সেভেন সামিটস জয় করলেন ওয়াসফিয়া নাজরীন

প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে পৃথিবীর সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ সাত পর্বতশৃঙ্গ জয় করেছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। ‘সেভেন সামিটস’ অভিযান পূর্ণ করার পথে দুর্গম ‘মেসনার’ রুট হয়ে ওশেনিয়া অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কারস্তেনস পর্বতমালায় পৌঁছেন তিনি। ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া প্রদেশের কারস্তেনস পর্বতমালায় ৪ হাজার ৮৮৪ মিটার উঁচু এ শৃঙ্গ স্থানীয়ভাবে পুঞ্চাক জায়া নামেও পরিচিত।

‘সেভেন সামিটস’ জয়ের ঘোষণা দেয়ার পরের বছর ২০১২ সালের ২৬ মে দ্বিতীয় বাংলাদেশী নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন ওয়াসফিয়া। এর পর একে একে জয় করেন আফ্রিকার কিলিমানজারো, দক্ষিণ আমেরিকার আকোনকাগুয়া, অ্যান্টার্কটিকার ভিনসন ম্যাসিফ, ইউরোপের মাউন্ট এলব্রুস ও উত্তর আমেরিকার ডেনালি চূড়া। এবার কারস্তেনস পিরামিড জয়ের মধ্য দিয়ে ওয়াসফিয়ার সেভেন সামিটস পূর্ণ হলো।

বাংলাদেশ অন সেভেন সামিটস ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৮ নভেম্বর সকাল ১০টা ১৯ মিনিটে ওই শৃঙ্গে পৌঁছেন ওয়াসফিয়া। ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র করভি রাকসান্ড ফেসবুকের মাধ্যমে জানান, স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে শৃঙ্গে পৌঁছার খবর ওয়াসফিয়া তাদের জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ বছর উদযাপন এবং নারী স্বাধীনতাকে এগিয়ে নিতে ওয়াসফিয়া এ অভিযান শুরু করেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, গত এক মাসে পশ্চিম পাপুয়ার গভীর জঙ্গলে বিশেষত দানি ও মনি উপজাতিগোষ্ঠীর মানুষের সাহচর্য আমার জীবন পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।

এখনো ইন্টারনেট যোগাযোগ সহজসাধ্য নয় উল্লেখ করে তিনি জানান, চার বছর ধরে নিজ নিজ পন্থায় যারা আমাকে শক্তি ও সাহস জুগিয়েছে, তাদের আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই। একই সঙ্গে তিনি তার প্রশিক্ষক প্যাট্রিক মরো ও ইন্দোনেশিয়ার সকরারকে উৎসাহ, সাহস ও সুযোগ প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানান।

এ অভিযানের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বেজ ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে মিলিয়ে ২২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ অত্যন্ত দুর্গম ছিল। ম্যালেরিয়া উপদ্রুত পুরু কাদায় ঢাকা রেইন ফরেস্টটি ছিল ক্লান্তিকর। কখনো বুকসমান গভীর নদী পেরোতে হয়েছে। যাত্রাপথ ছিল ঝড়-ঝঞ্ঝা বিঘ্নিত আর পিচ্ছিল পাথরে পরিপূর্ণ।

মেডজ, পক্সি ও অভি— তিনজন ইন্দোনেশীয় বন্ধুর নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তোমাদের ছাড়া আমি কখনই এটি সম্পন্ন করতে পারতাম না।’ ইন্দোনেশীয় বন্ধু জশোয়া নয়াসহ তিনি তার সহঅভিযাত্রীদের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘তোমাদের সবার সহযোগিতা ছাড়া আমার পক্ষে কখনই এ অভিযান সমাপ্ত করা সম্ভব হতো না। ২০১৫-এর নভেম্বর আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

দুঃসাহসী অভিযানের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে নিজের অঙ্গীকার ও কর্মতৎপরতার জন্য ওয়াসফিয়াকে ২০১৪ সালের অন্যতম বর্ষসেরা অভিযাত্রীর খেতাব দিয়েছিল ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.