসিনার ‘ঘুষ নেওয়ার’ প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন, যা বন্দি আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের স্বীকারোক্তিতে এসেছে বলে কোনো সূত্রের উদ্ধৃতি ছাড়াই প্রকাশ করা হয়েছিল। দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করতে ওই সময় ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তাদের চরিত্র হননের চেষ্টা চালানো হয়েছিল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে। প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে প্রথমেই মাহফুজ আনাম বলেন, তখন ‘সবাই’ এই কাজ করছিল। এরপর সূত্রবিহীন খবর যাচাই না করে প্রকাশকে ‘বিরাট ভুল’ হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, তখন এই খবর প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই তাদের সরবরাহ করেছিল। ডেইলি স্টারের ওই সময়কার ভূমিকা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার দৈনিকটির অবস্থান নিয়ে সমালোচনা করেন। নব্বইয়ের দশকে সাংবাদিক এস এম আলীর উদ্যোগে প্রকাশিত হয় ডেইলি স্টার। ব্যবসায়ী লতিফুর রহমান বিনিয়োগ করেন এতে। এস এম আলীর মৃত্যুর পর সংবাদপত্রটির পুরো নিয়ন্ত্রণ নেন লতিফুর রহমান। তখন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেন মাহফুজ আনাম। ‘টোয়েন্টি ফাইভ ইয়ার্স অফ জার্নালিজম উইদাউট ফিয়ার অ্যান্ড ফেভার’ স্লোগান নিয়ে রজত জয়ন্তি উদযাপন করছে ডেইলি স্টার। এই স্লোগান ধরে অনুষ্ঠানে গাজী নাসিরউদ্দিন ডেইলি স্টার সম্পাদককে প্রশ্ন করেন, “তাহলে কি আপনারা ফিয়ার (ভয়) থেকে তখন (জরুরি অবস্থার সময়) ওই ধরনের সংবাদ ছেপেছিলেন। আর ফেভার (আনুকূল্য) থেকে বিদেশি দাতা সংস্থা কিংবা এনজিওদের বিরুদ্ধে কোনো খবর ছাপেন না।” তবে মাহফুজ আনাম এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। এটিএন নিউজের আলোচনা অনুষ্ঠানে ছাপানো সংবাদপত্রটির সম্পাদক ভবিষ্যতে ইন্টারনেটভিত্তিক সংবাদপত্রের গুরুত্ব স্বীকার করে তার প্রতিষ্ঠানকেও সেভাবে সাজানোর কথা বলেন।